সকল মেনু

এরশাদের পথে খালেদা!

সিলেট, ১৫ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই শুধু মত পাল্টান তা নয়। এবার তার দেখানো পথে হাঁটলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও! চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে দলীয় একক প্রার্থী দেয়া নিয়ে ভিন্ন সময় ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ায় এমন চরিত্রই ফুটে উঠেছে।

বিশেষ করে সিলেটে গোলাপগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ও সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের বহিষ্কার ও প্রত্যাহারের ঘটনা লক্ষণীয়।

দলীয় একটি নির্ভযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনেই অনেক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরে দলের স্থানীয় নেতারা একক প্রার্থী নির্ধারণ করতে না পারলে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হন। এমনকি ইতিমধ্যে কেন্দ্রও একক প্রার্থী নির্ধারণে ব্যর্থ হতে দেখা গেছে। পরে বাধ্য হয়ে খালেদার নির্দেশে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কার করলেও পরবর্তীতে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের ঘটনাও ঘটছে। এমতবস্থায় কেন্দ্রের পাশাপাশি স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন। আর এতে করে দলীয় কমান্ডের প্রতিও নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা উঠে যাচ্ছে বলে তৃণমূল নেতাদের মত।

সূত্র জানায়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফা উপজেলা নির্বাচনে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির তিন নেতাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্র। কিন্তু নির্বাচনের ২০ ঘণ্টা আগেই তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় তৃতীয় ও চতুর্থ দফা নির্বাচনেও সিলেট সদর এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ১৯ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত নেতা ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান লোকমান আহমদকে জোটের পক্ষ থেকে সমর্থন দেয়া হয়। কিন্তু ওই উপজেলায় সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমদ ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি এটিএম ফয়েজ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এমনকি তাদেরকে বারবার কেন্দ্র থেকে অনুরোধ করা হলেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি। এমতাবস্থায় খালেদার নির্দেশেই বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার রাতে খালেদাই তারেক রহমানের পরামর্শে আলী আহমদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেন বলে সূত্র জানায়। তবে অপর প্রার্থী এটিএম ফয়েজের বহিষ্কার বহাল রয়েছে।

এদিকে সিলেট সদর উপজেলায় বিএনপির একক প্রার্থী নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেক নাটকীয়তা ঘটে। পরে স্বয়ং খালেদা জিয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবুল কাহের শামীমকে প্রার্থী ঘোষণা করলে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহ জামাল নুরুল হুদা। তাই তাকেও বাহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তিনি দাবি করছেন কেন্দ্র থেকে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সূত্র মতে, দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার কারণে গত মঙ্গলবার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমদ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এটিএম ফয়েজ ও সিলেট সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহ জামাল নুরুল হুদাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে গত বুধবার রাতে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থনের দাবিতে শতাধিক নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে এক ঘণ্টার বেশি সময় অবস্থান করে। তারপর বৃহস্পতিবার আলী ও হুদার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আলী আহমদ  বলেন, ‘মানুষের কাছে জামায়াতের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। নির্বাচনে প্রার্থী চাপিয়ে দেয়ারও দিন শেষ। জামায়াতের প্রার্থীকে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমাকে ম্যাডাম প্রথমে দল থেকে বহিষ্কার করলেও গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তা প্রত্যাহার করেছেন।’ তবে এর কোনো প্রমাণ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি উত্তর না দিয়েই মোবাইল ফোন কেটে দেন।

লন্ডন বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান তাকের রহমান অনেকদিন থেকে ইংল্যান্ডে অবস্থান করায় সিলেট বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কারণ সিলেট বিএনপির অধিকাংশ নেতাই প্রবাসে বসবাস করেন। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন এলে তাদেরকে সিলেটে অবস্থান করতে দেখা যায়। এছাড়াও তারেক রহমানের শশুরবাড়ি সিলেটে হওয়ায় স্থানী বিএনপির কিছু নেতাকর্মী তার ‘ঘনিষ্টজন’ হয়ে উঠেছেন। এমতাবস্থায় তারেক রহমান খালেদার আদেশ অমান্য করে ‘ঘনিষ্টজন’দের পক্ষে অবস্থান নেন। এতে করে বেগম জিয়াসহ হাইকমান্ডের নেতারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এমনকি দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্য থেকেই অনেকেই খালেদা-তারেককে এরশাদের সঙ্গে তুলনা করছেন বলে সূত্র জানায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘গোলাপগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ও সদর উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির একক প্রার্থী ঘোষণা করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এতে করে দলের ভাবমুর্তি বজার রাখা দূরের কথা ভোটারা আমাদের দলকে জার্তীয় পার্টির সাথে তুলনা করছে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top