সকল মেনু

বীজের চাহিদা মেটাতে পারছে না বিএডিসি

হটনিউজ,ঢাকা :: ফসল উৎপাদনে কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী বীজ সরবরাহ করতে পারছে না রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। দেশের মোট চাহিদার ১২ থেকে ১৭ শতাংশ বীজ সরবরাহ করছে এ সংস্থা। বাকিটা বেসরকারি বীজ কোম্পানি সরবরাহ করে। কৃষকের সংগ্রহে থাকা বীজের ওপরও নির্ভর করতে হয়। অভিযোগ আসছে, বীজ সংকট পুঁজি করে সারাদেশ নিম্নমানের বীজে সয়লাব হয়ে গেছে। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী চটকদার মোড়ক ও বিজ্ঞাপনের আড়ালে ভেজাল ও নিম্নমানের বীজ বাজারজাত করছে। এসব বীজ বপন করে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাচ্ছেন না কৃষক। বীজের চাহিদা মেটাতে পারছে না বিএডিসি

কয়েক বছর ধরেই সিনজেনটার টমেটো ও ঝলক জাতের ধানের চাষ করে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চলতি বোরো মৌসুমের জন্য বীজতলা তৈরির ভর মৌসুম চলছে। আলু ও গম রোপণেরও প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বিএডিসির বীজ পাচ্ছেন না কৃষক। অনেক এলাকায় ধরনা দিয়েও বীজ মিলছে না। বিএডিসির বীজ কার্যক্রমের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে ফাঁসাতে সংস্থারই অন্য কর্মকর্তারা তৃণমূল পর্যায়ে বীজ সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন। বীজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ওই কর্মকর্তাকে বেকায়দায় ফেলতে এমনটি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বিএডিসির বীজ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে উফশী রোপা আমন বীজের বার্ষিক চাহিদা ৯০ হাজার ৩৭৫ টন। এর বিপরীতে গত অর্থবছরে ২০ হাজার টন সরবরাহ করা হয়। বেসরকারি পর্যায় থেকে বাকি বীজ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছেন কৃষক। একইভাবে দেশে বোরো বীজের চাহিদা এক লাখ ১৫ হাজার ৭৫০ টন। এর বিপরীতে চলতি মৌসুমে ৫৭ হাজার টন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বীজ বিতরণ শুরু করেছে বিএডিসি। আউশ ধানের বীজের চাহিদা ১৫ হাজার টন। এর বিপরীতে দুই হাজার ৫৬৯ টন সরবরাহ করা হয়। সারাদেশে আলুবীজের চাহিদা প্রায় সাত লাখ টন থাকলেও এর বিপরীতে ২২ হাজার টন বীজ সরবরাহ করে বিএডিসি।

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল হচ্ছে গম। দেশে গমবীজের চাহিদা ৬৩ হাজার ৭৫০ টন। সরকারি পর্যায়ে চলতি বছর ২২ হাজার টন উৎপাদন করা হয়। আরেক অর্থকরী ফসল পাটবীজের চাহিদা চার হাজার টন। এর বিপরীতে এক হাজার ৮৫০ টন উৎপাদন করা হচ্ছে। ডাল ও তেলবীজের চাহিদা ৪০ হাজার টন হলেও এর বিপরীতে তিন হাজার ২০০ টন ও সবজিবীজের দুই হাজার ৮২২ টনের বিপরীতে ১২০ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার।

কয়েক বছর ধরে পাটের দাম বাড়ায় কৃষক নতুন করে পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। গত বছর পাঁচ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। এবার তা আট লাখ হেক্টর পর্যন্ত যেতে পারে বলে আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ পরিমাণ জমিতে পাট চাষ করতে হলে কম করে হলেও ১০ হাজার টন পাটবীজের দরকার হবে। তবে বিএডিসি এক হাজার টনের বেশি বীজ কৃষক পর্যায়ে দিতে পারছে না। পাটবীজের প্রায় পুরোটাই ভারত থেকে আসে। দেশে বছরে তুলার চাহিদা হচ্ছে সাড়ে পাঁচ লাখ টন। আর উৎপাদন হয় মাত্র ১২ হাজার টন।

বীজ সংকটের কারণেই মূলত লাভজনক তুলা চাষ এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। ১৯৯০ সালের দিকে দেশে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হতো। আর গত বছর তুলা চাষ হয় প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে।

কৃষি মন্ত্রণালয় দেশের মোট বীজ চাহিদার ২২ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে বলে দাবি করলেও বেসরকারি বীজ কোম্পানিগুলোর এক গবেষণায় তা ১২ শতাংশ বলে জানানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন বিভিন্ন বীজের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সরকার সরবরাহ করে সব মিলিয়ে এক লাখ টনেরও কম। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বীজ উইংয়ের মহাপরিচালক আনোয়ার ফারুক বলেন, মোট চাহিদার ২২ শতাংশ বীজ সরকারিভাবে সরবরাহ করা হয়। আগামী ২০১৫ সালে তা ২৭ শতাংশে উন্নীত করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দেশে প্রতিবছর বিভিন্ন ফসলের প্রায় ১৫ লাখ টন বীজ প্রয়োজন। এর মধ্যে ৫ শতাংশ বীজ আমদানি করা হয় এবং বাকি ৯৫ শতাংশ স্থানীয়ভাবে কৃষকদের কাছ থেকে সরবরাহ করা হয়।

দেশের চিরাচরিত প্রথানুযায়ী কৃষকরা নিজ গৃহেই শস্যবীজ সংরক্ষণ করে রাখেন। নির্ভেজাল ও উন্নতমানের বীজের চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় বিএডিসির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। তবে কৃষকের চাহিদা মেটাতে পারছে না সরকার। এ ছাড়া বীজ উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা অর্জিত হয় না।

সরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত বীজ সরবরাহ করতে না পারার সুযোগ নিয়ে বাজারে ভেজাল ও নিম্নমানের বীজে ভরে গেছে। নিম্নমানের এসব সবজিবীজ কিনে কৃষক প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। ফলে এসব বীজ কিনে কৃষক প্রতারিত হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।

বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মাহবুব আনাম বলেন, ভেজাল বীজ বন্ধে সরকারের মনিটরিং বাড়ানো দরকার। কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ সমকালকে বলেন, ‘কৃষকের পক্ষে আমাদের কোনো নীতিমালা নেই। বীজ কিনে বা অন্য কোনো কারণে ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ পান না কৃষক।’

বিএডিসির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম সিকদার বলেন, আগের তুলনায় বিএডিসি বীজের সরবরাহ বাড়িয়েছে। বোরো বীজের চাহিদার অর্ধেকের বেশি দেওয়া হচ্ছে। বীজের সরবরাহ বাড়াতে আইডিবির অর্থায়নে ঢাকার গাবতলী, টাঙ্গাইলের মধুপুর, ঝিনাইদহের দত্তনগর কৃষি ফার্ম ও কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বীজ হিমাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। বীজ হিমাগার ছাড়াও আলু ও অন্যান্য ফসল মজুদে হিমাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top