সকল মেনু

ওসি সালাউদ্দিনসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

 আদালত প্রতিবেদক: পুলিশ হেফাজতে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজনের মৃত্যুর অভিযোগে মিরপুর মডেল থানার ওসিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল নিহত সুজনের স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুচি বাদী হয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন- মিরপুর মডেল থানার ওসি সালাউদ্দিন, এসআই  জাহিদুর রহমান জাহিদ, এ.এস.আই রাজ কুমার, কনস্টেবল আসাদ, রাশেদুল, মিথুন, নাসিম, ফয়সাল, খোকন ও পলাশ। মামলায় বাদীসহ মোট ৬ জন সাক্ষিও রয়েছে। সাক্ষিরা হলেন- বাদী নিজে, নজরুল ইসলাম শামীম, শাহিদা বেগম, মাহবুব আলম, মো. সাইফুল ইসলাম ও মিনহাজ। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত ১৩ জুলাই রাত সোয়া বারটায় বাদীর ভাড়া বাসায় বাড়িওয়ালার ছেলে বিদ্যুৎ বিল বিষয়ে কথা বলার মিথ্যা অজুহাতে দরজা খুলতে বলে। দরজা খুলেই বাদী এসআই  জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাজ কুমার, কনস্টেবল আসাদ, রাশেদুল ও মিথুনকে দেখতে পান। এই আসামিরা তখন বাদীর স্বামীর নামে মামলা আছে বলে বাসা তল্লাশী করেন। এই আসামিরা বাড়িওয়ালার মেয়েকে দিয়ে বাদীকে বাথরুমে ঢুকিয়ে দেহ তল্লাশী করে। এরপর ১ নং আসামি এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ তার পকেট থেকে একটি পিস্তল ও দুটি ম্যাগজিন বের করে বাদীর খাটের উপর রাখে। বাদী তাতে বাঁধা দিলে এসআই  জাহিদুর রহমান জাহিদ তাকে ধমক দিয়ে চুপ থাকতে বলে, অন্যথায় অস্ত্র ও গুলি দিয়ে তাকেও মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। পুলিশের আগমনের খবর পেয়ে বাদীর স্বামী নিহত মাহবুবুর রহমান সুজন তখন ভয়ে রান্না ঘরের সানসেটে লুকিয়ে থাকেন। এএসআই রাজকুমার বাদীর স্বামীকে সানসেট থেকে নামিয়ে আনেন। এরপর এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, ও এএসআই রাজকুমার লাল-হলুদ রঙের গামছা দিয়ে সুজনের চোখ মুখ বেঁধে এবং দুই হাত পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে রশি দিয়ে পিঠমোড়া করে বেঁধে টেনে বাথরুমে নিয়ে বালতি ভরা পানিতে নিহতের মাথা ডুবিয়ে শরীরের অন্য অংশে লোহার রড দিয়ে বেদম পেটাতে থাকেন। এমন নির্যাতন দেখে নিহতের পাঁচ বছরের শিশুপুত্র মোশারফ এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদের পা ধরে তার বাবাকে না মারার জন্য কান্নাকটি করলে এসআই জাহিদ শিশু মোশারফকে সজোরে লাথি মেরে সরিয়ে দেওয়ার এবং তাতে শিশু মোশারফের জ্ঞান হারিয়ে ফেলার অভিযোগ করা হয়েছে এ মামলায়। এরপর এসআই  জাহিদুর রহমান জাহিদ বাদীর নিকট দুই লক্ষ টাকা দাবি করে এবং টাকা না দিলে তার স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। বাদী টাকা দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করলে এসআই  জাহিদুর রহমান জাহিদ বাদীর চুলের মুঠি ধরে মেঝেতে ফেলে তার পেটের বামপার্শ্বে সজোরে লাথি মারেন। বাদী কান্নাকাটি করলে এসআই  জাহিদুর রহমান জাহিদ তার পায়ের জুতা খুলে বাদীর বুকে ছুড়ে মারে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। এরপর বাদী, তার স্বামী ও শিশুপুত্রকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে অন্যান্য আসামির সহায়তায় এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ জোরপূর্বক দুটি মোবাইল ফোন, আলমারিতে রক্ষিত নগদ বিশ হাজার টাকা, দুই লক্ষ টাকা মূল্যমানের গলার স্বর্নের চেন, হাতের বালা, নাকের নলকসহ অন্যান্য বহুমূল্যবান কাগজপত্রসহ বাদী, তার স্বামী ও শিশুপুত্র মোশারফকে রাত অনুমান পৌণে দুইটায় মিরপুর থানায় নিয়ে যায়। এরপর এসআই  জাহিদুর রহমান জাহিদ তার ওয়্যারলেসে ফোন করে স্যার সম্বোধন করে বলে (অনুল্লেখিত) হারামজাদাকে মারতে মারতে নিয়ে এসেছি, এখন কি করব? অপর প্রান্ত থেকে জবাব আসে ক্লোজ করে দাও না হয় ফাইনাল করে দাও। এরপর বাদী ও তার শিশুপুত্রকে একটি কক্ষে আটক রেখে তার স্বামীকে আলাদা কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। এসময় বাদী তার স্বামীর আর্তচিৎকার শুনতে পায় এবং স্বামীর জন্য কান্নাকাটি করতে থাকেন। এর কিছু সময় পর বাদী আর তার স্বামীর কোনো সাড়া শব্দ শুনতে পাননি। এরপর সকাল অনুমান ৯টার সময় বাদী ও তার শিশুপুত্রকে ওসি সালাউদ্দিনের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাদীকে জানানো হয, তার স্বামী গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাদী হাসপাতালে যেতে চাইলে ওসি সালাউদ্দিন তাকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করলে ওসি সালাউদ্দিন বাদীকে এক গ্লাস পানি পান করান। পানি পানের পর বাদী অস্বস্তি বোধ করতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে ওই সাদা কাগজে স্বাক্ষর করেন। এরপর ওসি স্লাাউদ্দিনের নির্দেশে একজন মহিলা পুলিশসহ মোট চারজন পুলিশ বাদী ও তার শিশুপুত্রকে একটি গাড়িতে তুলে বাদীর বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে মহিলা পুলিশ বাদীকে নিয়ে বসে থাকে এবং অপর পুলিশ সদস্যরা বাদীর স্বামীর পুরনো চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র খুঁজতে থাকে। খুঁজে পাওয়া চিকিৎসার কাগজপত্রসহ ওই পুলিশ সদস্যরা বাদী ও তার শিশুপুত্রকে আবার মিরপুর থানায় নিয়ে যান। বাদীআবারও ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার কথা বললে তাকে তার মিরপুরস্থ শ্বশুর বাড়ির কাছে নিয়ে নামিয়ে দেয়া হয় এবং বলা হয় তার স্বামীর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে আছে। একথা শুনে বাদী দ্রুত তার শ্বশুর বাড়িতে ঢুকে দেখেন তার শাশুড়িও মৃত্যু সংবাদ শুনে কান্নাকাটি করছেন। বাদীর কথা শুনে এ মামলার সাক্ষি মাহবুব আলম, সাইফুল ও মিনহাজ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে গিয়ে সুজনের লাশ দেখতে পান। সাক্ষিরা বাদীর স্বামীর মৃত দেহের বিভিন্ন অংশে আঘাতজনিত কালো দাগ দেখতে পান। ময়না তদন্ত শেষে গত ১৪ জুলাই জানাযার পর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয় সুজনকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top