সকল মেনু

যারা যুদ্ধাপরাধের মামলায় পলাতক রয়েছেন

Trabunal1433756100অাছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম ধাপে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল  ১৭টি মামলায় ১৮ জনের  বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন রাজাকার যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ড মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

দ্বিতীয় দফায় যেসব তৃণমূল রাজাকার সংগঠকের বিচার ট্রাইব্যুনালে চলছে বা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে, তাদের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়ে আছেন।

আবুল কালাম আযাদ (বাচ্চু রাজাকার) : মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন জামায়াতের প্রাক্তন রুকন আবুল কালাম আযাদ (বাচ্চু রাজাকার)। মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় জামায়াতের প্রাক্তন এই রুকনকে। এটা ছিল ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়।,

আর রায় ঘোষণার কয়েক মাস আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বাচ্চু রাজাকার। ওই সময় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। প্রথমে, ভারতে আছে এমন তথ্যে দেশটির সঙ্গে যোগাযোগ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ভারত কর্তৃপক্ষ তার কোনো সন্ধান দিতে পারেনি।

আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিন : মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে  আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিনের অনুপস্থিতিতেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সম্পন্ন হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর তাদের মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আশরাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে এবং চৌধুরী মাঈনুদ্দিন যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তারা দুজনই মাইনরিটি কমিউনিটির নেতা। দুজনের বিরুদ্ধেই ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি রয়েছে।

এই দুজনকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাজ চলছে। তবে জনস্বার্থে এর চেয়ে বিস্তারিত কিছুই বলা যাবে না।

জাহিদ হোসেন খোকন : স্বঘোষিত রাজাকার, ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সহসভাপতি জাহিদ হোসেন খোকনও বিচার শুরুর আগেই দেশ থেকে পালিয়ে যান। পলাতক অবস্থায়ই তার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর জাহিদ হোসেন খোকনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বর্তমানে তিনি সুইডেনের স্টকহোমে বড় ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে রয়েছেন।

ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার :  জাতীয় পার্টির প্রাক্তন এমপি পিরোজপুরের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার আমৃত্যু কারাদণ্ড নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তাকে বয়স বিবেচনায় নিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।

এ ছাড়া  একটি অভিযোগে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারকে  ২০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। জানা গেছে, এই আসামি রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়।

তবে তদন্তকারী সংস্থার সদস্য হেলাল উদ্দিন দাবি করেন, আব্দুল জব্বার বাংলাদেশেই আছেন। ২০০৯ সালে তিনি আমেরিকায় গিয়েছিলেন। পরে চলে এসেছেন। এরপর থেকে তিনি কোথায় আছেন তা কেউ বলতে পারছেন না।

রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মো. হাসান আলী : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মো. হাসান আলী পলাতক থাকা অবস্থায় বিচার সম্পন্ন হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল হাসান আলীর মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। পলাতক সৈয়দ হাসান আলীর রায় আগামীকাল মঙ্গলবার ঘোষণা করবেন ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ঠিক করেন।

এর আগে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর হাসান আলীর অনুপস্থিতিতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ২৪ আগস্ট হাসান আলীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়ে তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ৩ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালতের আদেশ সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পলাতক হাসান আলীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুট, আটক ও নির্যাতনের ছয়টি অভিযোগ আনা হয়। এতে ২৪ জনকে হত্যা, ১২ জনকে অপহরণ ও আটক রাখা এবং ১২৫টি বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে।

কিশোরগঞ্জের চার রাজাকার : মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠার পর থেকে কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম এবং করিমগঞ্জের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ- এই চার আসামি পলাতক। তাদের  আত্মসমর্পণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১ জুন । এই চার রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, লুণ্ঠন, নির্যাতনের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

জামালপুরের ৬ রাজাকার : মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় জামালপুরের আটজনের মধ্যে ৬ আসামি পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন মো. আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মো. আব্দুল মান্নান, মো. আব্দুল বারি, হারুন এবং মো. আবুল কাসেম। এই ছয়জনের বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এই ছয়জন বাদে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন, জামালপুর শহরের নয়াপাড়া এলাকার অ্যাডভোকেট শামছুল হক (৭৫) ও সিংহজানি বালক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফুলবাড়িয়ার বাসিন্দা এস এম ইউসুফ আলী (৮২)।

আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধের সময়কাল ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান জানান, এই আসামিরা মুক্তিযুদ্ধের সময় জামালপুরে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে হত্যা, ৫০ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস করেছে।

যশোরের ১১ রাজাকার :  মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক যশোর-৬ আসনের প্রাক্তন সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনের সহযোগী ১১ রাজাকার পলাতক রয়েছেন।

এই আসামিরা হলেন : যশোরের মো. ইব্রাহিম হোসেন, মো. বিল্লাল হোসেন, শেখ মো. মজিবুর রহমান, মো. আব্দুল আজিম সরদার, মো. আজিম সরদার (২), কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম, মো. লুৎফর মোড়ল, মো. আব্দুল খালেক মোড়ল, মো. আকরাম হোসেন, ওজিয়ার মোড়ল এবং মশিয়ার রহমান। ইতিমধ্যেই এই ১১ জন রাজাকারকে গ্রেফতার করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

পলাতকদের ধরতে মনিটরিং সেল গঠন : যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যেসব আসামি বিভিন্ন দেশে নাগরিকত্ব বা রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছে তাদের শনাক্ত করে ফিরিয়ে আনার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এই পলাতকরা কোন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে অবস্থান করছে সেই তথ্যও জানার চেষ্টা চলছে।

সূত্র জানায়, সরকার বিদেশে পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে আনতে অনেক আগে থেকেই জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতেও নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পলাতক এসব আসামিদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। গত ২৪ মে  ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, গত ২১ মে ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিআইজি ছাড়াও একজন অ্যাডিশনাল ডিআইজি, র‌্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ ও তদন্ত সংস্থার একজন করে প্রতিনিধি রয়েছেন ওই কমিটিতে। প্রতি ৪০ দিন পর পর তারা পলাতক আসামিদের বিষয়ে প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন।

এর আগে গত ১৩ মে পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে একটি তদারকি সেল বা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top