সকল মেনু

দুই বিয়ের খেসারত; ভোলার আদালতে বিচার কার্যক্রম বন্ধ

 এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ফৌজদারী আদালতের সিনিয়র জুুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করার খেসারত দিতে গিয়ে এখন জেল হাজত বাস করছেন। ঐ ম্যাজিষ্ট্রেটের অনউপস্থিতির কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিচার প্রার্থীরা আদালতে এসে ম্যাজিষ্ট্রেট না পেয়ে ফেরৎ যাচ্ছেন। এ ঘটনায় ভোলায় তোলপাড় চলছে। এছাড়া নিজের আদালতের আসামীকে ম্যাজিষ্ট্রেটের বিয়ে করার বিষয়টি গোটা বিচার ব্যবস্থার জন্য অমর্যাদাকর উল্লেখ করে ভোলার আইনিজীবিরা বর্তমান বিচারিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন। সূত্রে জানা যায়, জেলা শহর থেকে চরফ্যাশন উপজেলার দুরত্ব ৭০ কিলোমিটার হওয়ায় সরকার ২০১০ সালে চরফ্যাশনে পৃথক আদালত প্রতিষ্ঠা করে। এতে করে সেখানকার মানুষ অনেকটা স্বাচ্ছন্দে বিচারিক সুবিধা লাভ করে আসছে। কিন্তু সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুর রব মিয়া তার আদালতের এক আসামীকে বিয়ে করার পাশা-পাশি প্রথম স্ত্রীর দায়ের করার মামলায় জেল হাজতে গেলে; সেখানকার ফৌজদারী আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ওই আদালতের নতুন ম্যাজিষ্ট্রেট না থাকায় বিচার প্রার্থীরা আদালত থেকে ফেরৎ যাচ্ছেন। একইসঙ্গে ম্যাজিষ্ট্রেটের অনৈতিক কর্মকান্ডে হতবাক সেখানকার সাধারণ মানুষ। তার সহযোগীতায় ম্যাজিষ্ট্রেটের দ্বিতীয় স্ত্রী সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে হয়রানী করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চরফ্যাশনের একাধিক লোক অভিযোগ করেছেন, মিথ্যা মামলা দিয়া জনৈক মহিলা আমাদের নানাভাবে ক্ষতি করেছে, হয়রানী করেছে। শুধু আমাদের নয়, আরো অনেকেরই ক্ষতি করেছে। এসব করেছে ম্যাজিষ্ট্রেটের সাথে ঘর করে। ম্যাজিষ্ট্রেট তাকে একপর্যায়ে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে। বিচার প্রার্থী এক ব্যক্তি বলেন, আগে শুনেছি ম্যাজিষ্ট্রেটরা উৎকোচের বিনিময়ে আসামীদের সুুবিধা দিত। এবার দেখলাম বিয়ে করার বিনিময়ে আসামীদের সুুবিধা দিচ্ছে। বিচার প্রার্থী অপরজন বলেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর ঘটনায় আজ আমরা ক্ষতিগ্রস্ত, আদালত বসছে না, বিচার প্রার্থীরা ফেরৎ যাচ্ছে। সূত্রে আরো জানা যায়, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৭ম ব্যাচের কর্মকর্তা ও বর্তমান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুর রব মিয়া’র স্ত্রী কলেজ পড়–য়া সন্তানসহ ৩ কন্যার মা সানজিদা খালেক পলাশ ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ভোলার আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। তিনি অভিযুক্ত স্বামীর উপযুক্ত শাস্তির দাবী জানান। তিনি বলেন, অপরাধী সে যেই হোক, আমার স্বামী হোক কিংবা বিচারক হোক, আমি চাই তার বিচার।
এই মামলায় পুলিশ ২০ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করলে চরফ্যাশন ফৌজদারী আদালতে এ সংকট সৃষ্টি হয়। এতে করে হতাশ হয়ে পড়েন চরফ্যাশনের সাধারণ মানুষসহ জনপ্রতিনিধিরাও। এ ব্যাপারে চরফ্যাশন উপজেলা চেয়ারম্যা জয়নাল আবেদীন আকন বলেন, আমাদের মন্ত্রী বহু কষ্ট করে চরফ্যাশনে আদালত এনেছেন। ম্যাজিষ্ট্রেট নাবালিকা বিয়ে করে আদালতের কার্যক্রমে এঅবস্থার সৃষ্টি করেছেন। এখন হয়ত বা অন্য উপজেলার কোন ম্যাজিষ্ট্রেট এ আদালতের দায়িত্ব পালন করবেন। তাতে করে আমাদেরকে অনেক কষ্ট করে আবার ভোলায় গিয়ে বিচার প্রার্থনা করতে হবে। জেলা আইনজীবি সমিতি সূত্রে জানা গেছে, খুব শীঘ্রই চরফ্যাশনে সিনিয়র জুুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট পৌছবেন। তবে তিনি কবে নাগাদ পৌছবেন কিংবা চরফ্যাশনে গিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন নাকি বিচার প্রার্থীদের ভোলায় আসতে হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানা না যাওয়ায় চরম সংকটে পড়েছে সেখানকার বিচার ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে চরফ্যাশন কোর্টের অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট আমিনুল ইসলাম সরমান বলেন, ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব তার কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজে অপমানিত হয়েছেন। বিচার বিভাগের মর্যাদাহানী করেছেন। চরফ্যাশনবাসীকে ভোগান্তিতে ফেলেছেন। আমরা দ্রুত এঅবস্থার উত্তরণ চাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top