সকল মেনু

৩১ মার্চ নির্বাচনে সহিংসতা হলে কঠোর কর্মসূচি : রিজভী

ঢাকা, ২৭ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, আগামী ৩১ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা, ভোট ডাকাতি এবং কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করা হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন।

রিজভী বলেন, স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধে জনগণের নেতৃত্বদানকারী জাতীয়তাবাদী শক্তি প্রধান ও শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা হিসেবে লড়াই করে যাচ্ছে। ঢালাও দমন-পীড়ণের মোকাবেলা করতে একমাত্র ধারালো অস্ত্র হচ্ছে সংগঠিত জনগণের সম্মিলিত বুলন্দ আওয়াজ।

তিনি বলেন, এই নিপিড়ক, ফ্যাসিস্ট অবৈধ সরকার যদি হত্যা, গুম না থামায় তাহলে গুপ্তঘাতক ও চক্রান্তকারিদের উচ্ছেদ করতে ঐতিহাসিক প্রতিশোধ গ্রহণ করবে জাতীয়তাবাদী শক্তি।

তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে কারচুপি ও শক্তি প্রয়োগের ক্রমোন্নতি ধাপে ধাপে চরম মাত্রা লাভ করে। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র দখলসহ সারাদেশে রক্তাক্ত ভোট ডাকাতি করে তারা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যানের অধিকাংশ পদগুলো ছিনিয়ে নেয়।

রিজভী বলেন, উপজেলা নির্বাচন এবং সহিংসতা এখন সার্বক্ষণিক সঙ্গী। ফলাফল ছিনিয়ে নিতে তারা বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যা, অমানবিক হয়রানি এবং নির্বিচারে গ্রেফতার করে কারাগার ভরে ফেলেছে।

তিনি বলেন, প্রথম দফা উপজেলা নির্বাচনে এরা ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপি সমর্থিত এজেন্টদের বের করে দিয়ে ব্যালট পেপারে সিল মারা, ব্যালট বাক্স পুড়িয়ে ফেলা, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ দেদারসে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যায়।

রিজভী আহমেদ বলেন, প্রতি দফায় তাদের সহিংস তৎপরতা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পায়। ভয়ংকর দুঃশাসনে জনগণ চরমভাবে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ায় সরকারি দল উপজেলা নির্বাচনে জনগণকেই শত্রু হিসেবে বিবেচনা করছে। সুতরাং প্রতি দফায় সর্বান্তকরণে সহিংস সন্ত্রাসের দ্বারা যে চেষ্টাটি তারা চালিয়েছে সেটি হচ্ছে-ভোটারদের মনে ভোটকেন্দ্রে আসতে এক ধরনের ভীতির সৃষ্টি করা।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার পথে সবসময় কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছে। এরা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়নি, বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেয়া আইনি ক্ষমতাকে তারা নিজেদের ইচ্ছামত ব্যবহার করে। ফলে আওয়ামী লীগ রক্তারক্তি, হত্যা, সন্ত্রাস ও ভোট ডাকাতিতে আগ্রহী একটি দল বলে জনগণের কাছে প্রমাণিত।

রিজভী বলেন, দেশের জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন। সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত হয়ে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ট ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন মুখে তর্জন-গর্জন করলেও বাস্তবে ভোট ডাকাতি ঠেকাতে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারি প্রার্থীর পক্ষে পক্ষপাতিত্ব না করতে প্রশাসন যন্ত্রকে নিরপেক্ষ রাখতে পারেনি। বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের নির্বাচনী কেন্দ্রের বুথে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। ব্যালট বাক্সে জালভোট ভরা বন্ধ করতে পারেনি। ব্যালট বাক্স ছিনতাই করা বন্ধ করতে পারেনি। সন্ত্রাসীদের কর্তৃক ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে আধিপত্য বজায়ের বিরুদ্ধে কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

যুগ্ম মহাসচিব বলেন, মূলত ভোটদাতারা যাতে তাদের ইচ্ছা মতো ভোট দিতে পারেন সেই গ্যারান্টি নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করতে পারেনি।

তিনি বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে অবৈধ সরকারের সমর্থিত প্রার্থীর সন্ত্রাসী কর্মীদের হিং¯্ররূপ ভয়ংকরভাবে নগ্ন হওয়ার পরও বিএনপি তাদের চেয়ে এগিয়ে থাকায় সরকার তাল হারিয়ে ফেলেছে। তাই পরবর্তী দফাগুলোতে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতি ও বহুরৈখিক সন্ত্রাস ও সহিংসতা আড়াল করতেই অবৈধ সরকারের উপদেষ্টা ও মন্ত্রীরা একঘেঁয়ে, ক্লান্তিকর, বস্তাপচা কুৎসা, নির্জলা মিথ্যা ও জঘন্য বিকৃতিমূলক বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে।

এডবোকেট রিজভী বলেন, এই সরকার নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন করেছে। এরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, নাগরিক সমাজসহ সব মত ও পথের লোকের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারকে প্রচ- আক্রমণে বিধ্বস্ত করেছে।

তিনি বলেন, নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে তারা জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতা বিএনপি চেয়ারপানসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে চরমভাবে হয়রানি করছে।

রিজভী বলেন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই বিএনপি চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ১২ শতাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় রানা প্লাজার মালিক জামিন পায় কিন্তু বিরোধী মতের একটি প্রতিষ্ঠিত জাতীয় দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান জামিন পান না।

তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরে তিনি কারাগারে নির্যাতন সইছেন। শুধুমাত্র সরকারের সমালোচনা করার কারণে মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দী  করে রাখা হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস এবং ঢাকা মহানগরী বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুস সালামকে।

রিজভী বলেন, গ্রেফতার অভিযানের অব্যাহত ধারায় গত পরশু দিন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী এবং তার পুত্র ব্যারিস্টার রিজবাউল আহসান মুন্সীসহ ২৬ জন নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বুলি আউড়িয়ে এরা মূলত জনগণের কাছে বিভ্রান্তি ছড়ায়।

রিজভী বলেন, যাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সন্ত্রাস, গুম, খুন ও আধিপত্য বিস্তারনির্ভর তারা কখনোই স্বাধীন সার্বভৌম দেশ চায় না। স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় শহীদ মিনারে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে গেলে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর পুলিশের সামনেই আওয়ামী দুষ্কৃতকারীরা বোমা ছুঁড়ে ছাত্রদল নেতা সুজনকে হত্যা করে এবং অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করে।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করেই জনগণের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ কাজে লিপ্ত হয় শাসকদল। জনসমর্থনহীন ও ভোটারবিহীন ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এদের এখন ক্ষমতার ভিত্তি হচ্ছে বন্দুক। এরা এখন দস্যুবৃত্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top