সকল মেনু

ব্যাংকিং খাতে এমডি সংকট

ঢাকা, ৩০ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : দক্ষ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সংকটে পড়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকজন এমডির অবসর গ্রহণ, দায়িত্ব ছেড়ে ব্যাংকিং পেশার বাইরে অবস্থান এবং নতুন নয়টি ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই নিয়ে তথ্য ভিত্তিক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক বণিক বার্তা।

দৈনিক বণিক বার্তার তথ্য মতে, ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক দুই চেয়ারম্যান কে মাহমুদ সাত্তার ও মোহাম্মদ নুরুল আমিন বর্তমানে ব্যাংকিং পেশার বাইরে। চাকরির বয়স (৬৫ বছর) থাকলেও তারা এখন পেশায় নেই। এবি ব্যাংকের এমডি ফজলুর রহমানও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গত বছরের শেষ দিকে হঠাৎ বিদায় নেন। নিয়াজ আহমেদ ন্যাশনাল ও খোন্দকার ফজলে রশীদ ঢাকা ব্যাংক ছেড়ে যাওয়ার পর তারাও ব্যাংকিং পেশার বাইরে। এছাড়া গত কয়েক মাসে অবসরে গেছেন আরো কয়েকজন এমডি।

ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অল্প সময়ের ব্যবধানে বেশ কয়েকজন এমডির অবসর গ্রহণ ও নতুন নয়টি ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করার কারণেই দক্ষ এমডির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে নতুন-পুরনো কয়েকটি ব্যাংকে এমডির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ব্যাংক ছেড়ে যাওয়া কয়েকজনকে ডেকে এনে এমডি বানানোর ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় দেশের ব্যাংকিং খাতে দক্ষ এমডি সংকটের বিষয়টি ফুটে ওঠে।
এ সংকটের বিষয়ে ইস্টার্ন ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মূলত নতুন অনেক ব্যাংক চালু হওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। তবে ব্যক্তিসংকটের চেয়ে দক্ষতা সংকটের বিষয়টি বেশি উঠে আসছে। খাতটিকে এগিয়ে নিতে আরো আত্মবিশ্বাসী ও ব্যাংকিং পেশায় অভিজ্ঞ এমডি প্রয়োজন।’

চলতি বছর দ্য সিটি ব্যাংকের এমডির পদ থেকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অব্যাহতি নেন কে মাহমুদ সাত্তার। ফজলুর রহমানও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এবি ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব ছেড়ে দেন। ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি নিয়াজ আহমেদের মেয়াদ শেষ হয়েছে এ বছর। বয়স থাকলেও তিনি এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাংকে যোগ দেননি। ন্যাশনাল ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, নিয়াজ আহমেদ চলে যাওয়ার পর উদ্যোক্তারা কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান এমডির সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কেউ এমডির দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। পরে ব্যাংকের এএমডি একেএম শফিকুর রহমানকে এমডির দায়িত্ব দেয় কর্তৃপক্ষ। যদিও ওই সময় এমডির চলতি দায়িত্বে ছিলেন এএমডি বদিউল আলম।

মেয়াদ শেষ হলে ঢাকা ব্যাংক ছেড়ে যান এমডি খোন্দকার ফজলে রশীদ। পরে ব্যাংকটির এএমডি নিয়াজ হাবিবকে এমডির (চলতি) দায়িত্ব দেয়া হয়। একইভাবে মেয়াদ শেষে এনসিসি ব্যাংক ছেড়ে গেছেন এমডি মোহাম্মদ নুরুল আমিন। পরে এএমডি গোলাম হাফিজ আহমেদকে ব্যাংকটির এমডির (চলতি) দায়িত্ব দেয়া হয়। জানা গেছে, চাকরির বয়স থাকলেও মোহাম্মদ নুরুল আমিন ও খোন্দকার ফজলে রশীদ কোনো ব্যাংকে যোগ দেননি।

ব্যাংকিং খাতে এমডি সংকট বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মোহাম্মদ এ (রুমী) আলী বলেন, অজ্ঞাত কারণে অনেকেই এখন ব্যাংকের বাইরে। কেউ কেউ অবসরে গেছেন। পাশাপাশি নতুন ব্যাংকগুলো কার্যক্রম শুরু করায় এ সংকট বেড়েছে। এমডি হলেন একটি ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তা। তার ওপর পুরো ব্যাংকের কার্যক্রম নির্ভর করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকে অনিয়ম ও অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ব্যাংকগুলোর এমডিদের অদক্ষতার বিষয়টি তুলে ধরে।

গত বছর দেশে একসঙ্গে যাত্রা করে নতুন নয়টি ব্যাংক। এর মধ্যে মেঘনা ব্যাংকে কায়জার এ চৌধুরী, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে দেওয়ান মুজিবুর রহমান, ইউনিয়ন ব্যাংকে আবদুল হামিদ মিয়া, মধুমতি ব্যাংকে মিজানুর রহমান ও মিডল্যান্ড ব্যাংকে শহীদুল হক এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এদের প্রত্যেকেরই অন্য ব্যাংকে এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর এনআরবি, এনআরবি গ্লোবাল, ফারমার্স ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকে এমডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে পদোন্নতি দিয়ে। এর আগে তারা অন্য ব্যাংকে এএমডি ও ডিএমডি পদে দায়িত্ব পালন করেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দক্ষ এমডি না পাওয়ার কারণেই এসব ব্যাংকে পদোন্নতি দিয়ে এমডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের এমডি পদে নিয়োগের জন্য ব্যাংকিং পেশায় ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। পাশাপাশি এমডির পূর্ববর্তী পদে কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। সংশোধিত নতুন আইনে ব্যাংকের প্রধান আর্থিক সূচক ক্যামেলসের উন্নতি না হলে প্রধান নির্বাহী পদে বার্ষিক বেতন বাড়ানো যাবে না। অভিযোগ রয়েছে, এসব শর্ত পূরণ না করেই সম্প্রতি অনেক ব্যাংকে নতুন এমডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

– সূত্র: বণিকবার্তা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top