সকল মেনু

মৌলভীবাজারে আদিবাসীদের দিন কাটে উচ্ছেদ আতংকে

 এম শাহজাহান আহমদ, মৌলভীবাজার: বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও তারা আদিবাসী। কিন্তু নেই নিজস্ব ভিটেমাটি কিংবা ফসলি জমি। অন্যের লিজ নেয়া পাহাড়ী জমিতে বসবাস করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। ভূমিহীন হিসাবে পরগাছার মতো বসবাস করায় তাদের দিন কাটে উচ্ছেদ আতংকে। অথচ তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পাশাপাশি তাদের উৎপাদিত পণ্য আজ দেশের বাজার ছাড়িয়ে রপ্তানী হচ্ছে ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্যে। বিশ্ব আদিবাসী দিবসে মৌলভীবাজার জেলায় বসবাসরত আদিবাসী খাসিয়া ও গাঢ় সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকা নিয়ে একটি সরজমিন প্রতিবেদন।
সিলেটের ঐতিহ্যের একটি অংশ ঘরে মেহমান এসে বিদায়ের আগে পান দিয়ে আপ্যায়ন। আর সেই পানের স্বাদ নিতে হলে খাসিয়া পানের বিকল্প নেই। অথচ যাদের ঘামে পরিশ্রমে এত আপ্যায়ন সেই খাসিয়া সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকার করুন ইতিহাস অনেকেরই অজানা। তাদের নেই নিজস্ব কোন ভূমি। অন্যের লিজকৃত ভূমিতে সুস্বাদু সেই পান চাষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। পাহাড়ের উপরে বসবাসকারী অধিকাংশ খাসিয়া পুঞ্জির নেই নিজস্ব কোন রাস্তা। অন্যের লিজকৃত চা বাগানের জমি ও লেবু আনারসের বাগানের মধ্যদিয়ে প্রতিদিন যাতায়ত করতে হয়। এনিয়ে বিভিন্ন সময়ে ছোটখাট সংঘাত সংঘর্ষ থেকে শুরু করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনার আতংকে কাটে। এছাড়াও বিশুদ্ধ পানির অভাব, সেনিটেশন সমস্যা, শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়ত ব্যবস্থা সবকিছুতেই অনেক পিছিয়ে রয়েছে এজনগোষ্ঠী।
সরকারী হিসাব অনুসারে, বাংলাদেশে প্রায়  ৪৫ টির অধিক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে। এরা মোট জনসংখ্যার শতকরা ১.১৩ভাগ। এরমধ্যে মৌলভীবাজার জেলার ৬টি উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক পাহাড়ী পুঞ্জিতে প্রায় দশ হাজার আদিবাসী খাসিয়া ও গারো সম্প্রদায়ের লোক বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছে। তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস পানচাষ। এছাড়া সিলেট বিভাগের সিলেটে ১৩টি, সুনামগঞ্জে ১টি ও হবিগঞ্জে ২টি পানপুঞ্জি রয়েছে। এসকল পানপুঞ্জিতে বসবাসরত খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে ভূমি সমস্যায় ভুগছেন। বংশ পরম্পরায় যুগযুগ ধরে এসব জমিতে বসবাস ও পান চাষ করলেও ভূমির উপর তাদের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যে কারণে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ জীবন মানের উন্নয়ন ঘটছে না ।
মৌলভীবাজার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির জিডিশন প্রধান সূচিয়াং প্রধান বলেন, এদিকে ঐতিহ্যগত ও উত্তরাধিকার সূত্রে খাসিয়ারা বনভূমির বাসিন্দা। তাদের জীবন ও জীবিকার উৎস পান চাষাবাদ। তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকায় প্রতিনিয়ত ভূমি দখল, বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ, হত্যা ও নির্যাতনসহ বিভিন্ন হয়রানীর স্বীকার হতে হচ্ছে।
খাসিয়ারা মনে করেন, শত কষ্ট ও দুঃখ দুদর্শার মাঝেও এসব আদিবাসী খাসিয়ারা তাদের উৎপাদিত পন্যের সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের বাজারে ছড়িয়ে দিতে দিনরাত নিরলস ভাবে পরিশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দাবী আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করাসহ বাদ পড়া আদিবাসীদের নাম সঠিকভাবে গেজেট ভূক্ত করা। এছাড়াও সমতলে আদিবাসীদের ভুিম কমিশন ব্যবস্থা চালু করে তাদের সকল সমস্যার সমাধান ও নিরাপত্তা দিলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে- বিশ্ব আদিবাসী দিবসে এমনটাই প্রত্যাশা ক্ষুদ্র জাতি সত্তার জনগোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়ের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top