সকল মেনু

দুর্গাপুরের সাদামাটির পাহাড়

 পাপ্পু মজুমদার, নেত্রকোনা প্রতিনিধি: চিনা মাটির প্রাচীন ইতিহাস না জানা গেলেও ১৯৫৭ সাল থেকে এ মাটি উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। ১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম কোহিনুর এলুমিনিয়াম ওয়ার্কস নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই সাদামাটি উত্তোলনের কাজ শুরু করে। পরে ১৯৭৩ সালে বিসিআইসি সাদামাটি উত্তোলনে যোগ দেয়।

বিভিন্ন রংয়ের মাটি, পানি ও প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য মনকে বিমোহিত করে। সাদা, গোলাপী, হলুদ, বেগুনি, খয়েরী, নিলাভ বিভিন্ন রংয়ের মাটির পাহাড় চোখকে জুড়িয়ে দেয়। সাদামাটি এলাকা জুড়ে অসংখ আদিবাসী বসতি।

দূর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আড়াপাড়া ও মাইজপাড়া মৌজায় বিজয়পুরের সাদামাটির পাহাড় অবস্থিত। বাংলাদেশের মধ্যে প্রকৃতির সম্পদ হিসেবে সাদা মাটির অন্যতম বৃহৎ খনিজ অঞ্চল এটি। ছোট বড় টিলা-পাহাড় ও সমতল ভূমি জুড়ে প্রায় ১৫.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার প্রস্থ এই খনিজ অঞ্চল। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ১৯৫৭ সালে এই অঞ্চলে সাদামাটির পরিমাণ ধরা হয় ২৪ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন, যা বাংলাদেশের ৩ শত বৎসরের চাহিদা পূরণ করতে পারে।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় বর্তমানে অবাধে গারো-টিলা কেটে সাদামাটি উত্তোলন করছে সিরামিক সামগ্রী তৈরীর প্রায় ১০/১২টি মাইনিং কোম্পানী। স্থানীয় প্রশাসন বলছে সুনিদ্রিষ্ট নীতিমালা না থাকায় তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারছেন না।

পরবর্তিতে পুনরায় বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ বিভাগ ১৯৮৩ সালে ভূতাত্ত্বিক জরিপ শেষে জানায়, উপজেলার বিজয়পুরে ১৪ কিলোমিটার এলাকায় ১৫ থেকে ৪০ মিটার উচু অসংখ্য সাদামাটির টিলাতে ভূপৃষ্ঠের ৬০ মিটার গভীর পর্যন্ত দুই দশমিক ৪৭ মিলিয়ন টন সাদা মাটির মজুদ রয়েছে। এরপর থেকে দেশের বেঙ্গল ফাইন সিরামিক ইন্ড্রাষ্টিজ, মেসার্স মোমেনশাহী সিরামিক এন্ড গ্লাস ফ্যাক্টরী, মেসার্স চায়না-বাংলা সিরামিক ইন্ডাষ্ট্রীজ লিমিটেড সহ নামী-বেনামী প্রায় ১০/১২টি মাইনিং কোম্পানী কোন প্রকার নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করেই অবাধে মাটি উত্তোলন করছে। স্থানীয় হাজং সংগঠন এবং বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠনের নেতৃবৃন্দ হটনিউজটোয়েন্টিফোর কে জানান, এতে করে আদীবাসি উচ্ছেদ সহ নানা রকম পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে উপজাতি পরিবারের সাধারণ মানুষ, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সরকারের রাজস্ব খাত।

এসব কোম্পানীর হয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী এজেন্টরা অবাধে ও অপরিকল্পিত ভাবে টিলাগুলোতে গভীর খনন করে এই মাটি উত্তোলনের কাজ নিয়ন্ত্রন করে আসছে।
সমগ্র দেশের একমাত্র বিজয়পুরের এই খনিজ সম্পদ সাদামাটি উত্তোলনে সুনিদ্রিষ্ট নীতিমালা প্রনয়ন করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করবে সরকার এমনটাই দাবী দুর্গাপুর সহ সমস্ত নেত্রকোণাবাসীর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top