সকল মেনু

বন্ধুতা অটুট রেখে ফিরে গেলেন আবে

 ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: বাংলাদেশের সঙ্গে পুরনো বন্ধুতা আরও জোরদার করে ফিরে গেলেন বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। মাত্র সাড়ে ২২ ঘণ্টার সফর শেষ করে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় এক বিশেষ বিমানে করে কলম্বোর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন শিনজো ও তার সফরসঙ্গীরা। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আবেকে বিদায় জানান। উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রসচিব শহিদুল হকও। এ সফরে বাংলাদেশ ও জাপানের বন্ধুতা আরো জোরদার হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একাত্তরে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই অর্থনৈতিক উন্নয়নে অব্যাহত জোরালো সহযোগিতা দিয়ে আসছে জাপান। এবারের সফরে বাংলাদেশকে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন শিনজো আবে। বাংলাদেশও জাপানের অকুণ্ঠ সহযোগিতার কথা বিবেচনা করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদ থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে জাপানকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার আওতায় ইতোমধ্যে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ইয়েন দেওয়া হয়েছে। বাকিটা আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে দেওয়া হবে বলে জানান শিনজো আবে।  ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে এদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চায় জাপান। এজন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে বাংলাদেশকে তাগিদ দেওয়া হয়। এ সহযোগিতার মূল লক্ষ্য বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি) উদ্যোগ। এ প্রতিশ্রুতি এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বলেই জোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন আবে। এছাড়া জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) গঠনের উদ্যোগ নেওয়ায় বাংলাদেশকে স্বাগত জানান আবে। বিগ-বি (বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট) হিসেবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি। দুই দিনের সফরে শনিবার দুপুরে সস্ত্রীক ঢাকায় আসেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে জাপানের প্রতিনিধিত্বশীল ২২টি প্রাইভেট কোম্পানীসহ মোট ১৫০ জনের একটি প্রতিনিধি দলও বাংলাদেশ সফর করে। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লাল গালিচা সংবর্ধনায় বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে শিনজো আবে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। সেখান থেকে তিনি ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে শিনজো আবে রাজধানীর একটি হোটেলে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আয়োজিত জাপান-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে যোগ দেন। শীর্ষ বৈঠক শেষে তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার হোটেল স্যুটে প্রথমে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং পরে সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। দু’টি বৈঠকই ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়নি। রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন শিনজো আবে। শনিবার বিকেলে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে দুই প্রধানমন্ত্রী প্রথমে একান্তে ১৫ মিনিট আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে প্রায় এক ঘণ্টার আনুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ নেন তারা। এরপর আসে যৌথ সংবাদ সম্মেলন পর্ব। শুরুতেই যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের হাতে উপহার হিসেবে দেওয়া রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ছবিযুক্ত দু’টি অ্যালবাম তুলে দেন।

পাশাপাশি জাপানের প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ সময় সে দেশের বিশেষ মুদ্রা উপহার-স্মারক হিসেবে তুলে দেন, যে মুদ্রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি খচিত রয়েছে।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে সমন্বিত অংশিদারিত্ব কর্মসূচি ও বিগ-বি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদের নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, কয়েক বছর আগে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে ২০১৬-১৭ মেয়াদের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদের জন্য আমরা নতুন করে প্রার্থিতা ঘোষণা করি। ২০১১ সালে আমাদের দীর্ঘদিনের অকৃত্রিম বন্ধু জাপানও একই গ্রুপ থেকে তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করে। দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা এবং গোষ্ঠীসংহতি বজায় রাখার জন্য বহুপক্ষীয় ফোরামগুলোর  সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।

মুক্তিযুদ্ধে জাপান সরকার এবং সে দেশের জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহমর্মিতা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জাপানের অব্যাহত ও বলিষ্ঠ সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় গোষ্ঠীসংহতি ও ঐক্যের স্বার্থে আমি এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় গ্রুপ থেকে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী পদে জাপানের প্রার্থিতার পক্ষে বাংলাদেশের সমর্থন ঘোষণা করছি। একই সঙ্গে জাপানের পক্ষে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিচ্ছি।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি দেশ স্থায়ী সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে। আর নিরাপত্তা পরিষদের ১০টি অস্থায়ী পদে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দুই বছর পর পর বিভিন্ন দেশ নির্বাচিত হয়।

শিনজো আবে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক যখন নতুন পর্যায়ে উন্নীত হতে যাচ্ছে, সে সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত এ সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি একে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ মোড়’ বলে অভিহিত করেন।

এর আগে দুপুরে সোনারগাঁ হোটেলে দেওয়া বক্তৃতায় শিনজো আবে জাপানের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবেন বলে জানান। বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ককে ভাই-বোনের সম্পর্ক উল্লেখ করে শিনজো আরও বলেন, বাণিজ্য বাড়াতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদেরই ভূমিকা রাখতে হবে।

জাপানের অর্থনীতিকে চাঙা করতে তার ‘আবেনোমিকস’ প্রয়োগে বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বঙ্গোপসাগরের তীরে বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা (বে অফ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট-বিগ বি) প্রতিষ্ঠাই বাংলাদেশকে সহযোগিতার অগ্রাধিকারে থাকবে বলে জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে একযোগে কাজ করার গুরুত্ব দিয়ে এক্ষেত্রে নিজের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া সামুদ্রিক সম্পদ টেকসই উপায়ে ব্যবহারেও সম্মত হয়েছেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী। এ প্রেক্ষাপটে ব্লু -ইকোনমি বা সাগর অর্থনীতির বিকাশে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলা হয়।

সফরের শেষ দিনে রোববার সকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন। তিনি চারুকলার গ্যালারিতে একটি প্রদশর্নী ঘুরে দেখেন। যেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়।

২০০০ সালে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মোরির পর এটা জাপানের কোনো প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর। গত ২৫-২৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর করেন। এ সময় তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। সেই আমন্ত্রণ রাখতেই ঢাকা আসেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top