সকল মেনু

চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা

image_129818

নিজস্ব প্রতিবেদক-চট্টগ্রাম, হটনিউজ২৪বিডি.কম ২৭ জুন : টানা ৪ দিনের বর্ষণে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার কমপক্ষে ছয়টি উপজেলা দুই দিন ধরে থৈ থৈ পানিতে ভাসছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব উপজেলার কয়েকলাখ মানুষ। বিছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা। পানির নিচে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলী জমি। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, রাউজান, ফটিকছড়ি, সন্দ্বীপ এবং চন্দনাইশ উপজেলা ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে গত তিন দিন ধরে। বর্ষণ অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটছে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, কমপক্ষে রোববার পর্যন্ত চট্টগ্রামে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকবে। রোববারের পর বৃষ্টি থামতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শন এবং স্থানীয়ভাবে খবর নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা। সাতকানিয়া উপজেলার করানীহাট-বান্দরবান সড়কের বাজালিয়া এলাকায় পানির নিচে সড়ক তলিয়ে গেলে বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। উপজেলার ধর্মপুর, কালিয়াইশ, কেওচিয়া, নলুয়া, ঢেমশার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঢলু ও শঙ্খ নদীর ভাঙনে পশ্চিম ঢেমশা, চরতি ও আমিলাইশ ইউনিয়নে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরওয়ার কামাল জানান, ইউনিয়নের ইছামতি হিন্দুপাড়া, শমসের পাড়া, জনকল্যাণ পাড়ার আড়াই হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে ইছামতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শ্রেণি কক্ষ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় জনকল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা বর্ষণে গত তিন দিন ধরে পানির নিচে রয়েছে রাউজান উপজেলার বিভিন্ন নিম্মাঞ্চল। উপজেলার ডাবুয়া ও রাউজান খালের পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রাউজানের বিভিন্ন এলাকা নিম্নাঞ্চলে কোমর সমান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে কাঁচা ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এতে জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে।
ডাবুয়া ও রাউজান খালের পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় রাউজান সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার জলিল নগর বাস স্টেশন, ফকিরহাট বাজারের বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ফকিরহাট বাজারের দিন সাপ্তাহিক হাটে আসা ক্রেতাবিক্রেতাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
দোকানিরা জানিয়েছেন, অনেক মালামাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে। জলিলনগর এলাকার সাহেব বিবি সড়কের বাদল শীলের দুইটি পাকা দোকান পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে। এদিকে ঢেউয়াপাড়া গ্রামে কয়েকটি কাঁচাঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ডাবুয়া খালের ত্রিমুখী ভাঙনে চিকদাইর, জানালিহাট, কাজিপাড়া, সুলতানপুর, ঢেউয়াপাড়া এলাকা পানি নিচে রয়েছে। পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়ক ও ঘরবাড়িও পানির নিচে নিমজ্জিত বলে স্থানীয় অধিবাসিরা জানিয়েছেন। অপরদিকে পাহাড়ি ঢলে ইতিমধ্যে ডাবুয়া, রাউজান, বিনাজুরী ইউনিয়নসহ দক্ষিণের পূর্বগুজরা, পশ্চিম গুজরা, ও নোয়াপাড়া, নোয়াজিষপুর এলাকার কয়েটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নোয়াপাড়া সেকশন-১ ও নোয়াপাড়া সেকশন-২ দুইটি সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। জেলার চন্দনাইশ উপজেলার পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শঙ্খ তীরবর্তী ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। উপজেলার শষ্য ভাণ্ডার নামে খ্যাত দোহাজারী রেলওয়ে মাঠে সবজি বাজারে সবজি কমে এসেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে গেছে। শঙ্খ নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে শঙ্খ তীরবর্তী এলাকার মানুষ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন। হাজার হাজার একর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উপজেলার দোহাজারী এলাকার দিয়াকুল, চাগাচর, লালুটিয়া, চর বরমা, জাফরাবাদ, ধোপাছড়ি, চিড়িংঘাটা এলাকার মানুষ শঙ্খের ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে। শঙ্খ তীরবর্তী এলাকায় উৎপাদিত সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বন্যার পানিতে।
উপজেলার সন্দ্বীপ উপজেলা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়- উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে মাছের খামার ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন অনেকে বাড়িঘর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জোয়ারে পৌরসভা ছাড়াও ১৫ ইউনিয়নের রাস্ত-ঘাট ও ফসলাদি ক্ষতি হয়েছে। কুমিরা-গুপ্তছড়া-সন্দ্বীপ সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানির তোড়ে ভেসে গেছে সড়কের ম্যাগাডম ও বিটুমিন। ফলে এ সড়কের অনেক স্থানে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচল ও পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সড়কটির সেনের হাট থেকে বশিরিয়া গেইট পর্যন্ত নানা স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন মাছের খামারগুলো পানিতে ভেসে গেছে। উপকূলীয় বেড়িবাঁধের অনেক স্থানে মাটি সড়ে যাওয়ায় বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জেলার লোহাগাড়া উপজেলাতেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে ১৩টি খালের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৯টি ইউনিয়নের ১৩টি খাল পাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। উপজেলার আধুনগর, বড়হাতিয়া, আমিরাবাদ, চুনতি, পদুয়া, পুঁটিবিলা, কলাউজান, চরম্বা ও সদর ইউনিয়ন লোহাগাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বিভিন্ন সড়ক। উপজেলার আধুনগর, আমিরাবাদ ও পুটিবিলা এলাকার অনেক বসতভিটে পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। প্রবল বর্ষণে জেলার ফটিকছড়ি উপজেলায়ও বন্যা দেখা দিয়েছে। উপজেলার সুয়াবিল, কাজিরহাট, বৈদ্যর হাট, নারায়ন হাট, ধুরুং প্রভৃতি এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ি এবং ফসলী জমি। হালদা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বিভিন্নস্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফটিকছড়ি উপজেলার প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে বলে জানা গেছে।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top