সকল মেনু

বাহরাইনে রফিকুলের মৃতদেহ হিমাগারে পড়ে আছে

 শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: টাকার অভাবে বিদেশ থেকে লাশ আনা যাচ্ছে না প্রবাসী রফিকুলের। সাড়ে ৪ বছর ধরে মৃতদেহ পড়ে আছে বাহরাইনের হিমাগারে। রফিকুল ইসলাম (৪০) নামের ওই প্রবাসী ২০১০ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি মানামা সিটির সালমানিয়া হাসপাতালে মারা যায়। কাগজপত্র (আকামা) সঠিক না থাকায় তার মৃতদেহ হাসপাতালের হিমাগারে রয়েছে। পরিবারের পক্ষে কয়েকজন বাহরাইন দূতাবাসে কয়েকবার যোগাযোগ করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মৃত রফিকুল ইসলাম হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭নং পশ্চিম বড়কূল ইউনিয়নের ব্রাহ্মণছোয়া গ্রামের হাজী বাড়ির মরহুম আবদুল মজিবের ছেলে। তার স্ত্রী’সহ তিন মেয়ে ও ২ ছেলে রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম ১৬ বছর ধরে প্রবাসে কাজ করছিলেন। প্রায় আট বছর আগে তিন মাসের ছুটিতে এসেছিলেন। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে ছেলে-মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য ৫ হাজার টাকা পাঠায়। সে ২০১০ সালেল ১৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে সহকর্মী পলাশ, ফারুক ও বাদল রাতেই তাকে সালমানিয়া হাসপাতালে ভর্তি করায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রফিকুল ইসলাম বুধবার দিবাগত রাত ৪টায় মারা যায়। মৃত রফিকুল ইসলামসহ সহকর্মীদের কাগজপত্র না থাকায় বিপাকে পড়েন সবাই। পরে হাসপাতালে রফিকুল ইসলামের মৃতদেহ রেখে আটকের ভয়ে সহকর্মীরাও পিছু হটে। মৃত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী লিলুফা বেগম কিছুদিন আগে পা ভেঙ্গে এখন ভীষণ অসুস্থ্য। এক যুগ আগে স্বামীকে দেখেছিলেন। আর চার বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার সংবাদটি শুনেছেন। কিন্তু স্বামীর মৃতদেহটি এখনো দেখতে পারেনি। দেখার ভাগ্য আছে কিনা তাও জানা নেই। তবে যদি খবর পান যে, বাহরাইন থেকে কেউ এসেছ। তাহলে ছুটে যান ওই প্রবাসীর কাছে। খোঁজ নেন স্বামীর মৃতদেহের। কান্না জড়িত কণ্ঠে লিলুফা বেগম বলেন, ‘আমার ভাই আলম। সেও ওই দেশে থাকতো। তার দুলাভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে চাঁদা উঠিয়েছিলো। চাঁদার টাকা বাংলাদেশী অ্যম্বাসিতে ঘুষ হিসেবে দেয়ার কথা ছিল। ৯শ’ নাকি ১১শ’ দিনার ঘুষ চাইছিল অ্যাম্বেসির লোকজন। এই ঘুষের টাকা না দিতে পারায়, স্বামীর মৃতদেহ দেখতে পাইনি’। লিলুফা বেগম বলেন, আমাগো টাকা নাই, বড় লোকজন নাই। আবার নাকি কাগজপত্র ঠিক নাই। কেডায় আমাগো মনে একটু সান্তনা দিবো ? ছোট ছেলে শাহাদাত বলেন, বাবাকে ছোট বেলায় দেখেছি। চেহারাটা মনে পড়ছে না। বাবার মৃতদেহ হিমাগারে পড়ে রয়েছে। আমাদের সাধ্য নাই বলেই বাবার মৃতদেহটা দেখতে পারছিনা। প্রতিবেশী মুসা সাত্তার পলাশ। সে ওই রফিকুল ইসলামের সাথে বাহারাইন ছিল। যখন অসুস্থ্য হয়ে পড়ে, তখন হাসপাতালে সেও গিয়েছিলেন। তবে মারা যাবার পর কাগজপত্র গরমিল থাকায় সেখানে মৃতদেহ রেখে চলে আসতে হয়। তারও আকামা ছিলো না। পরে ১৫ দিন জেলখেটে দেশে ফিরে আসে। বাহরাইন ফেরত এই প্রবাসী অভিযোগ করে বলেন, সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাস কাজ করে না। তারা একটু আন্তরিক হলে এতো বছর লাশটি পড়ে থাকতো না। চার বছর পার হয়ে গেল। ১২ বছর পর রফিক ভাইয়ের মৃতদেহটি দাফন করে ফেলবে। এখনো সুযোগ আছে সরকার যদি পদক্ষেপ নেয়। তা’হলে রফিক ভাইয়ের পরিবারবর্গ কিছুটা সান্তনা পাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top