সকল মেনু

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তার আশ্বাসে পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত

 রংপুর অফিস:  মোটর শ্রমিকদের আকস্মিক যানবাহন ধর্মঘটের ফলে রোজার প্রথম দিনেই শত শত মানুষ রোজা রাখতে পারলেন না। অনেকে নিকট আত্মীয়ের জানাজা অংশ নিতে এসে পারলেন না। মুমুর্য রোগিরাও পড়ের বিপাকে। বিক্ষুব্ধ মোটর শ্রমিকরা শতাধিক যানবাহন ভাংচুর করে। ধর্মঘটের ফলে বিপর্যপ্ত হয়ে পড়ে রংপুর বিভাগের জীবন যাত্রা। রমজানের প্রথমদিনে পরিবহন শ্রমিকদের এ ধরনের অমানবিক ধর্মঘটে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারন মানুষ। তবে এতে পুলিশের কোন ভুমিকা দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তার আশ্বাসে সোমবার দুপুরের পর ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়ে ধর্মঘট স্থগিত ঘোষণা দেন জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক এমএ মজিদ।
শ্রমিকদের উপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রংপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন রোববার রাত সাড়ে ১২ টা থেকে অনির্দিষ্টকালের যানবাহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। ধর্মঘটের ডাক দিয়ে শ্রমিকরা  রাস্তায় এলোপাথারিভাবে ট্রাক বাস রেখে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে এক ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করে। এতে করে বিভাগের ৮ জেলা এবং ঢাকার সাথে  যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে গতকাল সোমবার বিকেলে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন জরুরি সভা ডেকে ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়।
রংপুর-পীরগাছা সড়কে অটোচালকদের সাথে মোটর শ্রমিকদের কথাকাটাকাটির জের ধরে অটোচালকরা এক বাস চালককে মারপিট করে। এ ঘটনার জের ধরে  রোববার রাতে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক এমএ মজিদের নেতৃত্বে শ্রমিকরা মাহিগঞ্জ আমতলা এলাকায় জমায়েত হন। রাত ১২ টার দিকে পুলিশ সেখানে গেলে পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ বাধে। এসময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং ১০ রাউন্ড টিয়ার টেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করে। লাঠিচার্জে ১০ শ্রমিক আহত হন। এসময় শ্রমিকরা অভিযোগ করেন পুলিশ তাদের উপর কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। তবে পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ ঘটনার পরপরই জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক তাদের উপর হামলাকারি দোষি পুলিশের শাস্তির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। এরপর পরই বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রংপুরের ৪৫ রুটে চলাচলকারি সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। শ্রমিকরা আমতলা, মাহিগঞ্জ, সাতমাথা, তাজহাট, মর্ডান মোড়, শাপলা চত্বর, টার্মিনাল, মেডিকেল মোড়সহ নগরীর বিভিন্নস্থানে শতাধিক অটো রিকসা ভাংচুর করে। তারা বেশ কয়েকটি ট্রাকেও হামলা চালায়। এতে করে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগা, পঞ্চগড়গামি কোচ ও বাসের যাত্রীরা পড়েন বিপাকে। তারা বাসের মধ্যেই ১৫ থেকে ২০ ঘন্টা আটকা পড়েন। এরফলে অনেকে অনেকেই সেহরি খেতে পারেনি। এরফলে প্রথম রোজাও তাদের পক্ষে রাখা সম্ভব হয়নি। শ্যামলি পরিবহনের যাত্রী মোজাম্মেল হোসেন ও আবদুস সালাম, হানিফ পরিবহনের যাত্রী রোকসানা আক্তার ও লাবনী আক্তার জানান, তারা সবাই নীলফামারী ও ঠাকুরগাঁও-এ যাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ১২ টার দিকে  তাদের গাড়ি আটকা পড়ে মর্ডান মোড়ে। এ কারণে রাতে তারা সেহরি খেতে পারেননি প্রথম রোজাও রাখা হয়নি তাদের। গরমে নাজেহাল হয়ে পড়েন তারা। রোজিনা পরিবহণের যাত্রী শামীম আহমেদ জানান, উলিপুরে তাদের এক নিকট আত্মীয় জানাজা পড়তে ঢাকা থেকে যাচ্ছিলেন কিন্তু ধমর্ঘটের ফলে তার আর হলনা। এসব যাত্রীরা আরো জানান, আকস্মিকভাবে যানবাহন ধর্মঘটের ফলে তারা এ বিড়ম্বনায় পড়েছেন। রোস্তম আলী নামে সাতমাথা এলাকার এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন তার বোন শারমিনকে তিনি হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি । ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহন দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রাখার ফলে অ্যাম্বুলেন্স আসতে পারেনি।   ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের মিঠাপুকুর অংশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এতে, দুরপাল্লার অনেক যাত্রী গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। নীলফামারীর রবিউল ইসলাম স্ত্রী-সন্তানসহ ঢাকা থেকে একটি নৈশকোচে বাড়ি যাচ্ছিলেন। কিন্তু রংপুরের পীরগঞ্জে এসে নৈশকোচটি থামে। আর যাবেনা বলে জানানো হয় যাত্রীদের। এ কারণে তিনি পরিবারসহ ভ্যান-রিক্সাযোগে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাচ্ছিলেন। শঠিবাড়ী থেকে কোন কিছু না পেয়ে অবশেষে পায়ে হেঁটেই রওয়ানা হন। মিঠাপুকুর বাসস্ট্যান্ডে তাঁর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর অনেক কস্টে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলাম। আশা ছিল, বাড়ির সবার সাথে প্রথম রোজা রাখব। কিন্তু ধর্মঘটে সেটা আর হলোনা। আরেক যাত্রী রিমন মিয়াও জানালেন ভোগান্তি কথা। এদিকে ধর্মঘটের ফলে রংপুরের মর্ডান মোড় থেকে পীরগঞ্জ সাতমাথা থেকে তিস্তা পর্যন্ত যানবাহনের লাইন দেখা যায়।  এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বুলবুলের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার দুপুরের পর রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক এমএ মজিদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার আশ্বাসে আমরা ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়ে ধর্মঘট স্থগিত করলাম। এ সময়ের মধ্যে যদি দোষি সহকারি পুলিশ সুপার আবু নাসেরসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তবে আবারও ধর্মঘট শুরু করা হবে। তিনি বলেন, কোন কারণ ছাড়াই পুলিশ আমাদের উপর গুলি চালায় ও মারপিট শুরু করে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়।  অটো চালক সমিতির সভাপতি মহির আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, মোটর  শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা আমাদের শতাধিক অটো ভাংচুর করেছে। তারা আমাদের চালকদেরও মারপিট করে।  এদিকে, কোতয়ালী থানার ওসি আবদুল কাদের জিলানী জানান, শ্রমিকরা পুলিশের উপর আক্রমন চালায়। তাই পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top