সকল মেনু

কিডনি রোগ প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

kidney_63205নিউজ ডেস্ক : প্রতিবছর কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক মানুষ। এটি একটি জটিল শারীরিক সমস্যা, এদিকে এর চিকিৎসাও খুবই ব্যয়বহুল। তবে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে রাখলে এই রোগ অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। আজ  ৩১ মার্চ এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৯১তম পর্বে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ।
প্রশ্ন : গত ১২ মার্চ পালিত হলো বিশ্ব কিডনি দিবস। এই দিবসকে ঘিরে আপনাদের কর্মসূচি কী ছিল এবং প্রতিপাদ্য বিষয় কী ছিল?
উত্তর : বিশ্ব কিডনি দিবস ২০০৬ সাল থেকে পালন শুরু হয়। এবার ছিল নবম বছর। প্রতিবছরই একটা স্লোগান থাকে, একটা উদ্দেশ্য থাকে। এবারেরটি ছিল- সবার জন্য সুস্থ কিডনি। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব নেফ্রলজি এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন কিডনি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিশ্বে এখন প্রায় ১৫০টি দেশে একই সঙ্গে ১২ মার্চে উদযাপিত হয় এ দিবস। এর উদ্দেশ্য সবাইকে সচেতন করে তোলা।
এখন কিডনি রোগটি মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিডনি রোগটি একটি নীরব ঘাতক। অর্থাৎ কিডনির বিভিন্ন সমস্যায় দুটি কিডনির ৮০ শতাংশই নষ্ট হয়ে যাবে, হয়তো আপনি জানতেও পারবেন না। আর এমন অবস্থা হয়ে গেলে এর চিকিৎসা ওষুধের মাধ্যমে করা যায় না। তখন ডায়ালাইসিস লাগে, যেটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। একটি মানুষকে যদি ডায়ালাইসিস করা হয়, তিন থেকে চার লাখ টাকা তার প্রতি বছর খরচ হয়।

যদি কারো কিডনি রোগ থেকে থাকে, এর সাথে অন্যান্য রোগেরও আশঙ্কা দেখা দেয়। যেমন : হৃদরোগ এবং মস্তিস্কের রোগ। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, আমরা যদি কিডনি রোগ প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করতে পারি বা কী কী কারণে কিডনি রোগ হয় সেটি জানতে পারি- যদি সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়, তাহলে রোগ অনেকটাই নিরাময় করা সম্ভব। এই জন্য বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হয়- যেখানে চিকিৎসক, সেবিকা ও সাধারণ জনগণ মিলে র‍্যালি, টকশো, সেমিনার, পত্রিকায় প্রতিবেদন ইত্যাদি আমরা করে থাকি। পৃথিবীর সব জায়গায় এটা করা হয়। কেননা বলা হয় যে আপনি আপনার কিডনি সম্বন্ধে জানুন। প্রথমত, রক্তচাপ পরীক্ষা করে, দ্বিতীয়ত, প্রস্রাবে প্রোটিন যাচ্ছে কি না পরীক্ষা করে, তৃতীয়ত আপনার ডায়াবেটিস আছে কি না- এই তিনটি জিনিস দেখলে আমরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ রোগ সহজেই ধরতে পারি।

পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ১২ থেকে ১৮ ভাগ লোক উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। ৫ থেকে ৬ ভাগ লোক ডায়াবেটিসে ভুগছে। ৫ থেকে ৬ ভাগ লোকের প্রস্রাবে প্রোটিন যাচ্ছে।
হয়তো কারো নেফ্রাইটিস হয়েছে কিন্তু কিডনির কার্যক্ষমতা ভালো আছে- সেটাও এক ধরনের কিডনি রোগ। ডায়াবেটিস আছে, প্রস্রাবে প্রোটিন যাচ্ছে- এটাও কিডনি রোগ। তবে তার মানে এই নয় যে কিডনি ফেইলিউর বা কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। এই জায়গায় সবার ভয় কাজ করে। আমরা জানি, ৪০ হাজার লোক প্রতিবছর ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে কিডনি রোগে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই। আমি যদি নিজেরটা জানতে পারি তাহলে প্রতিরোধের চেষ্টা করব। পয়সা সাশ্রয় হবে। এজন্য জাতীয়ভাবে এই বিশ্ব কিডনি দিবস উদযাপিত হয়। সচেতনতা জনসাধারণের মধ্যে পৌঁছে দেওয়াই উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন : কিডনি রোগ প্রতিরোধের কী কী উপায় রয়েছে?
উত্তর :  খুব খারাপ অবস্থায় চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা প্রতিরোধ করতে পারি। যেমন, আমাদের যে গোল্ডেন রুল রয়েছে সেগুলো মেনে চললে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদি ডায়াবেটিস থাকে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেন। যদি নেফ্রাইটিস থাকে সেটা পরীক্ষা করা, দর্শকদের জন্য নেফ্রাইটিস বিষয়টি বুঝিয়ে বলি, এটি হলো, দেহের দুটো কিডনি ছাকনি হিসেবে কাজ করে, এই ছাকনি দিয়ে আমরা ফিল্টার করি, অর্থাৎ রক্তটাকে পরিশোধিত করি, তখন রক্ত শুদ্ধ হয়ে যায়, সেই ছাকনিতে একটা রোগ হয়, সেই রোগে প্রোটিন বের হয়ে যায়। মানে শরীর থেকে অ্যালবুমিন বের হয়ে যায় প্রস্রাবের মাধ্যমে, তখন রক্তে অ্যালবুমিন লেভেল কমে যায়। এ সময় শরীরের ভাস্কুলার অংশ থেকে পানি বেরিয়ে গিয়ে দুটো কোষের মাঝখানে চলে আসে, তখন শরীরে পানি আসে, এটি হলো নেফ্রাইটিস। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায়, যদি জন্মগত কিছু থাকে যেমন পলিসিস্টিক কিডনি। সিস্ট সম্বন্ধে একটু কথা বলা দরকার, আমি বলি সিস্ট একটি আঙ্গুর ফলের মতো। ভিতরে পানি, চারদিকে পর্দা। এটি দেহে একটি দুটি থাকতে পারে। এগুলো যদি বহুল আকারে থাকে, যদি দুটো কিডনিতে ১০ টার বেশি করে থাকে তাহলে পলিসিস্টিক কিডনি হয়, যা জন্মগত রোগ। সেটা থেকে উচ্চ রক্তচাপ, প্রস্রাবে সংক্রমণ এসব হয়ে শেষ পর্যন্ত কিডনি ফেইলিউর বা অকার্যকর হবে। তাই এসব বিষয় নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।
আমরা যারা ব্যথানাশক ওষুধ খাই সেগুলো ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। যাদের কিডনি ভালো আছে তাদের জন্য তেমন না হলেও যাদের কিডনি একটু দুর্বল তাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
কিডনি দুর্বল কীভাবে বুঝবেন? আপনার হয়তো ডায়াবেটিস আছে, উচ্চ রক্তচাপ আছে, বয়স বেশি ইত্যাদি। বয়স বেশি হলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়। তখন যদি আপনি ওই ওষুধগুলো খান, তখন খুব খারাপ প্রভাব ফেলবে। তারপরে আপনার শরীরে যদি পানির স্বল্পতা থাকে, শরীরে ইডিমা থাকে সেক্ষেত্রে এই ওষুধগুলো অত্যন্ত ক্ষতিকর। নারীর দেহের বিভিন্ন ক্যানসার যদি কিডনির ভেতর যায় তখন সমস্যা হতে পারে।

একিউট খোসপাঁচড়া, গলায় ব্যথা ইত্যাদি থেকে নেফ্রাইটিস হয়। আমরা যদি এর চিকিৎসা করি তাহলে তো এই সমস্যা হবে না। এ ছাড়া ডায়রিয়া হলে যদি প্রস্রাব কমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে কিডনি ভালো কাজ করছে না। কিডনি ভালো আছে কি না, এটি বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় প্রস্রাব কতটুকু হচ্ছে- এটা লক্ষ্য রাখা।
প্রস্রাবের রং দেখেও কিন্তু আমরা কিডনি ভালো আছে, কি না বুঝতে পারি। সাদা যদি থাকে তাহলে বুঝতে হবে ভালো কাজ করছে। পানি ঠিকমতো খাচ্ছেন- আর যদি হলুদ হয় তাহলে বুঝতে হবে পানি কম খাচ্ছেন।

যেকোনো কারণে যদি রক্তক্ষরণ হয়, বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে সেপটিক অ্যাবর্শন। অ্যাবর্শনের ক্ষেত্রে যদি রক্তের পরিবর্তে রক্ত না দেওয়া হয়, তখন কিন্তু তার রক্তচাপ কমে গিয়ে সমস্যা শুরু হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে যদি রক্ত দেওয়া হয়, তখন আর সমস্যা হবে না। আরেকটি বিষয় হলো, কোনো গুরুতর সংক্রমণ থেকেও কিন্তু কিডনির রোগ হতে পারে। সব সময় ওষুধ খেতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে। আপনার ওজন ঠিক রাখতে হবে। আদর্শগত যেই ওজন সেটাতে থাকতে হবে। কর্মঠ এবং সচল থাকলে দেখবেন কিডনি ভালো আছে। আবার শিশুরা যে স্কুল থেকে ফিরে খেলাধুলা করছে না আর ফাস্টফুডের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে- এগুলো খেয়াল রাখতে হবে। কেননা এভাবে চললে তারা বড় হয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সেইসাথে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।
এসব  বিষয় খেয়াল করে নিয়মিত পরীক্ষা- নিরীক্ষার মাধ্যমে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top