সকল মেনু

আমি তোমার প্রেমকে ভালোবাসি

আমি তোমার প্রেমকে ভালোবাসিনা, না। আত্মহত্যা করাটা জরুরিই ছিল। কষ্টটা যে আমাকে তিলে তিলে হত্যা করছিলো! আমার দেহের প্রতিটা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ ধ্বংস হচ্ছিল। সে গতি এত ধীর ছিল! যেন কোন এক নিবিড় পরিকল্পনা ছিল এর পিছনে। পরিকল্পনটার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এর ধীর গতি। এতটুকু তাড়াহুড়া ছিল না কোথাও। তাড়াহুড়ো করলে হয়ত আমি কষ্ট কম পেতে পারি! এত নিষ্ঠুর পরিকল্পনা! না, আমি এই পরিকল্পনা কখনই বাস্তবায়িত হতে দিতে পারতাম না! কিছু একটা করতে হত আমাকে। সেই কিছুটা সম্পর্কে অনেক ভেবেছি আমি। ভাবতে পর্যন্ত ভয় হচ্ছিল। না জানি কি ভুল করে বসি! আমার এখন মনে হয়না কোন ভুল করেছি আত্মহত্যা করে। তুমি কি বল?
ভুল করেছি? এটা খুবই আপেক্ষিক একটা বিষয়। তোমার কাছে যা ভুল মনে হবে। আমার কাছে তা হয়ত একদম সঠিক।

আচ্ছা, আপাতত এই কথা তুলে রাখি। আমার কষ্টের ব্যাপারে বলি। আচ্ছা, তুমি আমার কষ্টের কথা জানতে না? জানতে না আমার এই অসহনীয় কষ্টের উৎস কি? জানতে। আমার মনে হয় তুমি সবই জানতে। সব জানার পরেও কেন তোমার ভূমিকা এত নিষ্ক্রিয় ছিল আমার জীবনে? তুমি কি কিছুই করতে পারতে না?

আচ্ছা যাও আর প্রশ্ন করব। বিরক্ত হইয়ো না। আসলেই এসব প্রশ্নের তো আর কোন মানে হয়না। কিন্তু সব কিছুরই কি মানে থাকতে হয়! থাক থাক। বাদ দেও এসব কথা। জান, তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন আমার তেমন কোন বিশেষ অনুভূতি হয় নি। নাহ! একদমই হয়নি। আমার হৃদকম্পন বাড়েনি। মনে হয়নি কিছু পরিবর্তন হয়েছে। সেটা একেবারেই স্বাভাবিক ছিল। হয়ত আপাতদৃষ্টিতে ছিল। আসলে স্বাভাবিক ছিল না। কিছু একটা অন্যরকম ছিল। তা না হলে এত তাড়াতাড়ি অবস্থার এত পরিবর্তন হয় কিভাবে ? সত্যি ! একদম সত্যি বলছি ! আমি একটু সামান্যও বুঝতে পারিনি কিভাবে এত পরিবর্তন ঘটল । কিভাবে তুমি আমার হৃদয়ে স্থান করে নিলে । ভুল বললাম স্থান করে নিলে না , আমার অস্তিত্ব হরণ করলে আর আমাকে বাধ্য করলে তোমার অস্তিত্তের উপর বেঁচে থাকতে । আমার তা করতে এতটুকু খারাপ লাগত না । কি যে ভাল লাগত তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না ! কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি হল আরেক জায়গায় । তোমার অস্তিত্তের উপর নির্ভর করে বাঁচতে আমাকে দিলে না । এখন বল মৃত্যু ছাড়া আমার আর পথ কই ? কি ? খুঁজে দিতে পারতে কোন পথ ? না , তুমি পারতে না। কেউই পারত না । কারণ আর কোন পথ যে ছিল না । তাই আমি এই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছি । অনেক ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আমার মস্তিষ্কে যে ঝড় বইছিল তার মধ্যে যে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি তাই বা কম কি! এ যে রীতিমতো গর্ব করার বিষয় ! নাহ! আমি গর্ব করছি না । গর্ব করার মতো অবস্থা যে আমার একদমই নেই । একটা কথা বলি? আমাকে আবার পাগল ভাববে নাতো ! আচ্ছা , বলেই ফেলি ।কষ্ট পেলে কেন জানি আমার খুব হাসি পায় । ওই হাসিটা যে কি কষ্ট দেয় । দেখ ! দেখ! এখন আমি কেমন মেয়েদের মতো খিলখিল করে হাসছি । এই হসির মধ্যে কিন্তু আনন্দও আছে । আমার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আনন্দ । এ এক ভয়ানক আনন্দ ! একেইসাথে আমাকে তীব্র কষ্ট দিচ্ছে । সমস্যা নেই । এই কষ্ট আমি সহ্য করতে পারব ।আমাকে সহ্য করতে হবে । এই কষ্ট সহ্য করলেই তো ওই আনন্দটা পেতে পারব । আমার অতি আকাঙ্ক্ষিত আনন্দ । আমি তো চাইনা এই নিকৃষ্ট কষ্ট গোগ্রাসে গিলে খাক আমার এই আনন্দকে । আমি এটা হতে দিতে পারিনা । কখনই হতে দিতে পারবনা । দেখত কেমন পাগলের মত হাসছি এখন । ওই যে ওখানে যে বিড়ালটা দাঁড়িয়ে আছে , ও কি আমাকে দেখছে ? হয়ত দেখছে । কি শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে ! ওর দৃষ্টিতে কিছু একটা আছে । দেখ আমি কিরকম ঘামছি । এই ! দেখনা । বিড়ালটা একদৃষ্টিতে আমার হাতের ছুরিটার দিকে । লাল রক্ত দেখছে । তোমার নিসাড় দেহটার দিকে একবারও তাকাচ্ছে না । আমি তোমার কাছে আমার অস্তিত্ব হারিয়েছিলাম । বাঁচতে চেয়েছিলাম তোমার অস্তিত্তের উপর । তা যখন পারলাম না , আমি সেই অস্তিত্ব বিনাশ করলাম । এটাকে আত্মহত্যা ছাড়া আর কি বলব ?
আমার এখন যে রক্তমাংসের শরীরটা আছে তা ঠিক আগের মতই। কিন্তু এ আগের আমি নই। আমার আগের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে । এ এক নতুন আমি । এটাকে কি আমি খুন বলব ! না ,না কখনই না । জরুরি ছিল আত্মহত্যাটা খুবই জরুরি ।

কিন্তু, কিন্তু আমার হাত পা কাঁপছে কেন এই লাল রক্ত দেখে ।
এই লাল রঙ তো তো ভালবাসার লাল রঙ । রোদ পরে কি সুন্দর চিকচিক করছে !

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top