সকল মেনু

নতুন তেলেসমাতি নথিপত্র হাওয়া ওয়াসায় নিয়োগে

Dudok1434787789 নিজস্ব প্রতিবেদক,হটনিউজ২৪বিডি.কম: ঢাকা ওয়াসায় একই সময়ে একই ইউনিয়নের ৩৩৬ জনের চাকরি পাওয়া নিয়ে যে তেলেসমাতি কাণ্ড ঘটেছিল, এর সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে নতুন তেলেসমাতি। এত বড় একটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সকল নথিপত্রই নাকি এখন খুঁজে পাচ্ছে না রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে পাঠানো চিঠিতে এমনই তথ্য দিয়েছে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) তাকসিম এ খান। দুদকের একটি সূত্র বিষয়টি হটনিউজ২৪বিডি.কমকে নিশ্চিত করেছে।

ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, এ-সংক্রান্ত কোনো ফাইল তাদের কাছে নেই। অনেক আগেই তা দুদক নিয়ে গেছে। অথচ দুদকের কোনো শাখাই ওয়াসার কোনো ফাইল খুঁজে পায়নি। ইতিমধ্যে ওয়াসার এমডির কাছে পুনরায় চাকরির নিয়োগসংক্রান্ত নথিপত্র চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

এর আগেও ওয়াসার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে চরম অসহযোগিতার অভিযোগ পাওয়া যায় দুদকের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর ও পরবর্তী সময়ে আরো একবার ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বরাবর নিয়োগসংক্রান্ত নথিপত্র তলব করে চিঠি দেন। কিন্তু নানা টালবাহানায় কোনো কাগজপত্র সরবরাহ করেনি ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘ওয়াসায় নিয়োগের তেলেসমাতি কাণ্ড নিয়ে সে সময় মিডিয়ায় ব্যাপক তোলপাড় হয়েছিল। অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে ওয়াসার কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দুদককে অসহযোগিতা করে আসছেন। বেশ কয়েকবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও তারা নথিপত্র সরবরাহ করেননি।

তিনি আরো বলেন, ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এবার নতুন করে টালবাহানা শুরু করে বলছে, নথিপত্র তাদের কাছে নেই। তা নাকি দুদকে পাঠিয়েছে। কিন্তু দুদকের সংশ্লিষ্ট দফতরে ওয়াসার কোনো নথিপত্র পাওয়া যায়নি। বিষয়টি হতাশাজনক।

অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে বরিশালের মুলাদী উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নে সরেজমিনে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তার যাওয়ার কথা থাকলেও নথিপত্র না পাওয়ার কারণেই যেতে পারছেন না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের (১৯৯৬-২০০১) শেষ সময়ে বরিশাল জেলার ছোট্ট উপজেলা মুলাদীর গাছুয়া ইউনিয়নের ৩৩৬ বাসিন্দা ঢাকা ওয়াসায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে চাকরি পান। তাও আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই।

এমন অভিযোগে ভিত্তিতে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ রয়েছে, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদের ওই নিয়োগে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের (১৯৯৬-২০০১) শেষ সময়ে কোনো ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া প্রায় এক হাজার লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। যদিও পরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের নিয়োগ বৈধ করা হয়। যারা টাকা দিয়েছেন, তারাই চাকরি পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে যোগ্যতা বিচার করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

দুদকে প্রাপ্ত অভিযোগ সূ্ত্রে আরো জানা যায়, ২০০১ সালের শেষের দিকে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে ওই নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় অন্তত আট কোটি টাকার নিয়োগ-বাণিজ্য হয়। ওই সময় নিয়োগ পাওয়া এক হাজার কর্মচারীর মধ্যে ৩৩৬ জনই মুলাদী উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা।

অভিযোগের তির ওয়াসার তৎকালীন উপপ্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও উপসচিব (প্রশাসন) গোলাম মাওলার দিকে, যার বাড়ি মুলাদীর গাছুয়া ইউনিয়নের বাণীমর্দন গ্রামে। এ ছাড়া ওই সময় হাবিবুল গাফফার নামে আরেকজন উপসচিব ছিলেন ওয়াসায়, তার বাড়িও মুলাদীতে। ওই কর্মকর্তারা এবং ঢাকা ওয়াসা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (রেজি. ২৫২২) বড় নেতাদের যোগসাজশে ওই ধরনের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০০০ সালের শেষ দিকে প্রথম দফায় ৩০০ জনের নিয়োগ সম্পন্ন হয়। পরে ২০০১ সালের অক্টোবরে নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে আরো ৭০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের সবার নিয়োগের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০১। নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের পদবি ছিল উচ্চমান সহকারী, নিম্নমান সহকারী, পিয়ন ও সহকারী পাম্প অপারেটর।

গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও এ নিয়োগের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ আসে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা ফাইলচাপা পড়ে যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top