সকল মেনু

মেঘনার ভাঙ্গনে ভোলার দৌলতখানের ৭ কিলোমিটার এলাকা নদী গর্ভে

 এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: বর্ষা মৌসূমের শুরুতেই ভোলায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১০ দিনে মেঘনার ভাঙ্গনে প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। চোখের পলকে ১টি মাদ্রাসা, ৪টি মসজিদ, দস্তগির চেয়াম্যান বাজারের ৩৫টি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, দেড় শতাধিক বাড়ি-ঘর ও ৬শ’ একর ফসলি জমি কেড়ে নেয় প্রমত্তা মেঘনায়। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ২৫/৩০ হাত এলাকা ভাঙ্গছে। এমনকি ভাঙ্গনে হুমকির মুখে রয়েছে সরকারের ২ কেটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণাধিন আবাসন প্রকল্পটি। তাই নিন্দ্রাহীন রাত কাটছে ভোলার দৌলতখান উপজেলার বিচ্ছিন্ন চর মদনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। ভাঙ্গনে শিকার ওই ইউনিয়নের চরপদ্মা ও চরমুন্সি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার ইতিমধ্যে আশ্রয় নিয়েছে ভোলা সদর ও নোয়াখালির বিভিন্ন এলাকায়। আর যারা এখনও সেখানে বসবাস করছে তারা রয়েছে আতংকের মধ্যে, এইবুঝি মাথা গোঁজার ঠাইটুকুও চলে যায়। দৌলতখান উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন মদনপুর ইউনিয়নের মেঘনার পাড়ে বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গেলে ওই এলাকার বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, দ্বীপজেলা ভোলার দৌলতখান উপজেলার ঝুকিপূর্ণ ইউনিয়ন হচ্ছে মপদনপুর। এর আয়তন ৩২.০০ বর্গ কিলোমিটার, লোকসংখ্যা ৪ হাজার ৬শ’ ৭০ জন। জেলার মূল ভূ-খন্ড থেকে ওই ইউনিয়নে যেতে হয় উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে। সেখানে নেই কোন পাকা রাস্তা, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ। ইউনিয়নের ছেলে মেয়েরা প্রাথমকি শিক্ষার গন্ডি পাড় হওয়ার আগেই ঝড়ে পরে এবং জড়িয়ে পরে বিভিন্ন পেশা বৃত্তিতে। তবে ইউনিয়নটি ভোলা শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। সেখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষক ও জেলে। বেসরকারি হিসেবে এখানে ২ হাজার জেলের বসবাস করে। আর বাকিরা কৃষি কাজে নিয়োজিত। তবে গত ১৫ দিনের নদী ভাঙ্গন পাল্টে দিয়েছে মদনপুর ইউনিয়নের চিত্র। ভাঙ্গনের কবলে প্রায় দেড় শত পরিবার ভিটা হারিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। আবার কেউ থাকছে পথে-ঘাটে। এসময় কথা হয় চরমুন্সি গ্রামের মিলন পাটোয়ারির সাথে। তিনি জানান, মাত্র ১০ দিন আগে চরমুন্সি গ্রামের দস্তগির চেয়ারম্যান বাজারে অন্তত ৩৫টি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, ফজলুল হক শাহ ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, সাঈয়াদাতুন জান্না জামে মসজিদ, দৌলত বাড়ি জামে মসজিদ, বায়তুল মগবুল জামে মসজিদ, নুর জামে মসজিদ ছিল। ১০ দিনে মেঘনার ভাঙ্গনে এসব বিলীন হয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, ছিন্নমূল মানুষের বসবাসের জন্য মদনপুরে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যায় করে সরকার মেঘনার পাড়ে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করছে। ভঙ্গনের মুখে (মাত্র দুই হাজার ফুট দুরত্বে) রয়েছে এই প্রকল্পটিও। কথা হয় চরমুন্সি গ্রামের বাসিন্দা শাজাহান মুন্সির সাথে। তিনি জানান, ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ওই এলাকায় বসবাস করছেন। ভাঙ্গনে গত ১০ দিনে তার ১৬ একর ধানি জমিসহ চরপদ্মা ও চরমুন্সি গ্রামের অন্তত ৬শ’ একর ধানি জমি দুই সপ্তাহে মেঘনার ভাঙ্গনে বিলিন হয়েছে। অপর বাসিন্দা আবুল খায়ের জানান, গত ১০ দিনে মেঘনার ভাঙ্গনে বসত ভিটা হারিয়ে ওই এলাকার নুরুল হক, আবু তাহের, দুলু মাঝি, নাছির চৌকিদার, মিলন, কালাম মাঝি, বশির, বাবুল, ইউনুছ, মোস্তফা মাঝি, হেজু মাঝি, ইদ্রিস মাঝি, ইসমাইল বেপারি, কালু মাঝি, বশার মাঝিসহ অন্তত ২ শতাধিক পরিবার ভোলা সদরের ধনিয়া, কাচিয়া, শিবপুর, ব্যাংকের হাট, ভেলুমিয়া, ইলিশা ও নোয়াখালির বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। এ ব্যাপারে মদনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হারুন-অর রশিদ দস্তগির বলেন, এলাকার ছিন্নমূল মানুষের জন্য চরমুন্সী ও চর পদ্মায় তিনি অনেক আশা করে দস্তগির বাজার গড়ে তুলেছেন। আজ সেই বাজার মেঘনার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, এ বছর ব্যাপক ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে মসজিদ-মাদ্রাসা ও ফসলী জমি। ভাঙ্গন রোধে পার্শ্ববর্তী চর ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে খনন করার দাবি জানান সাবেক এই চেয়ারম্যান। এছাড়া রাক্ষসী মেঘনার ভয়াল ভাঙ্গনের কবল থেকে এই বর্ষা মৌসূমের আগেই মদনপুর ইউনিয়নকে রক্ষার করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি। মদনপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন নান্নু শুক্রবার দুপুরে বলেন, সরকার নদী ভাঙ্গন রোধে ভোলা শহরের তুলাতলি এলাকা দিয়ে ক্লক ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। এতেকরে ওই এলাকা দিয়ে অনেকটা ভাঙ্গন রোধ হলেও মেঘনার পানির স্রোত সেখানে ধাক্কা খেয়ে তার বিপরীত দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাই দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের চরমুন্সী ও চরপদ্মা এলাকা ব্যাপক ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত ১ মাসে বিলিন হয়েছে একরে একরে ফসলী জমি, বহু ঘরবাড়ি, মসজিদ-মাদ্রাসা। গৃহহারা হয়ে পড়েছে শত শত পরিববার। তাদের জন্য সরকারী ত্রাণ বরাদ্দ ও পূনর্বাসনের দাবি জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top