সকল মেনু

নাসরিনের দুই চোখ জলে ভরে গেল

  মেহেরপুর প্রতিনিধি : ছোট ভাই নয়নকে হারিয়ে খুব বিমর্ষ ছিলো স্কুলছাত্রী নাসরিন। পেয়েছে নতুন ভাই জীবনকে। ১০ মাস পরে নাসরিনের মুখে কখনও কখনও হাসির চিহ্ন মেলে।

এক বছর আগে ভৈরব নদে ডুবে মারা যায় শিশু নয়ন। তার মৃত্যুতে মেহেরপুরে শোকের ছায়া নেমে আসে। নয়নের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শুক্রবার। বাদ আছর পরিবারের পক্ষ থেকে ঘরোয়াভাবে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

গত বছর ৭ নভেম্বর নাসরিন জেএসসি ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিয়ে বেলা দেড়টার দিকে বাড়ি ফিরে দেখতে পায় তার একমাত্র ছোট ভাই নয়ন (৯) বাড়িতে নেই। হাজারো নারী-পুরুষ পাশেই ভৈরব নদের ধারে নয়নকে খুঁজছে। নাসরিন জানতে পারে দুপুর ১২টার দিকে মাছ কিনতে ভৈরব নদের পাড়ে গিয়ে নিখোঁজ হয় সে। প্রতিবেশীরা ওই দিন রাত ১০টা পর্যন্ত ভৈরব নদে জাল ফেলেও তাকে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়। পরে ডুবুরী আনার সিদ্ধান্ত হয়। পরদিন ৮ নভেম্বর খুলনা থেকে ডুবুরী মেহেরপুর পৌঁছে। কিন্তু তাদের আর ভৈরব নদে নামতে হয়নি। তার আগেই বেলা ১১ টার দিকে নয়নের লাশ ভেসে উঠে।

মেহেরপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খান আলী আকবর লাশ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। হরতালের কারণে ওই দিন শুক্রবার বেলা ২টায় ছিলো জেএসসি বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা। ভাইয়ের লাশ বাড়িতে রেখে নাসরিনকে যেতে হয় মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিতে।

পরীক্ষা কেন্দ্রে নাসরিন সহপাঠিদের পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। নাসরিনের কান্না দেখে সহপাঠিরা কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।

জেএসসি পরীক্ষার হল থেকে বিকেল ৫টায় বের হয়ে শেষ বারের মতো নয়নকে দেখতে মেহেরপুর পৌর কবরস্থানে যায় নাসরিন। সেখানে নয়নের লাশ দাফনের শেষ মুহূর্তের কাজ চলছিলো। নয়নের আলোচিত ওই মৃত্যুর খবর গতবছর রাইজিংবিডিতে ছাপা হয়।

নাসরিন গত বছর জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এ বছর সে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। ১০ মাস পরে নাসরিনদের পরিবারে একটু হলেও যেন স্বস্তি এসেছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর নাসরিনের মায়ের কোল জুড়ে এসেছে এক ছেলে শিশু। নাসরিন আদর করে তার নাম দিয়েছে জীবন। এই ভাইটিকে পেয়ে নাসরিনের মুখের কোনে খানিকটা হলেও হাসির দেখা মেলে।

বৃহস্পতিবার নাসরিনদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা মহিবুল ইসলাম ও মা সুরাতন নেছা তাদের নয়নের মৃত্যুবার্ষিকী পালনে তোড়জোড় করছিলেন। তারা বললেন, নয়নের মুখ সব সময় আমাদের চোখে ভাসে।

নাসরিন ছোট ভাই জীবনকে কোলে নিয়ে আদর করছিলো। তাকে জিজ্ঞাসা করতে সে বললো, ‘জীবনকে পেয়ে আমার অনেকটা ভাল লাগছে। একাকিত্ব দূর হয়েছে। তারপরও নয় বছরের খেলার সাথী নয়নকে ভুলতে পারি না।’ বলতে বলতে তার চোখ জলে ভরে গেল।

উল্লেখ্য, মেহেরপুর শহরের ঘাটপাড়ার মহিবুল ইসলামের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে নয়ন ছিলো ছোট। সে স্থানীয় বিএম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। নাসরিন মেহেরপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রী। চাচাত ভাইকে মাছ কিনতে দেখে নয়ন বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাড়ির কাছেই ভৈরব নদের পাড়ে যায়। এরপর সে আর ফিরে আসেনি। ওই দিন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর শহরের ঘাটপাড়া নূরানী মাদ্রাসার কাছে নদেও পানিতে ভেসে ওঠে তার লাশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top