সকল মেনু

যেভাবে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড থেকে অস্কার এল

 বিনোদন ডেস্ক : ২২ ফেব্রুয়ারি আসছে অস্কারের ঘোষণা। ইতোমধ্যে সে আয়োজনের তোড়জোরও শুরু হয়ে গেছে। উপস্থাপনার দায়িত্ব বণ্টন হয়ে গেছে। থাকবেন গতবারের সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। থাকবে অস্কারের জন্য মনোনীত গানগুলোর পরিবেশনাও। আর সেগুলো গাওয়ার জন্য বিভিন্ন শিল্পীদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করাও শেষ। অস্কার প্রদান করে একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস এন্ড সায়েন্সেস। প্রথা মাফিক তারা পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নিয়ে ভুরিভোজের আয়োজনটিও সেরে ফেলেছেন। খাওয়া-দাওয়া শেষে হয়েছে ফটোসেশনও।এই অস্কার প্রথম প্রদান করা হয় ১৯২৯ সালে। অর্থাৎ ১৯২৮ সালের চলচ্চিত্রগুলোর ভিত্তিতে। তখন অবশ্য পুরস্কারের সঙ্গে অস্কার নামের কোনো যোগই ছিল না। এই কিছুদিন আগে পর্যন্তও পুরস্কারটির একমাত্র কাগুজে নাম ছিল একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস। তাহলে এই পুরস্কারের সঙ্গে অস্কার নামটি জড়াল কী করে?

এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি গল্প প্রচলিত আছে। সবচেয়ে পুরনো এবং অদ্ভুত গল্পটি ১৯৩১ সালের। সে বছরই প্রথম পুরস্কারের ট্রফিটি কাছ থেকে দেখেন একাডেমির নির্বাহী সম্পাদক মার্গারেট হেরিক। দেখে হেরিকের মনে হলো, ক্ষুদ্র মূর্তিটি দেখতে ঠিক যেন তার ‘অস্কার চাচা’র মতো। তার অস্কার চাচার নাম থেকেই একাডেমির অন্যরাও নাকি ট্রফিটিকে ‘অস্কার’ নামে ডাকতে শুরু করেন।

অস্কার নামটি প্রথম লিখিতভাবে পাওয়া যায় ১৯৩২ সালে। ওয়াল্ট ডিজনি তার একটি লেখায় তাকে অস্কার দেওয়ার জন্য একাডেমিকে ধন্যবাদ জানান। ১৯৩৪ সালে টাইম ম্যাগাজিনেও অস্কার নামটি ব্যবহৃত হয়।

অস্কার নামকরণের আরেক গল্পে জড়িত অভিনেত্রী বেটি ডেভিস। এই বেটি ডেভিসই প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ১০টি পৃথক অস্কারের জন্য মনোনীত হন। জয়ী হয়েছিলেন ২ বার। বেটির প্রথম স্বামী ছিলেন হার্মন অস্কার নেলসন। তার এক জীবনীকার দাবি করেছেন, বেটিই নাকি তার সেই স্বামীর নামানুসারে ট্রফিটির এই নাম প্রচলন করেন।

পরে ১৯৩৯ সালে একাডেমি আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রফিটির নামকরণ করে ‘অস্কার’।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য পুরস্কারটির ‘একাডেমি অ্যাওয়ার্ড’ নামটিই আড়ালে ঢাকা পরে যায়। পুরস্কারটি মানুষের কাছে ‘অস্কার’ নামেই পরিচিত হয়ে ওঠে। আর ২০১৩ সালে একাডেমিই স্বয়ং ‘দ্য অস্কারকে পুরস্কারটির আনুষ্ঠানিক নাম হিসেবে ঘোষণা করে।

একাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা দ্য অস্কার এখন দেওয়া হয় মোট ২৪টি ক্যাটাগরিতে। তবে শুরুতে এতগুলো ক্যাটাগরিতে অস্কার দেওয়া হত না। তখন মোট ক্যাটাগরি ছিল ১১টি-
বেস্ট পিকচার
বেস্ট ডিরেক্টর
বেস্ট অ্যাক্টর (ইন আ লিডিং রোল)
বেস্ট অ্যাক্ট্রেস (ইন আ লিডিং রোল)
বেস্ট সিনেমাটোগ্রাফি
বেস্ট আর্ট ডিরেকশন (এখন প্রডাকশন ডিজাইন)
বেস্ট অরিজিনাল স্টোরি
বেস্ট অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিনপ্লে
বেস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ইফেক্ট
বেস্ট টাইটেল রাইটিং
বেস্ট ইউনিক অ্যান্ড আর্টিস্টিক কোয়ালিটি অব প্রডাকশন।

শেষ ৩টি ক্যাটাগরিতে সেই একবারই অস্কার দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া সেবার বেস্ট ডিরেক্টর ক্যাটাগরিতে দুটি সাবডিভিশন ছিল- ড্রামা এবং কমেডি। সেই সাবডিভিশনও পরের বছর থেকে বাদ দেওয়া হয়। ১৯৩০-৬০ পর্যন্ত এমনি সাবডিভিশন ছিল আর্ট ডিরেকশন (প্রডাকশন ডিজাইন), সিনেমাটোগ্রাফি এবং কস্টিউম ডিজাইন ক্যাটাগরিতেও (সাদা-কালো এবং রঙিন)।

পরে আরও অনেকগুলো ক্যাটাগরি যুক্ত হয়েছে। এগুলো হল-
১৯৩০ সালে বেস্ট সাউন্ড মিক্সিং
১৯৩১ সালে বেস্ট অ্যানিমেটেড শর্ট ফিল্ম ক্যাটাগরি, বেস্ট লাইভ অ্যাকশন শর্ট ফিল্ম
১৯৩৪ সালে বেস্ট ফিল্ম এডিটিং, বেস্ট অরিজিনাল স্কোর, বেস্ট অরিজিনাল সং
১৯৩৬ সালে বেস্ট অ্যাক্টর ইন সাপোর্টিং রোল,বেস্ট অ্যাক্ট্রেস ইন সাপোর্টিং রোল
১৯৩৯ সালে বেস্ট ভিজুয়াল ইফেক্টস
১৯৪০ সালে বেস্ট অরিজিনাল স্ক্রিনপ্লে
১৯৪১ সালে বেস্ট ডকুমেন্টারি শর্ট সাবজেক্ট
১৯৪৩ সালে বেস্ট ডকুমেন্টারি ফিচার
১৯৪৭ সালে বেস্ট ফরেইন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম
১৯৪৮ সালে বেস্ট কস্টিউম ডিজাইন
১৯৬৩ সালে বেস্ট সাউন্ড এডিটিং
১৯৮১ সালে বেস্ট মেকআপ অ্যান্ড হেয়ারস্টাইলিং
২০০১ সালে বেস্ট অ্যানিমেটেড ফিচার।

পুরস্কারের নিয়মবইয়ে আরও একটি ক্যাটাগরি আছে- বেস্ট অরিজিনাল মিউজিক্যাল। ক্যাটাগরির তালিকা থেকে বাদ না পড়লেও, দীর্ঘদিন ধরে পুরস্কারটি দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাব। সর্বশেষ ১৯৮৪ সালে পার্পল রেইন সিনেমাটি এই ক্যাটাগরিতে অস্কার পেয়েছিল।

প্রথম আসরের ৩টি ক্যাটাগরির মতো পরেও বেশ কিছু ক্যাটাগরি যোগ হয়ে বাদও পড়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে-
বেস্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (১৯৩০-৩৭)
বেস্ট ড্যান্স ডিরেক্টর (১৯৩৫-৩৭)
বেস্ট অরিজিনাল মিউজিক (ড্রামা এবং কমেডি) (১৯৯৫-৯৯)
বেস্ট স্কোর (১৯৬২-৬৯, ১৯৭৩)
বেস্ট শর্ট ফিল্ম- নভেলটি (১৯৩২-৩৫)
বেস্ট শর্ট ফিল্ম- টু রিল (১৯৩৬-৫৬)
বেস্ট শর্ট ফিল্ম- কালার (১৯৩৬-৩৭)।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে একাডেমির বোর্ড অব গভর্নর্স-এর মিটিংয়েআরও বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরি যুক্ত করার প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্যাটাগরিগুলো বিবেচিত হয়নি। এমন ক্যাটাগরি এখনও পর্যন্ত ৩টি-
বেস্ট কাস্টিং (১৯৯৯ সালে প্রস্তাবিত এবং প্রত্যাখ্যাত)
বেস্ট স্টান্ট কো-অর্ডিনেশন (১৯৯১-২০১২ পর্যন্ত প্রতি বছর প্রস্তাবিত এবং প্রত্যাখ্যাত)
বেস্ট টাইটেল ডিজাইন (১৯৯৯ সালে প্রস্তাবিত এবং প্রত্যাখ্যাত)

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫/নাবীল/রাশেদ শাওন/মারুফ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top