সকল মেনু

ছাত্রীকে জোর করে বিয়ে;নির্যাতন শেষে চুরির অপবাদ

 নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, চাঁদপুর:  দরিদ্র পরিবারে সুন্দর চেহারা নিয়ে জন্মা নেয়াটাই যেনো অপরাধ ছিলো পপির। ধনীর দুলালের কুনজরে পড়ে শেষ পর্যন্ত নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেকটা জোরপূর্বক বিয়ে করতে হলো সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী পপিকে। বিয়ে করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। চুরির অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করে মাথার চুল কেটে দেয়া হয়েছে পপির। আর মিথ্যে অপবাদের বোঝা মাথায় নিয়ে মেয়েটি এখন দিশেহারা। স্মৃতিশক্তিও লোপ পাচ্ছে তার। গণ্যমান্য ব্যক্তি ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়টিকে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না বলে অভিযোগ মেয়েটির পরিবারের। অথচ প্রভাবশালী ওই পরিবারের বখাটে যুবক দাবড়ে বেড়াচ্ছে গ্রাম থেকে শহর। না, এটি কোনো ধারাবাহিক নাটকের খন্ড চিত্র নয়। ধারাবাহিক নাটককে হার মানায় এমন নির্মম ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের উত্তর চরবড়ালী গ্রামে। দরিদ্র দিনমজুর হারুনুর রশিদ মিজির ছোট মেয়ে শিউলী আক্তার পপি (১৪)। স্থানীয় কাচিয়ারা মহিলা মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী। ক্লাস রোল ১৩। তিন বোনের মধ্যে সে সাবার ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে, মেঝো বোন অবিবাহিত, আছে ছোট দু ভাই। অভাবের সংসার, তবে হাসি-আনন্দের অভাব নেই। বিপত্তি বাধে সে দিন, যে দিন পাশের গ্রাম উত্তর চরপাড়া খান বাড়ির ওহাব আলী খানের ছোট ছেলে রাকিব খানের নজরে পড়ে পপি। রাকিব চলতি বছর এইচএসসি পাস করে ঢাকায় পড়াশোনা করার চেষ্টা করছে। পপির রূপ আর দিঘল-কালো চুল দেখে নিজেকে সামলাতে পারেনি রাকিব। নির্যাতিতা শিউলী আক্তার পপি জানায়, মাদ্রাসায় আসতে যেতে প্রেমের প্রস্তাব দিতো রাকিব। তারা ধনী বলে সাড়া দিতে চাইনি। সাড়া না দেয়ায় চলতি বছরের ১১ এপ্রিল রাকিব আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে ঢাকার ধানমন্ডি ৮-১০নং ওয়ার্ড কাজী অফিসে বিয়ে করতে বাধ্য করে। বিয়ের পর দিনে একটি হাসপাতালে নিয়ে আমার শরীরে ২টি ইনজেকশান পুশ করে সে। ৪ দিন পর গ্রামের বাড়ি এসে রাকিবদের বাড়িতে উঠি। এভাবে মাস তিনেক চলে ভালো। আমাকে কখনো খালার বাড়ি, কখনো বাবা-মামার বাড়ি, আবার কখনো বোনের বাড়ি পাঠিয়ে দিতো। কিন্তু কেনো তা আমি বুঝতে পারতাম না। কিছু বলতে চাইলে রাকিব বলতে তোমার মা-বাবার কাছে গেলে তোমার সাথে আর সম্পর্ক থাকবে না। তাই এক প্রকার তার কথা মতোই আমি চলতাম। কিন্তু এর কয়েকদিন পরেই শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। অবশ্য পপির পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে রাকিবের বাড়িতে যোগাযোগ করলেও তারা এ ব্যাপারে কোনো ফয়সালা দেয়নি। গত ২২ আগস্ট পপিকে নিয়ে রাকিব একই গ্রামের পাশের বাড়ির তার মামার বাড়ি যায়। সেখানে সম্পর্কে মামানি কুহিনুর বেগমের ঘরে চুরি করেছে বলে অভিযোগ দিয়ে পপিকে শেকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করে মাথার চুল কেটে দেয়। পরে তাকে পাগলের মতো সাজিয়ে রাস্তায় ছেড়ে দেয়া হয়। পপি ধীরে ধীরে চলে যায় ফরিদগঞ্জ থানায়। সেখানে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। এ ব্যাপারে রাকিবের মামানি কুহিনুর বেগম চুল কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, একই বাড়ির বিল্লালের বউসহ কয়েকজন মিলে পপির চুল কাটা হয়। ঘরের কিছু চুরি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুধু তাকে দেখেছি। তবে কিছু নিতে পারেনি। পপির বাবা হারুনুর রশিদ ও মা নুরজাহান বেগম জানান, কোথাও কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। অসহায় এ পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচারের দাবি জানিয়েছে তারা। এদিকে বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত রাবিক খান (২০) বলেন, আমি মেয়েটিকে চিনি-ই না। বিয়ের তো প্রশ্নই উঠে না। ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মামুনুর রশিদ জানান, আমি বিষয়টি অবগত নই। আর যাই হোক তবে একটি মেয়ের চুল কাটা ঠিক হয়নি। বিষয়টির সঠিক বিচারের দাবি জানিয়েছেন এ কাউন্সিলরও। এ দিকে গত ২২ আগস্ট মেয়েটি থানায় গিয়ে অভিযোগ দিলেও গত ১৫ দিনে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় নি। রাকিবের পরিবার প্রভাবশালী হওয়া তাদের বিরুদ্ধে এলাকার কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি। এ বিষয়ে তদন্ত স্বাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচারের কথা জানালেন পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফার। তিনি বলেন, অপরাধী যতো প্রভাবশালীই হোক তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। অভিযোগের ১৫ দিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি পুলিশের কোনো গাফিলতি আছে কী না। এদিকে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ পপিদের বাড়িতে গিয়ে পপি ও তার বাবা-মার সাথে কথা বলেছে বলে জানা গেছে। পপির অভিভাবককে থানায় এসে অভিযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top