সকল মেনু

চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচন : আওয়ামী লীগ স্বক্রিয়, বিএনপি দ্বিধায়

চাঁদপুরশাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর প্রতিনিধি : আগামী ২৯ মার্চ চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাচন। এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর প্রার্থীরা এখন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ১০ মার্চ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১১ মার্চ চূড়ান্ত প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার আওয়ামী লীগকে একটু আলাদাভাবে দেখা যাচ্ছে। দলটি এই নির্বাচনকে যে খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছে তা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বোঝা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন এ নির্বাচনকে ঘিরে তৎপর। বিশেষ করে মেয়র প্রার্থী নিয়ে প্রতিদিনই দলটির কোনো না কোনো অঙ্গ সংগঠন মতবিনিময় করছে এবং বৈঠক করছে। অখচ আরেক বড় দল বিএনপিকে দেখা যাচ্ছে অনেকটা নীরব এবং রহস্যজনক ভূমিকায়। জেলা বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতার অভিমত হচ্ছে, বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না সে বিষয়ে তারা এখনো কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে নি। তাদের দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দাখিল করা পাঁচ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে নাশকতার মামলায় একজন কারাগারে, তিনজন মামলার হুলিয়ে মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বাকি একজন মাঠে থাকলেও তার তৎপরতা রহস্যময়। এর ভেতর আবার বিএনপি’র কিছু কিছু নেতা-কর্মী প্রকাশ্যে আ’লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীকে সরাসরি সমর্থন দিয়ে তার পক্ষ হয়ে প্রকাশ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রার্থীদের দল থেকে মনোনয়ন দেয়ার কোনো বিধান নেই। তবে দলের সরাসরি সমর্থন থাকে। দলের প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকায় এটি এক পর্যায়ে দলীয় নির্বাচনেই রূপ নেয়।
অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এবং মামলার জটিলতা নিরসন শেষে দীর্ঘ নয় বছর পর শতোর্ধ্ব বয়সী ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাচন অবশেষে হচ্ছে। এই নির্বাচনে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বা জোট অংশ নেবে এটাই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ অনেক আগেই তাদের একক প্রার্থী নির্বাচন করে রেখেছে। তিনি হচ্ছেন বর্তমান মেয়র নাছির উদ্দিন আহম্মেদ। যিনি দীর্ঘ সময় যাবৎ চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে তিনি দলকে সুসংগঠিত করেছেন। আর এ সভাপতির পদে থেকেই তিনি চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচন করে নির্বাচিত হন। দীর্ঘ নয় বছর তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ক্ষমতাকালীন তিনটি সরকার তিনি পেয়েছেন। প্রথমত তিনি বিএনপি-জামাত জোট তথা চারদলীয় জোটের শাসনামলে মেয়র নির্বাচিত হন। প্রায় দেড় বছর তিনি জোট সরকারের শাসনামলে পৌরসভার দায়িত্ব পালন করেন। চারদলীয় জোট সরকারের বিদায়ের পর ২০০৭ সালে আসে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। দেশে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। অনেকটা মার্শাল ল’র আদলে জরুরি অবস্থা দিয়ে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন আহমেদের সরকার টানা ২ বছর দেশ পরিচালনা করে। সে সময় সব রাজনৈতিক দলের জন্য ক্রান্তি কাল চলে। ওই সঙ্কট সময়ে মেয়র নাছির উদ্দিন আহম্মেদ বেশ দক্ষতার সাথে চাঁদপুর পৌরসভাকে পরিচালনা করেন। তখন অনেক রাজনৈতিক নেতা আটক এবং আত্মগোপনে গেলেও মেয়র নাছির উদ্দিন আহম্মেদ বেশ বিচক্ষণতার সাথে দল এবং পৌরসভাকে পরিচালনা করেন।  তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তখন থেকেই তাঁর উপর দল এবং জনগণের আস্থা অনেক বেড়ে যায়। সে জন্যে এখন পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে দলে কোনো বিতর্ক নেই। এমনকি পৌরবাসীও তাঁর উপর অনেকটা আস্থাশীল। এ জন্য পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ঠিক করতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। দলের সব পর্যায়ের সমর্থন রয়েছে তাঁর প্রতি।
অপরদিকে আরেক বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির অবস্থা এর সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। বিএনপি এখনো মেয়র পদে দলের প্রার্থী ঠিক করতে পারেনি। দলের পরিচয়ে পাঁচ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। যদিও এর আগে সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সফিকুর রহমান ভূঁইয়াকে দল থেকে একক মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর সফিকুর রহমান ভূঁইয়ার দলীয় সব পদ স্থগিত হওয়ায় তিনি এখন দলের কেউ নন বলে জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের দাবি। তাই সফিকুর রহমান ভূঁইয়া দলের প্রার্থী নন বলে দাবি জেলা বিএনপির। এ জন্য বিএনপির পরিচয়ে সফিকুর রহমান ভূঁইয়া ছাড়া ৪ জন মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ দিকে সম্প্রতি সফিকুর রহমান ভূঁইয়া নির্বাচন কমিশনে নির্বাচন সংক্রান্ত যে চিঠি দিয়েছেন তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন এবং কৌতুহল দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন সফিক ভূঁইয়ার এ চিঠি নির্বাচন না হওয়ার একটি ষড়যন্ত্র। আর তাঁকে নির্বাচনী প্রচারণায় এখনো পর্যন্ত তেমন একটা দেখা না যাওয়ায় ওই সন্দেহ আরো ঘনীভূত হচ্ছে। জেলা বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতার কাছে জানতে চাওয়া হয়- আপনাদের মেয়র প্রার্থী কে? তার সোজা জবাব, আমরা নির্বাচন করবো কি করবো না এখনো সে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আমরা নির্বাচন বর্জনও করতে পারি। সব কিছু পর্যবেক্ষণে এখন পর্যন্ত এটাই বলা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকলেও বিএনপি এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে।
এদিকে আগামী ২৯ মার্চ আসন্ন চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একক মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন চাঁদপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি নেতারা। গত ৬ মার্চ পুরাণবাজার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নির্বাচনী কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনি এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ ইউসুফ গাজী। এ সময় পুরাণবাজারের ৫টি ওয়ার্ডের দলীয় নেতৃবৃন্দ ও প্রচুর নারী ও পুরুষ ভোটার উপস্থিত ছিল। কর্মীসভায় মেয়র প্রার্থী নাছির উদ্দিন আহমেদের পক্ষে ভোট চেয়ে দলীয় নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন পৌর ৪নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল মতিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিন্টু ঢালী, ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আব্দুল বাতেন মিয়াজী, বাচ্চু মিয়াজী, মন্টু হাজী, শাহাদাত হোসেন মিয়াজীসহ ওয়ার্ড বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
ওয়ার্ড বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা যদি ভিন্ন রাজনৈতিক দল করি, কিন্তু নাছির উদ্দিন আহমেদ আমাদের ওয়ার্ডের কৃতি সন্তান। তিনি গত ৯টি বছর পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এটা আমাদের ওয়ার্ডবাসীর জন্য অত্যন্ত গৌরবের। আমরা চাই, এমন একজন সৎ লোক পুনরায় নির্বাচিত হোক। সে কারণে আমরা দল-মত নির্বিশেষে ওয়ার্ডবাসী তাঁকে বিজয়ী হিসেবে দেখতে চাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top