সকল মেনু

আধুনিক রেল ব্যবস্থা,গ্যাস ও বিমানবন্দর হলে খুলনাঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়বে

খুলনাখুলনা প্রতিনিধি : গ্যাস, বিমানবন্দর ও আধুনিক রেল ব্যবস্থা না থাকায় মংলা বন্দরসহ খুলনাঞ্চলে বিনিয়োগে ব্যবসায়ীদের রয়েছে অনিহা। আর এ সমস্যাগুলোর সমাধান হলেই ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ বাড়বে এ অঞ্চলে। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় কিছুটা আশার সঞ্চার হচ্ছে। এতে করে খুলনায় বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র বিনিয়োগ ও মংলা বন্দরের আধুনিকায়নের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-মংলা সড়কের ফয়লা এলাকায় ৯৫ একর জমির উপরে ১৯৯৬ সালে খানজাহান আলী বিমানবন্দরের কাজ শুরু হয়েছিলো। এ অঞ্চলের উন্নয়নে অতিগুরুত্বপূর্ণ খানজাহান আলী বিমানবন্দরের চরে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগল এবং মাটি ভরাট কাজে ব্যবহৃত ট্রাক ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি অযতœ অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত দেড় যুগ ধরে মাটি ভরাট ছাড়া আর কিছুই হয়নি। এছাড়া দফায় দফায় প্রকল্পের ধরণ পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পটি ঝুলে আছে। ১৯৯৬ সালে ফয়লা এলাকায় খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ৯৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এরপর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ১৯৯৭ সালে শুরু হয় মাটি ভরাটের কাজ। প্রকল্পটিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৪ কোটি টাকা। তখন থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মাটি ভরাট ছাড়া আর কিছুই হয়নি। ২০০১ সালে খানজাহান আলী বিমানবন্দরটিকে ছোট আকারের পরিবর্তে মাঝারি আকারের বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। সে সময়ও মাটি ভরাট ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি। পরে ২০০৬ সাল থেকে এই ৮ বছরে আর কোনো কাজও হয়নি। গত বছর ২৬ নভেম্বর বে-সামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে কুয়েট একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে প্রথম ধাপে ছোট বিমান ওঠানামার জন্য স্টল এবং দ্বিতীয় ধাপে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। স্টল বিমানবন্দর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ২৫০ কোটি এবং পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণে ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু সে প্রস্তাবনা দু’টির আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এছাড়া চলতি অর্থবছরের বাজেটে খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্পটিতে কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। খুলনা রেলস্টেশন এ্যান্ড ইয়ার্ড রি-মডেলিং নামে ২০০৭ সালে খুলনায় আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ছিলো ২০১১-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত। আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণের এই প্রকল্পটি এখনো পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। তবে রূপসা নদীর উপর দিয়ে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করে ফুলতলা থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের একটি প্রকল্প চালু হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মংলা বন্দর, মংলা ইপিজেডসহ এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যে গতিশীলতা বাড়বে। উন্নয়নে গ্যাসের অনুপস্থিতি সব থেকে বড় বাধা বলে মনে করছেন বিশিষ্ট জনেরা। দেশের দ্বিতীয় সামুদ্রিক বন্দর মংলা, মংলা ইপিজেটসহ খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন শিল্প কল কারখানার গতি সঞ্চার করতে গ্যাসের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরী। আর এ সকল সমস্যা সমাধান হলেই অবহেলিত এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ বাড়বে বলে জানান ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। তবে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু হওয়ায় আশার আলো জাগতে শুরু করেছে অবহেলিত এ দক্ষিণ জনপদে। কয়েকজন বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে জানা গেছে, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় এ অঞ্চলে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে অনিহা। চীন থেকে ঢাকায় আসতে সময় লাগে ৪ ঘণ্টা, আর ঢাকা থেকে গাড়িতে খুলনায় আসতে লাগে ৮ ঘণ্টা। ঢাকা-খুলনা যাতায়াতের এই বিড়ম্বনায় তিনি এ অঞ্চলে বিনিয়োগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। বিমানবন্দর থাকলে এ অসুবিধা থাকতো না। তাছাড়া পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাসের সরবরাহ না থাকায়ও ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে অনিহার একটি অন্যতম কারণ। খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ’র সভাপতি কাজী আমিনুল হক মনে করেন, বিমানবন্দর ও পাইপ লাইনে গ্যাসের সুবিধা না থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। এ অঞ্চলের উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য বিমানবন্দর নির্মাণ ও গ্যাসের ব্যবস্থা খুবই জরুরী। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগীয় নগরী ছাড়াও অনেক বড় জেলায় আধুনিক রেলস্টেশন আছে। অথচ গত ৭ বছরেও খুলনায় আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ হয়নি, যা খুলনার উন্নয়ন বঞ্চনা ও বৈষম্যের বহিঃপ্রকাশ। খানজাহান আলী বিমানবন্দরের কাজ দ্রুত চালু করে কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া খুলনা ও মংলা বন্দরে পাইব লাইনে গ্যাস সরবরাহ করতে পারলে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ বাড়বে পাশাপাশি এ অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। রেল মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান এমপি জানান, আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে এ অঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন হয়। সরকার খুলনা ও মংলা বন্দরের আরো উন্নয়নের লক্ষে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। চলতি অর্থবছরের বাজেটে খুলনা রেলওয়ে স্টেশন ও ইয়ার্ড রিমডেলিং এবং বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনের অপারেশনাল সুবিধাদির উন্নয়ন প্রকল্পে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্পের কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এছাড়া ভারত বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে খুলনা থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ দ্রুত চালু হতে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই আন্তরিক রয়েছেন বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top