সকল মেনু

কুমিল্লায় নজরুলের যত স্মৃতি

  কুমিল্লা প্রতনিধি : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কুমিল্লাবাসীর জামাতা। তিনি ১৯২১ সালের এপ্রিল থেকে ১৯২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচবার কুমিল্লায় আসেন। কুমিল্লা শহর ও মুরাদনগরের দৌলতপুরে কাটান ১১ মাস। তার জীবনে যে দুজন নারী এসেছিলেন তারা দুজনই কুমিল্লার। প্রথম জন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের খাঁ বাড়ির আলী আকবর খানের ভাগিনী নার্গিস আসার খানম। অপরজন কুমিল্লা শহরের ইন্দ্রকুমার সেনের ভাতিজি আশালতা সেনগুপ্তা দুলী।

কুমিল্লায় অবস্থানকালে তিনি যেমন কবিতা, গান লিখেছেন, সংস্কৃতি চর্চা করেছেন, তেমনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহও করেছেন। হারমোনিয়াম গলায় ঝুলিয়ে কুমিল্লার রাস্তায় ইংরেজ বিরোধী গান গেয়েছেন। এ কারণে গ্রেফতার হয়েছেন। কুমিল্লায় কারাবরণও করেছেন কিছুদিন।

মুরাদনগরের দৌলতপুর, কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়র ইন্দ্রকুমার সেনের বাড়ি, ধর্মসাগর পাড়, রাণীর দীঘির পাড়, মহেশাঙ্গন, দারোগা বাড়ি, টাউন হল ময়দান, সঙ্গীতজ্ঞ সচীন দেব বর্মনের বাড়ি, নবাব বাড়িসহ কুমিল্লার আনাচে-কানাচে তার পদচারণার অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে।

কুমিল্লার গবেষকরাও নজরুলকে নিয়ে লিখেছেন অনেক গ্রন্থ। সুলতান মাহমুদ মজুমদার, অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক, তিতাস চৌধুরী, ড.আলী হোসেন চৌধুরী নজরুলকে তুলে ধরেন তাদের লেখনির মাধ্যমে।

কবি এবং তার স্মৃতিকে আরো জাগরুক করে রাখার জন্য কুমিল্লা এবং মুরাদনগরে কবির নামে নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি শাখায় ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কবি নজরুল ছাত্রাবাস। কুমিল্লা শহরের নানুয়ার দীঘির দক্ষিণ পাড়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘নজরুল মেমোরিয়াল একাডেমি’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কবির অন্যতম একটি কাব্য গ্রন্থের নামে ধর্মসাগরের উত্তর পাড়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘গুল বাগিচা প্রাথমিক বিদ্যালয়’।

কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘নার্গিস-নজরুল বিদ্যানিকতন’ নামের একটি নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এখানে সংগীত নৃত্য, নাটক প্রশিক্ষণ ও পাঠাগারের জন্য প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে ‘নজরুল নিকেতন পাঠাগারটি’। কুমিল্লা হাউজিং এস্টেটে গড়ে তোলা হয়েছে নজরুলের নামে একটি সঙ্গীত বিদ্যালয়। কুমিল্লার বিবির বাজারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘জাতীয় কবি নজরুল শিশু নিকেতন’ নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

মুরাদনগরের দৌলতপুরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ‘নজরুল মঞ্চ’। দৌলতপুরের ‘খাঁ’ বাড়িতে ঢোকার পথে স্থাপন করা হয়েছে ‘নজরুল তোরণ’। মুরাদনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের নামকরণ করা হয়েছে ‘কবি নজরুল মিলনায়তন’। ১৯৬২ সালে কুমিল্লার সে সময়ের জেলা প্রশাসক কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ নজরুল স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য শহরের ফরিদা বিদ্যায়তনের সামনের সড়কটি ‘নজরুল অ্যাভেনিউ’ নামকরণ করেন। ১৯৭০ সালে কুমিল্লায় সাহিত্য চর্চার মানসে গঠিত হয় ‘নজরুল ললিতা কলা পরিষদ’। যা পরবর্তীতে ‘নজরুল পরিষদ’ নামে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭২ সালে ‘নজরুল স্মৃতি পরিষদ’ গঠিত হয়। এ পরিষদ নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সমূহে স্মৃতি ফলক নির্মাণ করে। ১৯৯২ সালে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমির সামনে শিল্পী উত্তম গুহের তৈরি ‘চেতনায় নজরুল’ শীর্ষক একটি স্মৃতি সৌধ নির্মিত হয়। সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলাকে ভাগ করে নতুন উপজেলা করার সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন উপজেলা ‘কবি নজরুল’ উপজেলা নামকরণের দাবি উঠেছে। ধর্মসাগরের উত্তর পাড়ে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্র।

নজরুল গবেষক ড.আলী হোসেন চৌধুরী বলেন, কুমিল্লার গুণীজনদের সঙ্গে নজরুলের সখ্যতা গড়ে উঠে। কুমিল্লায় তিনি প্রেমে -বিরহে, সংগ্রাম আর গ্রেফতারে হয়ে উঠেন বিদ্রোহের কবি নজরুল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top