নিজস্ব প্রতিবেদক, জাতীয়নিউজ.কম ২৪ জুন : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো তালিকার ভিত্তিতে ৯৮ জন রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করেছিল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি। এছাড়া ৩২ জনের পূর্বপুরুষ রোহিঙ্গা বলে তদন্তে প্রমাণও মিলেছিল। তদন্ত কমিটির ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগকে গত ৫ মে ৯৮ জনের নাম ভোটার তালিকা থেকে কর্তন করতে বলেছিল ইসি। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ৩২ জনের পূর্বপুরুষের খোঁজ দিতে বলেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানাননি সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে ৯৮ রোহিঙ্গার নাম কর্তনসহ ৩২ জনের পূর্বপুরুষের খোঁজ দিতে তাগিদ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসি’র জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মাহফুজা আক্তার জানান, তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে এনআইডি অণুবিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছিল। তারা সে নির্দেশনার কোনো অগ্রগতি না জানানোয় গত রোববার ফের তাগিদ দেয়া হয়েছে।
২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে ২৬ পৃষ্ঠার একটি চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, কক্সবাজার জেলায় ৩শ’ ৮৯ রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এছাড়া বান্দরবান জেলায় ৪৯ রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন। এসব রোহিঙ্গাদের মদতদাতা হিসেবে এমপি বদিসহ ৫১ ব্যক্তির তালিকা জুড়ে দিয়ে ওই চিঠিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এরপর কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন পাঠাতে বলে ইসি। সে অনুযায়ী গত ০৭ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও ছবিসহ ভোটার তালিকার জেলা সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক মো. আলী হোসেন ইসিতে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান। প্রতিবেদনের বিষয়ে জানা যায়, এতে একশ’ ৮৪ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বাংলাদেশি হিসেবে। আর ৯৮ জনকে রোহিঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত করে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ৭৪ জন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হননি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ৩২ জনের পূর্বপুরুষ রোহিঙ্গা ছিলেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তবে একজনের বিষয়ে কোনো মতামত দেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো চিঠিতে কক্সবাজার সদরে ৪২ জন, টেকনাফে ৭২ জন, উখিয়ায় ছয় জন, মহেশখালীতে একশ’ ১৩ জন, চকরিয়ায় ৫৫ জন, কুতুবদিয়ায় দু’জন ও রামুতে ৯৯ জন রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ৪৯ জন বান্দরবানে ভোটার হতে চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করা হয়। এদিকে তদন্ত কমিটি রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠালে মদতদাতাদের বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য করেননি। অন্যদিকে ইসি সচিবালয় মদতদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করলেও তা এড়িয়ে গেছে নির্বাচন কমিশন। এ অবস্থায় মদতদাতারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে দেশে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের তথ্য রয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে। ২০০৮ সালের ভোটার তালিকা শুরু করার সময় রোহিঙ্গা সন্দেহে প্রায় ৫০ হাজার আবেদনপত্র বাতিল করে কমিশন। এরপর ২০১০ সালে হালনাগাদের সময় ১৭ হাজার আবেদনপত্র বাতিল করে।
জাতীয়নিউজ.কম/এআর