সকল মেনু

রাজশাহীতে আ.লীগ এমপি’দের দাপটে অসহায় ত্যাগী নেতাকর্মী’রা

হটনিউজ ডেস্ক :: রাজশাহীতে এমপি লীগের নবাগতদের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। ওই অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা কমিটিগুলো কৌশলে দখলে নিচ্ছেন এমপিরা। তারা ক্ষমতা আর অর্থ ব্যবহার করে কমিটিগুলোতে বসাচ্ছেন অনুগত আর আস্থাভাজনদের; যারা দলে নতুন। কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি হলেও তাতে তৃণমূল আর ত্যাগী নেতাকর্মীদের প্রতিনিধিত্ব থাকছে না বললেই চলে। এদিকে এমপিরা কমিটিগুলো দখলে নিলেও সাংগঠনিক কার্যক্রমে তারা সক্রিয় নন। ফলে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে হতাশ মাঠের নেতাকর্মীরা।
রাজশাহী অঞ্চলের কয়েকটি উপজেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমপিদের দাপটে দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা থাকছেন উপেক্ষিত। তারা বঞ্চিত হচ্ছেন কাক্সিক্ষত পদ থেকে। তাদের আশংকা- যেভাবে দলে নবাগত ও বহিরাগতরা গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি দখল করছেন তাতে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা আগামীতে দলে কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগই পাবেন না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দল।
খেঁঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নওগাঁর কয়েকটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শের প্রতি উদাসীন বহিরাগতদের দাপটে রীতিমতো কোণঠাসা দলটির ত্যাগী নেতাকর্মীরা। তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের এ দুর্দশার চিত্র এ অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি জেলা-উপজেলায়।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানী। আগে করতেন জাকের পার্টি। আওয়ামী লীগে যোগদানের আগে করতেন গণফোরাম। কিন্তু ১ নভেম্বরের কাউন্সিলে তিনি শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদটি দখলে নেন। কমিটির সাবেক সভাপতি লতিফ খান কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ারই সুযোগ পাননি। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সদস্যপদ গ্রহণের দুই বছর পূরণ না হলে কেউ সাংগঠনিক পদ গ্রহণের যোগ্য হবেন না। কিন্তু এরই মধ্যে গোলাম রাব্বানী উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে চড়ে বসেছেন।
১৫ নভেম্বর রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ আসনের এমপি শাহরিয়ার আলম। শাহরিয়ার আলম নিজের পথ পরিষ্কার করতে কাউন্সিলের আগের দিন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আক্কাস আলীর ডান হাত উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তসিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করান। আক্কাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও বাঘায় দলীয় প্রভাব ধরে রাখতে তার বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি। কিন্তু আক্কাসের এখন দলে কোনো পদ নেই।
৫ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতি হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ। তিনি ২০০৮ সালের আগে বিএনপি করতেন। ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। অভিযোগ রয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে সাবেক বিএনপি নেতারাই জায়গা করে নিয়েছেন। ইউনিয়ন কমিটিগুলিতেও বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা প্রধান্য পেয়েছেন।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন। ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে তিনি আওয়ামী লীগে আসেন। ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের পরিবারের সদস্যরা কেউ বিএনপি করতেন, কেউবা জামায়াত। তারাও এখন আওয়ামী লীগ নেতা। উপজেলার সর্বত্রই তাদের প্রভাব। বাগমারার সাবেক কমিটির এক নেতা বলেন, নবাগত আর বহিরাগতদের দাপটে তারা বর্তমানে ঘরছাড়া।
রাজশাহী-৫ আসনের ক্ষমতাসীন দলের এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা বর্তমানে পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এমপি হয়েই দলের প্রবীণ আর ত্যাগী নেতাকর্মীদের দূরে সরিয়ে দেন তিনি। পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৫ আসনের এই দুই উপজেলা আওয়ামী লীগ বর্তমানে এমপি লীগ আর আওয়ামী লীগে বিভক্ত। এমপি দারার সমর্থকরাই উপজেলা ও পৌর কমিটিগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনের এমপি ইস্রাফিল আলমও তার আসনের দুই উপজেলা কমিটিতে বহিরাগত ও নবাগতদের ঠাঁই দিয়েছেন। আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফসার আলী অলিখিতভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বময় হর্তাকর্তা। স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, আফসার আগে বিএনপি করলেও এখন এমপি ইস্রাফিল আলমের ডান হাত। এমপির সব স্বার্থই তিনি এককভাবে কুক্ষিগত করেছেন। আফসার আত্রাইয়ের অলিখিত এমপি।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁসহ ওই অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা মিলে ৪৫টি সাংগঠনিক ইউনিটের কাউন্সিল শুরু হয় ১৮ অক্টোবর। ধারাবাহিকভাবে এসব ইউনিটের কাউন্সিল শেষ হবে ১০ ডিসেম্বর। সারা দেশের কমিটিগুলো পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে ১০টি টিমে ভাগ করা হয়। রাজশাহী বিভাগের জেলা ও উপজেলা গুলোকে টিম-২ এর আওতাভুক্ত করে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। টিম-২ এর নেতৃত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ মাহমুদ আল স্বপন। তিনি বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা কাউন্সিলে উপস্থিত থেকে নতুন কমিটি গঠন করছেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে এমপিদের মতামতের বাইরে তিনি কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না।
এদিকে আগামী ৬ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিলেও এমপিরা শীর্ষ পদগুলো দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে। দলীয় নেতাকর্মীরা জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে ত্যাগী ও অপেক্ষাকৃত সৎ নেতৃত্ব নির্বাচনে মানসিক প্রস্তুতি নিলেও অর্থের ছড়াছড়ি ও কাউন্সিলারদের প্রভাবিত করার কাজও চলছে পাশাপাশি।
আগামী ৯ ডিসেম্বর নওগাঁ, ১০ ডিসেম্বর বগুড়া, ৬ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ, ৩০ নভেম্বর নাটোর ও ৭ ডিসেম্বর চঁাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের দিন নির্ধারিত আছে। এসব জেলাতেও এমপিরাই জেলা কমিটির শীর্ষ পদগুলো দখলে সামগ্রিক তৎপরতা শুরু করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top