সকল মেনু

শার্শার ৬৮ স্কুল ঘরের করুণ দশা ; খোলা মাঠে চলছে পাঠদান

unnamedযশোর থেকে আব্দুল ওয়াহাব মুকুল: যশোরের শার্শা উপজেলার ৬৮টি প্রাথমিক স্কুল ও মাদ্রাসার করুণ দশা বিদ্যমান। জরার্জীর্ন ভবনেই চলছে পাঠদান। সরকার শিক্ষা খাতে সর্বাধিক আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকলেও শার্শার অঁজপাড়া গাঁয়ের প্রাথমিক শিক্ষা আজো রয়েছে অবহেলিত। ভাঙ্গাাচুরা স্কুল, বাঁশ-চাঁচের বেড়া আর খোলা মাঠে বসেই শিক্ষা গ্রহন করতে হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীদের।  “বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র” – এই প্রবাদ বাক্যটিই আজ শার্শার অঁজ পাড়া গাঁয়ের প্রাইমারী স্কুলের কোমলমতি শিশুদের যেন সঙ্গি হয়েছে।

ঝড়ে উড়ে গেছে অনেক প্রতিষ্টান। নিজামপুর, বেনাপোল, পাকশিয়া ও সাড়াতলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা রোদ বৃষ্টিতে ভাঙ্গাচোরা ঘরেই করছে ক্লাশ। এসব শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বন্ধ হয়ে গেছে বাহাদুরপুর মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি স্কুল। নিজামপুর স্কুলের শিক্ষার্থী তানজিলা খাতুন বলেন-গ্রীষ্মকালে প্রখর রোদ্র আর বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে ভিজে তাদের ক্লাশ করতে হয়। ডিজিটাল যুগে উন্নত ভবনে ক্লাশ করতে চান তারা। একই কথা বলেন ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী খাদিজা খাতুন। তিনি বলেন স্কুলে ক্লাশ রুম সংকটের কারনে তাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।

এতে করে তাদের রেজাল্টও খারাপ হচ্ছে।  উপজেলার ছোটআচড়া, ঘিবা, রঘুনাথপুর, পান্তাপাড়া, টেংরা, গয়ড়া, গাতিপড়া, বালুন্ডা, নিজামপুর, বেনাপোল, পাকশি, সাড়াতলা, নাভারন বেড়ি নারানপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উলাশী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারনে খোলা আকাশের নীচেয় চলছে তাদের শিক্ষা দান। পরিত্যাক্ত বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ার আতংকে শিক্ষার্থীরা। এলাকার রাজনৈতিক নেতা ও শিক্ষানুরাগীরা চাঁদা তুলে বাঁশ আর টিনের চাল দিয়ে অনেক স্থানে ক্লাস করার ব্যাবস্থা করেছেন।

এ সব স্কুলের শিক্ষকরা জানালেন জরাজীর্ন ভবন আর স্কুলে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের খোলা আকাশের নীচে ক্লাস নিতে হচ্ছে।
উপজেলা  প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রব জানালেন, এ উপজেলায় ১২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। যার শিক্ষক রয়েছে ৬৭৪ জন। ৮৯ জন  শিক্ষকের শুন্যপদ থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। তাছাড়া ৬৮টি স্কুলের জরাজীর্ন ভবনকে পরিতাক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। তার পরও নতুন ভবন না হওয়ায় সে সব পরিত্যক্ত ভবনে চলছে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম। অনেক স্থানে ভবন ধ্বসে পড়ায় চাঁচের বেড়া আর টিনের চাল দিয়ে গড়ে তোলা টিনশেটে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হচ্ছে। তার পর বর্ষার কারনে এসব প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে পিএসসি পরীক্ষার্থীরা বেশী করে ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে ৪০টি  বিদ্যালয়ের জন্য নতুন ভবন ও ২৮টি  বিদ্যালয়ের ভবন আংশিক সংস্কারের কথা উল্লেখ করে শিক্ষা অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তার পরও কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
তিনি আরো জানান, এ উপজেলায় যে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে তার মধ্যে ৬৮টি বিদ্যালয় ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক। আমরা এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাছাড়া অধিক শিক্ষার্থী হওয়ায় স্কুলে ক্লাস রুমের বেশ সংকট রয়েছে। বেশ কিছু শিক্ষকেরও শুন্যতা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে ।
শার্শা উপজেলা নির্বাহি অফিসার এটিএম শরিফুল আলম এ বিষয়ে জানান,  বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার উপর বিশেষ নজর দিয়েছেন। শিক্ষা ব্যবস্থ্া আধুনিকরনের বিষয়ে বরাদ্ধ দিচ্ছে সরকার। শার্শা উপজেলায় বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমস্যা রয়েছে। সেগুলির তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরন করা হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
নিজামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ভবন সংকটের কারনে এলাকার বেশ কিছু স্কুলের শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে, কখনও গাছের নিচে  ক্লাস করছে। রোদ বৃষ্টি ঝড়ে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি নিজে কিছু আর্থিক অনুদান ও এলাকাবাসি,জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল গুলোর ভবন  নির্মানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
বাহাদুর পুর মাদ্রাসার শিক্ষক আলাউদ্দিন বলেন, দীর্ঘ ত্রিশ বছর শ্রম দিয়ে মাদ্রাসা টিকিয়ে রেখেছি। ৫ শতাধিক ছাত্রী ছিল প্রতিষ্ঠানে। এমপি ভুক্ত না হওযায় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেছে। একই সাথে মাদ্রাসার জরাজীর্ণ টিনশেড দেখে অনেক শিক্ষার্থী চলে গেছে। এখনও যারা আছে তাদের লেখাপড়াও মারাতœকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top