সকল মেনু

ভোলার মনপুরায় ১০ সহস্রাধিক জেলে বেকার;নেই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা

 এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: নদ-নদী ও সাগর মোহনায় মার্চ ও এপ্রিল ২ মাস অভায়াশ্রমগুলোতে জাটকাসহ সব ধরনের ডিমওয়ালা মাছ ধরা সরকারীভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে মশারী, বেহুন্দী ও কারেন্ট জালের ব্যবহার। ফলে ভোলা জেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার হাজার হাজার জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সরকার এসব প্রান্তিক জেলের কথা চিন্তা করে উপকূলীয় এলাকায় খাদ্য সহায়তা বাবদ অর্থ বরাদ্দ দিয়ে আসছে যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সময় মত এসব অর্থ না আসায় প্রান্তিক জেলেদের কোন কাজে আসছেনা।
মনপুরা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে মার্চ মাস হতে জুন পর্যন্ত (৪ মাস) খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাবে। জেলেদের খাদ্য সহায়তার জন্য ৪টি ইউনিয়নের সর্বমোট ৭ হাজার ৪শ’ ৭৪ জন জেলে। কার্ড পাওয়া জেলেদের মধ্যে মাত্র ৪ হাজার ৫শ’ ৯৪ জন জেলে পরিবার এ সুবিধা পাবেন। অবশিষ্ট ২ হাজার ৮শ’ ৮০ জন জেলে পরিবার এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বঞ্চিত কার্ড ধারী জেলেদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি জেলে কার্ড অনুযায়ী প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে ভি.জি.এফ চাউল পাবে। যা একটি জেলে পরিবার কয়েক দিন ভাল ভাবে খেতে পারবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ১২ হাজার জেলে রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৭ হাজার ৪শ’ ৭৪ জন জেলে নিবন্ধিত হয়েছেন। এলাকায় জেলেদের কার্ড করার সময় অধিকাংশ জেলে কাজের খোজে এলাকার বাহিরে কর্মরত ছিলেন। আবার অনেক জেলের বয়স কম হওয়ার কারণে তাদের কার্ড করা হয়নি।
কার্ড ধারী জেলেরা আক্ষেপ করে বলেন, প্রতিদিন পরিশ্রম করে তারা ১শ’ ৫০ থেকে ২শ’ টাকা রোজগার করেন। অথচ সরকার খাদ্য সহায়তার নামে মাত্র প্রতিদিন সোয়া ১ কেজি চাউল দেয়। সেই সহায়তা তাদের তেমন কোন কাজে আসছেনা। জেলেদের অভিযোগ, সরকার মেঘনায় মাছ ধরা বন্ধের নামে লাখ লাখ টাকার জাল আগুনে পুড়ে ফেলে এবং মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে অভাব অনটনের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে জেলেদের। অন্য কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। দায় দেনার বোঝা দিন দিন বাড়ছে তাদের।
খাদ্য সহায়তার ব্যাপারে মোছলেহ উদ্দিন, মাইনুদ্দিন, জাহাঙ্গীর, জসিম মাঝি বলেন, প্রতি বছর বরাদ্দকৃত অর্থ নিদিষ্ট সংখ্যক প্রান্তিক জেলে পরিবারকে পর্যাপ্ত অর্থ দিয়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের (ভ্যান, রিকসা, ঠেলাগাড়ী, সেলাইমেশিন) ব্যবস্থা করে দিতে পারলে জেলেরা উপকৃত হবে। ধীরে ধীরে খন্ডকালীন কর্মসংস্থান পদ্ধতিতে জেলের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। যা উপকূলীয় এলাকায় নদ-নদীতে মৎস্য বৃদ্ধিতে ইতি বাচক ভুমিকা রাখবে বলে তারা মনে করেন।
এ ব্যাপারে মনপুরা উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ আবুল বাসার বলেন, জেলেদের খাদ্য সহায়তার জন্য ৪ মাসে ৭শ’ ২০ মেট্রিক টন চাউল ৪টি ইউনিয়নে ৪ হাজার ৫শ’ ৯৪ জন জেলেদের মধ্যে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে বিতরণ করা হবে।
কার্ডধারী জেলে হওয়া সত্বেও সরকারী সুবিধা না পেয়ে বহু জেলে পরিবার বর্তমানে অভাব-অনটনের মাঝে দিনাতিপাত করছে। সরকারী সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে বঞ্চিত জেলেদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top