সকল মেনু

সাক্ষ্য দিলেন জজ মিয়ার মা জোবেদা

 কোর্ট রিপোর্টার: আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন আলোচিত জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অস্থায়ী বিশেষ আদালতে তার সাক্ষ্যগ্রহণ করে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শাহেদ নুর উদ্দিন। এই মামলায় জোবেদা খাতুন ১০২ তম সাক্ষী হিসাবে দুপুর পৌণে দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত সাক্ষ্য প্রদান করেন। আগামী বুধবার সাক্ষীকে আসামিপক্ষের জেরার দিন ধার্য করেছেন আদালত। এসময় মা জোবেদা খাতুনের সঙ্গে জজ মিয়া ও তার বোন খোরশেদা খাতুন উপস্থিত ছিলেন। জজ মিয়া ও তার বোন অন্যদিন সাক্ষ্য দেবেন বলে জানা গেছে। জবান বন্দিতে তিনি জানান, জজ মিয়াকে গ্রেফতার করার সময় সে বাসের কন্ডাক্টার ছিল। জজ মিয়ার বাবা ভাঙ্গারির দোকানে কাজ করতেন। তার ছেলেকে ধরে আনার পর তাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তিনি আদালতের অনুমতি নিয়ে জজ মিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে তাকে জজ মিয়া জানায়, সিআইডি’র রুহুল আমিন এবং আব্দুর রশিদের কথা মতো চললে তার কোনো অসুবিধা হবে না। তারা টাকা-পয়সা, খাবার সব কিছুই দেবেন। এরপর জোবেদা খাতুন জজ মিয়াকে বলেন, ‘তুমি এ সব কি বলো? তারা তোমাকে ধরে আনলো এখন টাকা পয়সাও দিবো।’ এ সময় জজ মিয়া তার মাকে বলেন, ‘তুমি এসব বুঝবা না। তুমি সিআইডি অফিসে গেলে তোমাকে টাকা-পয়সা দিবে। আর সেনবাগ থানা পুলিশ তোমাকে দেখে শুনে রাখবে।’ সিআইডি অফিসে গিয়ে রুহুল আমিন ও আব্দুর রশিদদের সঙ্গে তার মাকে দেখা করতে করতে বলেন জজ মিয়া। সাক্ষ্যে জোবেদা খাতুন বলেন, পরদিন সিআইডি অফিসে গেলে আব্দুর রশিদ তাকে রুহুল আমিনের কাছে নিয়ে যান। রুহুল আমিন তাকে চা-বিস্কুট খাওয়ান। ভালো ভালো কথা বলেন। সে সময় তার সঙ্গে তার মেয়ে খোরশেদা আক্তার ছিল। রুহুল আমিন তাকে বলেন, ‘আপনার ছেলের বিষয়ে কোনো চিন্তা করবেন না। আপনি কারও কাছে যাবেন না। কারও কাছে কিছু বলবেনও না। জজ মিয়াকে সাক্ষ্য দেওয়ার পরে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যতোদিন সাক্ষ্য শেষ না হচ্ছে, ততোদিন আপনার সংসার চালাতে আমরা দুই হাজার টাকা করে দেবো’। এ সময় জজ মিয়ার বোন খোরশেদা সিআইডি কর্মকর্তা রুহুল আমিনের হাত ধরে কান্নাকাটি করে বলেন, আমরা টাকা নিয়ে আসিনি। আমার ভাইকে ছেড়ে দেন। এ সময় রুহুল আমিন তাকে বলেন, ‘টাকা-পয়সা যা লাগে দেবো। তোর বিয়ে শাদীও দিয়ে দেবো। তোর মাকে নিয়ে তুই বাড়ি যা। প্রতি মাসে এসে টাকা নিয়ে যাবি।’ এরপর তাদের গরুর মাংস দিয়ে ভাত খাইয়ে দুই হাজার টাকা দেওয়া হয় বলে সাক্ষ্য প্রদান করেন জোবেদা। জোবেদা খাতুন বলেন, এভাবে ছয় মাসে সিআইডি অফিসে গিয়ে মোট সাড়ে ১২ হাজার টাকা এনেছিলাম। শেষ মাসে সিআইডি ৫শ’ টাকা বেশি দিয়েছিল। কিন্তু সপ্তম মাসে টাকা আনতে যাওয়ার আগে আমার মেয়ে খোরশেদা মিডিয়ার কাছে দুই হাজার টাকা করে নেওয়ার কথা বলে দেয়। এ কারণে টাকা আনতে গেলে সিআইডি আর টাকা দেয়নি। সে সময় রুহুল আমিন বলে দিয়েছিলেন, ‘মিডিয়াকে বলে দিয়ে তোমরা তোমাদের রিজিক হারিয়েছো। আর টাকা পাবে না’। তিনি বলেন, এরপর থেকে ছেলেকে মামলা থেকে বাঁচাতে স্বামীর ভিটা বিক্রি করে অভাবে আছি। এখানে-সেখানে ভাড়া থেকে জীবন বাঁচাচ্ছি। এ সময় তিনি চোখ মোছেন। তার কণ্ঠ জড়িয়ে আসে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পরের তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল হককে সব ঘটনা খুলে বললে তিনি আমার ছেলে জজ মিয়াকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। এরপর আমার ছেলে মুক্তি পায়।     এ মামলার সাক্ষী সংখ্যা মোট ৪৯১ জন। এ নিয়ে ১০২তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। সাক্ষ্যগ্রহণকালে জামিনে থাকা আসামি খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডি’র সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন। অন্যদিকে সাবেক মন্ত্রী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ২৫ জনকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।এছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জন আসামি পলাতক আছেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নির্মমভাবে নিহত হন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী। এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক ৩টি এজাহার দায়ের করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top