সকল মেনু

সেভেন মার্ডার;শীতলক্ষ্যার এই পাড়ে সাত সাতটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়

 আছাদুজ্জামান,ঢাকা, ৩ মে : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের পর তাদের মৃতদেহ উদ্ধার হলেও খুনি চক্রের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায়নি এখনো। তদন্তেও নেই কোনো অগ্রগতি। বলা চলে এ বিষয়ে একরকম অন্ধকারেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত এ ঘটনায় বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানতে চাইলে, পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন স্পষ্টই বলেছেন, এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এজাহারে যাদের নাম আছে, আপাতত তাদেরই গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। এর বেশি কিছু তথ্য দিতে পারেননি পুলিশ সুপার। তবে এ বিষয়ে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজন অপহরণের ঘটনায় পুলিশের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, সে কমিটিরও বিশেষ কোনো অর্জন নেই এখনো। তবে এ বিষয়ে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেন, গঠিত তদন্ত কমিটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে।

নারায়ণগঞ্জের নতুন জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান বলেছেন, ‘সামগ্রিক ঘটনাপ্রবাহ বিবেচনায় আমরা নারায়ণগঞ্জে প্রশাসন ঢেলে সাজাচ্ছি। আশাবাদী, এসব বিষয়ের সবাই মিলে একটা কিনারা করতে পারব আমরা। তবে কিছুটা সময় লাগবে।’

উল্লেখ্য, গত রোববার (২৭ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার, শেখ রাসেল জাতীয় শিশুকিশোর পরিষদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সহসভাপতি তাজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ কর্মী মনিরুজ্জামান স্বপন ও লিটন, চন্দনের গাড়িচালক মো. ইব্রাহিম এবং নজরুলের গাড়িচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম অপহৃত হন। এর তিন দিন পর বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শান্তিনগর ও চর ধলেশ্বরীর বিভিন্ন পয়েন্টে হাত-পা বাঁধা ছয়টি লাশ ভেসে ওঠে। সেগুলো নজরুলসহ ছয়জনের লাশ হিসেবে শনাক্ত করা হয়। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে একই এলাকায় আরেকটি লাশ ভাসতে দেখা যায়। পুলিশ সেটি উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। সেখানে গিয়ে স্বজনরা শনাক্ত করেন এটিই নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের লাশ।

এদিকে চাঞ্চল্যকর এই সেভেন মার্ডারের পরপর আরো দুটি অপহরণের ঘটনা ঘটে। অপহৃত হন সাইফুল ইসলাম নামে একজন ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় থেকে অপহরণ করা হয়। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি উদ্ধার হন সাভারের নবীনগর থেকে। শুক্রবার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়, তৌহিদুর রহমান (৩৩) নামে একজন চাকরিজীবী নিখোঁজের ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। তৌহিদ ঢাকার মিরপুরে একটি বায়িং হাউসে চাকরি করেন। গত ২৯ এপ্রিল সকালে তিনি মিরপুরের কর্মস্থলের উদ্দেশে সিদ্ধিরগঞ্জের বাড়ি থেকে বের হন। এর পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মোবাইল ফোনটাও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের দাবি, তৌহিদুর রহমানকে অপহরণ করা হয়েছে।

এসব ঘটনায় নারায়ণগঞ্জবাসী উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন এমনকি সরকারের ওপরও। তারা প্রতিবাদে রাস্তায় নামছেন। রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জেলা আইনজীবী সমিতি। সামগ্রিক ঘটনাপ্রবাহ বিচেনায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে এখানকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top