সকল মেনু

জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর অবর্ননীয় দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডি.কম ১৮ জুন : বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে নগরীতে ভোগান্তি ও হয়রানি স্থায়ী রূপ নিয়েছে। প্রতিবছর এ কারণে অবর্ননীয় দুর্ভোগ পোহাতে হলেও এর কোনো সমাধান না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নগরবাসী। রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও পর্যটন নগরী সিলেটে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি, এর কারণ ও প্রতিকার নিয়ে পৃথক তিনটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো:
দখল-অব্যবস্থাপনায় রাজধানীতে জলাবদ্ধতা
রোববার সকাল সাড়ে আটটা। রাজধানীর কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ডে ভেজা শার্টে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। মতিঝিলে তার অফিস শুরু সকাল ১০টায়। আধ ঘন্টা অপেক্ষা করে বাস না পেয়ে রিকশা খুঁজতে লাগলেন। অবশেষে কিছুপথ হেঁটে, কিছুপথ রিকশা ও সিএনজিতে চড়ে সকাল পৌনে ১১টায় যখন অফিসে পৌঁছলেন তখন বৃষ্টির পানিতে ভিজে জবজবে তিনি। পথে যানজটের পাশাপাশি সড়কের নানা স্থানে হাঁটুপানি পার হতে হয়েছে তাকে।
আগের দিন শনিবার ঢাকায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পর জলাবদ্ধতা ও যানজটের কারণে এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নগরবাসীর অনেককেই। আগের সপ্তাহের বৃহস্পতিবারের ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত সৃষ্ট জলাবদ্ধতায়ও নাকাল হতে হয় ঘরের বাইরে আসা সব বয়স-পেশার নাগরিকদের। বর্ষা মৌসুমে এই ভোগান্তি ও হয়রানি যেন স্থায়ী রূপ পেয়ে গেছে। প্রায় দেড় কোটি মানুষের বাস যে শহরে, সে শহরে প্রতিবছর জলাবদ্ধতার একই চিত্র উদ্বেগজনক বলেই মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও নগর পরিকল্পনাবিদরা ঢাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি এবং এটি নিরসন না হওয়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা ও এর আশপাশের নদী-খালগুলো বেদখল এবং আংশিক ভরাট হওয়া, নদীগুলোর ঢালে পর্যাপ্ত জায়গা না রাখা, পুকুর ও নর্দমাগুলো আবর্জনায় ভরাট কিংবা বিলুপ্তি, অপ্রতুল পানি নিষ্কাশন পাম্প, ড্রেনেজগুলোর বর্জ্য নিয়মিত অপসারণ না করা এবং বর্ষা মৌসুমে রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করা। এছাড়া জনসচেতনতার  অভাব এবং ঢাকার দুইটি ফ্লাইওভারের পাশে পানি নিষ্কাশনে অব্যবস্থাপনা জলাবদ্ধতা তৈরি করছে।
জলাবদ্ধতা প্রবন এলাকাগুলো হলো: সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দিনে ৫ থেকে ৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশনভুক্ত গুলশান, বনানী, কুড়িল, কুড়াতলী, শাহজাদপুর, নতুনবাজার, বাড্ডা, রামপুরা, মহাখালী, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, খিলক্ষেত, উত্তরা, জোয়াসাহারা, অলিপাড়া, কুড়িল প্রগতি সরণী রোড, খাপাড়া, কাজী বাড়ি, মানববন্ধন রোড, জমজ রোড, মোল্লাবাড়ি রোড, কুড়িল কুড়াইত আলী রোড, ভাসানটেক, পল্লবীর কালশী, রূপনগর, মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, পীরেরবাগ, কল্যাণপুর, কাফরুল, মোহাম্মদপুর ও মগবাজার এলাকার সড়কগুলোতে পানি জমে যায়। অলি-গলিতেও পানি জমে থাকার কারণে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়।  বন্দি হয়ে পড়েন এসব এলাকার বাসিন্দারা। জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগ তৈরি হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনভুক্ত লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, চকবাজার, চাদনিঘাট, যাত্রাবাড়ী, মিরহাজীর বাগ, পূর্বধোলাইরপাড়, জুরাইন, পোস্তগোলা, ফরিদাবাদ, ধলপুর, মানিকনগর, গোপীবাগ, মুগদা, বাসাবো, মাদারটেক, কলাবাগান, ধানমন্ডিসহ সংলগ্ন এলাকাগুলোতেও।
পানি নিষ্কাশনের সক্ষমতা নেই: ঢাকা শহরে পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব পালন করে ঢাকা ওয়াসা এবং দুই সিটি করপোরেশন। পাশাপাশি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় এ দায়িত্ব ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডও পালন করে। ঢাকা শহরে ওয়াসার প্রায় সাড়ে তিনশ’ কিলোমিটার ড্রেনেজ পাইপলাইন রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের রয়েছে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার ড্রেনেজ লাইন। এছাড়াও দুই করপোরশনের প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার ভূ-উপরিস্থ (সারফেস) ড্রেনেজ লাইন রয়েছে। বৃষ্টির পানি এসব ড্রেন লাইন হয়ে ওয়াসার ড্রেনেজ লাইন ও খালে গিয়ে পড়ে।
ঢাকা ওয়াসা ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানায়, ঘন্টায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা বর্তমান ড্রেনেজ-ব্যবস্থা ধারণ করতে পারে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে (জুন-সেপ্টেম্বর) প্রায় দিনই এর ৫ থেকে ১০ গুণ বেশী বৃষ্টিপাত হয়। তাই ১০ মিলিমিটারের চেয়ে বেশী বৃষ্টিপাত হলে বিদ্যমান ড্রেনেজ লাইনে পানি সরতে বেশী সময় নিবে। কিন্তু ড্রেনেজ লাইন ও এগুলোর সংযোগ লাইনগুলোর বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য জমে থাকায় পানি নিষ্কাশনে বাধা তৈরি হয়। ফলে গত বৃহস্পতিবারের ৬৪ মি.মি বৃষ্টিপাতের কারণে ওই দিন ছাড়াও পরদিনও জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।
আবার শনিবারের ৩৮ মি.মি, রোববারের ৫ মি.মি ও সোমবারের ৮ মি.মি বৃষ্টিপাতের কারণে তিন দিনই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।
ওয়াসার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত চার বছরে প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন কিছু পাইপ লাইন চওড়া করা হলেও নতুন লাইন বাড়াতে পারেনি। নগরীর মিরপুর ও উত্তরা অঞ্চলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটলেও মিরপুর এলাকার ৭০ ভাগ অংশেই ওয়াসার ড্রেনেজ লাইন নেই। উত্তরার বেশির ভাগ এলাকায়ও ওয়াসার ড্রেনেজ লাইন তৈরি করা হয়নি। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা কাঙ্খিতমানে উন্নত করার জন্য আরো অন্তত চার বছর সময় দরকার। এ সময়ের মধ্যে ড্রেনেজ লাইন সম্প্রসারণ ও প্রশস্তকরণের কাজ করতে হবে।
নদী-খাল দখল ও অব্যবস্থাপনা: বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার জলাবদ্ধতার বড় কারণ এর চারপাশের নদীগুলো বেদখল হয়ে যাওয়া। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা যতই উন্নত করা হোক না কেন, প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করা না গেলে টেকসই ফল পাওয়া যাবে না। এ জন্য বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ ও ধলেশ্বরী নদী এবং টঙ্গী খালের দখল রোধ করা জরুরি। প্রসঙ্গত, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দখল-দূষণের জন্য দায়ী এক হাজারের বেশী শিল্প-কারখানা-প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছে আইডিইবি’র স্টাডি ও রিসার্চ সেল।
ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, আশির দশকেও ঢাকায় অন্তত ৪৭টি খালের অস্তিত্ব ছিল। তবে বর্তমানে এর অন্তত ২১টিই এখন হারিয়ে গেছে। বাকি ২৬টি খালও ক্রমে দখল হয়ে যাচ্ছে। দখলের ফলে অনেক খাল সরু হয়ে গেছে।
শুধু নদী বা খাল দখল নয়, এগুলোকে ঘিরে উন্নয়ন কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনাও জলাবদ্ধতা সৃষ্টির জন্য দায়ী। এ প্রসঙ্গে প্রকৌশলী কাজী হাবিব বলেন, ঢাকার নদীগুলোর দুই ঢালেই ১৫০ ফুট জায়গা খালি রাখার কথা থাকলেও সেসব অংশ দখল করে স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। খালগুলোও ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত স্থান দরকার। খাল ভরাট ও নদী দখলের কারণেই জলাবদ্ধতা সমস্যা তীব্রতর হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি নদী, খাল, জলাশয়, জলাধারগুলোকেও সংরক্ষণ করতে হবে।
অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থা: এমনিতেই ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপ্রতুল। এর ওপর ড্রেনেজ লাইনগুলোতে ময়লা জমে থেকে জলাবদ্ধতা সংকটকে তীব্র করে তুলছে। দুই সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ড্রেনেজ লাইনগুলোতে ময়লা-বর্জ্য জমে থাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রায় সময়ই ভেঙ্গে পড়ে। ফলে জলজট ও জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ সচল রাখতে জনবল স্বল্পতা প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহীরাও। সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতাকেও তারা জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী করেন।
ঢাকায় জলাবদ্ধতার বিষয়ে ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস ডি এম কামরুল আলম চৌধুরী বলেন, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য প্রাকৃতিক আধারগুলোকেও ব্যবহার করতে হবে। এজন্য নদী-খাল দখলমুক্ত করা জরুরি। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাও প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ছড়া-খাল উপচে জলমগ্ন সিলেট
সিলেট প্রতিনিধি জানান, বৃষ্টি হলেই সিলেটের নগরবাসী এখন চমকে ওঠেন। দুশ্চিন্তায় ভারী হয় মন। ছড়া খাল ভরে যাওয়ায় কখন যে তাদের ঘরে বৃষ্টির পানি ঢুকে সব ভাসিয়ে দেবে তার ঠিক নেই। দোকানিরা শঙ্কায় থাকেন কখন আবার মালামাল ভিজে একাকার হয়ে যায়। গত কয়েকদিন নগরবাসী যেন জমে যাওয়া বৃষ্টির পানির সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। বৃষ্টিও থামছে না, জলাবদ্ধতারও নিরসন হচ্ছে না।
টানা কয়েকদিন বৃষ্টির পর হঠাৎ মাঝেমধ্যে সিলেটের আকাশে রোদের দেখা মেলে। পরক্ষণেই আকাশ অন্ধকার করে অঝোর ধারার বৃষ্টি নামে। আর বৃষ্টি হলেই নগরী যেন ভাসে বৃষ্টির পানিতে। স্থানে স্থানে যানবাহন আটকা পড়ে। দেখা দেয় ট্রাফিক জ্যাম। মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। বৃষ্টির পানিতে নালা-নর্দমা ভরে গেছে। সুরমাও যেন আর পানি টানতে পরছে না। সে কারণে কয়েক বছর বিরতি দিয়ে নগরীতে জলাবদ্ধতা যেন আবার স্থায়ী রূপ নিয়েছে। নগরীর প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র লালদীঘিরপাড়, কালিঘাটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ উপশহর, সোনারপাড়া, ভাতালিয়া, তালতলা, জামতলা, দাড়িয়াপাড়া, লামাবাজার, বিলপার, সুবিদবাজার, বনকলাপাড়া, আম্বরখানা, হাউজিং এস্টেট, মিরাবাজার, যতরপুর, রায়নগর, ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, জালালাবাদ, লোহারপাড়া, বাঘবাড়ি, কুয়ারপাড়, চারাদীঘিরপাড়, রায়নগর, রায়হোসেন, হাওয়াপাড়া, কলবাখানি, যতরপুর, তালতলা, কুয়ারপাড়, বিলপাড়, কাজলশাহসহ বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়িতে বৃষ্টির পানি ঢুকেছে।
নগরবাসী জানান, এখন আগের মত নালা-খাল পরিষ্কার হয় না। বৃষ্টির পানি দ্রুত বের হতে পারছে না। অতিবৃষ্টি ও জমে থাকা পানির কারণে নগরীর রাস্তা-ঘাটের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ছে। পানিতে ডুবে থাকা ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় প্রায়ই রিকশা-গাড়ি যাত্রীসহ উল্টে পড়ছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে তারা ছড়া-খাল উদ্ধার অভিযানে ১১ কোটি টাকা, গত বছর ছয় কোটি টাকা খরচ করেছেন। এবার এই খাতে দুই কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতা সমস্যা অনেকটা কমে যাবে। সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী জানান, এটি চলমান প্রক্রিয়া। সব সময় ড্রেন পরিষ্কার রাখতে হবে।
৬ কারণে পানিতে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান,
গত প্রায় আড়াই দশক ধরে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বৃষ্টি ও জোয়ারের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা জটিল রূপ ধারণ করেছে। এই সমস্যা এখন আর তড়িঘড়ি করে দূর করা সম্ভব নয়। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের সম্ভাব্য উপায় প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ, বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীরাও গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা জানান, মূলত ছয়টি কারণ চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যাকে গুরুতর করে তুলেছে। নগরীতে এই সমস্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে এর সহজ সমাধান।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এবং বিশিষ্ট স্থপতি জেরিন হোসেন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ বিরাট অঞ্চল সামপ্রতিক বছরগুলোতে জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়া এবং কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর অনেক এলাকা হাঁটু থেকে কোমর সমান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানতঃ ৬টি কারণ উল্লেখ করেছেন। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- টানা অন্ততঃ দুই দশক নগরীর অপরিকল্পিত উন্নয়ন, ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান ’৯৫ বাস্তবায়ন না করা, জলাশয়-খাল-নালা ভরাট, চট্টগ্রাম মহনগরী পাহাড় সংলগ্ন এলাকা হওয়া সত্ত্বেও বৃষ্টির পানি ধারণের জন্য লেক-জলাশয় সৃষ্টি না করা, খালের পাড়ে বাড়িঘর নির্মাণ করে খালের প্রশস্ততা সংকুচিত করে দেয়া এবং বহুতল ভবনের আশেপাশে বাড়তি পানি ধারণের জন্য ছোট ছোট গর্ত বা চৌবাচ্চার ব্যবস্থা না রাখা।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা নিবন্ধে রেজুয়ানুল ইসলাম ফাহিম উল্লেখ করেছেন, এমন এক সময় ছিলো যখন চট্টগ্রাম মহানগরীতে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি ধারণ করার জন্য কয়েকশ’ ছোটবড় খাল ও প্রাকৃতিক নালা বিদ্যমান ছিলো। কিন্তু বর্তমানে তার এক তৃতীয়াংশেরই কোনো অস্তিত্ব নেই। বিশেষজ্ঞরা সরেজমিন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে খালগুলোর বিলীন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর ফলশ্রুতিতে গত পাঁঁচ বছর ধরে চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণ হলেই নগরীর এক তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য ঐ গবেষণায় নগরীর নালা-নর্দমা এবং প্রাকৃতিক খালগুলো ভরাট ও জবরদখল এবং কৃত্রিম নালা-নর্দমার অপর্যাপ্ত পানি ধারণ ক্ষমতাকে দায়ী করা হয়েছে।
গবেষণা নিবন্ধে আরো বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের ১৩৫টি এলাকা বর্ষা মৌসুমে মাঝারি থেকে ভারীবর্ষণে পানির নিচে তলিয়ে যায়।  এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে-আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট, শোলকবহর, চকবাজার, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, রহমতগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, ডিসি রোড, চান্দগাঁও, মোহরা, ঘাটফরহাদবেগ ও বাকলিয়া। এসব এলাকার ঘরবাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। এসব এলাকার প্রায় ১২ লাখ মানুষ বৃষ্টিজনিত প্লাবনে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়।
নিবন্ধে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, ২০১১ সাল থেকে ১০১৪ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরীতে বর্ষণজনিত প্লাবনের ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্লাবন রোধে ১৫০ কোটি টাকা খরচ করে। কিন্তু দেখা গেছে বৃষ্টিজনিত প্লাবন ও জলাবদ্ধতাতো দূর হয়নি বরং আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত এবং সেসব এলাকায় জলাবদ্ধতাজনিত সংকট বাড়তে শুরু করেছে। এসময় নগরীর বড় বড় প্রাকৃতিক খালসমূহ খনন করেও সমস্যার সুরাহা করা যায়নি বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
এ প্রসঙ্গে স্থপতি জেরিন হোসেন বলেন, নগরীর খালের পাড়ে অবৈধ বাড়িঘর দোকানপাট নির্মাণ চলছে। জনগণ স্থাপনা নির্মাণে কোনো শর্ত মানছে না। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে উদাসীন। একদিকে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নগরীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভেসে যাচ্ছে, এই সমস্যার সমাধান না করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আকাশের উপর ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে। কথা ছিলো চট্টগ্রাম মহানগরীতে ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান ’৯৫ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে। তারা তা পাঁচ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। এখন জলাবদ্ধতাজনিত সমস্যা প্রকট আকার নিয়েছে। এই সমস্যা রাতারাতি দূর করাও যাবে না। এবিষয়টি নিয়ে কোনো গোলটেবিল বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ সভা ডাকার ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট সংস্থার কোনো গরজ এখনো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন সংক্রান্ত প্রকৌশল শাখা থেকে জানানো হয়, নবনির্বাচিত মেয়রের নির্দেশে খাল সংস্কার ও নালা-নর্দমার ময়লা অপসারণের কাজ জোর গতিতে চলছে। গত ২৯ মে থেকে চাক্তাই খাল পুনঃখননের কাজ অব্যাহত আছে।
হটনিউজ২৪বিডি.কম/এআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top