সকল মেনু

মনপুরার হাট বাজারে বহিরাগত শ্রমিকদের ভীড়;স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ

 ভোলা প্রতিনিধি: ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার হাট বাজারগুলোতে বর্তমানে বিদেশী শ্রমিকদের ভীড় লক্ষ কারা গেছে। কোন মালিক শ্রমিক কিনতে এসে দর দামে বনিবনা হলে প্রয়োজন মতো কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে যান। আবার কোন শ্রমিক বিক্রি হতে না পেরে তীর্থের কাকের মতো মালিক আসার পথ পানে তাকিয়ে থাকেন। কোন শ্রমিক কোন মালিকের কাছে বিক্রি হতে পারলে তার আনন্দের শেষ নেই। আর কোন কারনে কোন শ্রমিক যদি একদিন বিক্রি হতে না পারেন তাহেলে পুরোটা দিন বসে বসে খেতে হচ্ছে। অর্থাৎ পূর্ব দিনের রোজগার থেকে খরচ করতে হয়। ফলে খেয়ে না খেয়েই দিন পার করছেন বহু শ্রমিক। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন্ এলাকা পানিবন্দী হয়ে পড়ায় কাজের খোঁজে আসা বহিরাগত শ্রমিকদের ভীড় এবার বেশী। অথচ মেঘনার করাল গ্রাসে বহু আবাদি জমি ভেঙে যাওয়ায় শ্রমিকের কাজ করার ক্ষেত্রও কমে গেছে। চাহিদা না থাকায় বহিরাগত শ্রমিকরাও বিক্রি হচ্ছেনা সহজে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তজুমদ্দিন উপজেলার ইলিয়াস (৩০), শাহে আলম (২৮), মোঃ শফিক (৩২) ও বোরহাউদ্দিন উপজেলার আঃ খালেক (৩৫), মিলন (৩৫) এর মতো অনেকেই নিজ এলাকায় কাজের অভাব থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মনপুরায় চলে এসেছেন কাজের সন্ধানে। এসব শ্রমিকদের কারো বাড়ি ভোলা জেলার বিভিন্ন উপজেলার আবার কেই জেলার বাহিরের থেকে এসেছেন কাজের সন্ধানে। তাদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, নিজ এলাকায় বন্যার পানি প্লাবিত হয়ে দীর্ঘদিন বিভিন্ন এলাকা পানিবন্দী হয়ে পড়ায় কৃষিজমি হয়ে পড়েছে চাষাবাদের অযোগ্য। এতে করে সাধারন খেটে খাওয়া শ্রমিকরা হয়ে পড়েছেন কাজশূন্য। সংসারে দেখা দিয়েছে অভাব নামক অসহায় ঘোড়া। বেশীর ভাগ শ্রমিকই বৌ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছিল। তাই মাঠে খেটে খাওয়া এসব শ্রমিকরা উপায়ান্তর না পেয়ে পাড়ি জমিয়েছে মনপুরায়।  এখানে এসেও তারা হয়ে পড়েছেন বিপাকে। কারণ চলমান বর্ষার মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মত মনপুরায়ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ছে। মনপুরার হাজীর হাট, রামনেওয়াজ, উত্তর সাকুচিয়া ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের প্রায় ১৫ টি গ্রাম বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হওয়ায় শতাধিক একর কৃষি জমি হয়ে পড়েছে চাষাবাদের অনুপযোগি। বেশীর ভাগ জমি এখনো রয়ে গেছে পানিবন্দী। এছাড়া মেঘনার করাল গ্রাসে ভেঙে যাওয়ায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় আবাদী জমির পরিমানও কমে গেছে আশংকাজনকহারে।  যার ফলে এলাকায় শ্রমিক চাহিদাও রয়েছে কম। দেশী শ্রমিকদের কাজে খাটিয়ে বহিরাগত শ্রমিকদের বেশী একটা দরকার হচ্ছেনা। এছাড়া ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকরা ৪০০ টাকা দিয়ে বহিরাগত শ্রমিকদের কাজে খাটাতে তেমন একটা আগ্রহ প্রকাশ করছেননা। এরচেয়ে কম খরচে এলাকার শ্রমিক পাওয়ায় বহিরাগত শ্রমিকরা রয়ে যাচ্ছেন কাজ শূন্য। এতে করে বহিরাগত শ্রমিকরা উপজেলার হাজীর হাট বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের টহল ঘর কিংবা বা ফুটপাতে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছেন। আর চাহিদা মতো বাড়িতে টাকা পাঠাতে না পারায় অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছে পরিবারের সদস্যগুলোও। শ্রমিকদের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, নিজ এলাকায় কাজ নেই তাই এখানে কাজ করতে এসেছি। প্রতি হাট বারে এখানে বসি। মালিক এসে আমাদেরকে দাম করে নিয়ে যায়। যতদিন রাখে ততদিন কাজ করি। কাজ শেষ হলে আবার বিক্রির আশায় হাটে আসি। বিক্রি হতে না পারলে তিখন কি করেন প্রশ্ন করলে তারা বলেন, তখন আর কি করবো। বসে বসে আগের উপার্জন থেকে খরচ করি। আর বিক্রির অপেক্ষায় থাকি। এসংক্রান্ত আরো প্রশ্ন করতে চাইলে তাদের অশ্রু ভরা চোখগুলো ছলছল করে তাকিয়ে থাকে প্রতিবেদকের দিকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top