সকল মেনু

নীলফামারীসহ রংপুর বিভাগে দিগন্ত জোড়া বোরোর ক্ষেত

মো. আমিররুজ্জামান, নীলফামারী ১৪ মার্চ:  বিদ্যুৎ, ডিজেল, ইউনিয়া সহ সেচ কাজের সকল সুযোগ সুবিধায় দিগন্ত জোড়া ইরি-রোরো ফসলের মাঠগুলোতে এখন চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ ভরে উঠেছে। লকলক করে বেড়ে উঠছে বোরোর চারা। মাঠের পর মাঠ যতদুর চোখ যায় শুধুই শ্যামলবাংলার সবুজে সবুজে ছেয়ে গেছে বোরো ক্ষেত। ফাগুন -বসন্তের ছোঁয়ায় বোরো চারা রোপন শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এখন চলছে ক্ষেতের পরিচর্যা। যাকে আগাছা নিড়ানী বলা হয়। আঞ্চলিক ভাষায় অনেকে বলেন ইরি বোরো চাষাবাদ এই অঞ্চলের আদুরি ফসল।  তবে আগের মতো চৈতালি আবাদের নিড়ানী নয়। পানি ভরা বোরো মাঠে আগাছা তোলা বক্ষা ধান গাছের আশপাশের মাটি মাড়ানোর কাজ। মজার ব্যাপার হচেছ বোরো ধানের গাছের চতুর্দিক যত বেশী মাড়ানো বা ছানা ছানি (ম্যাকথানি) করা যায় তত বেশি ধান গাছের থোর মোটা হয় এবং বড় শীষ ধারনে সক্ষম হয় ধান গাছ। আর এ কাজে  পুরুষের চেয়ে নারী কৃষি শ্রমিকরা সব থেকে ব্যস্ত সময় পার করছে।
তিস্তা ব্যারাজের সেচের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে  রংপুর বিভাগের আট জেলায় বোরো আবাদ হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নীলফামারীর অফিস সুত্রে জানা গেছে, এবার বোরো মৌসুমে আট জেলায় ৭ লাখ ৭০ হাজার ২ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে হাইব্রিড ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৩৫ হেক্টরে, উফসী ৬ লাখ  ১২৭ হেক্টরে, ও স্থানীয় ৩ হাজার ৪০ হেক্টরে। জেলা পর্যায়ের আবাদ হয়েছে নীলফামারী জেলায় ৭৯হাজার ৪৪৩ হেক্টরে ,রংপুর জেলায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬৮  হেক্টরে, গাইবান্ধা জেলায় ১ লাখ ২৫ হাজার ৩২৫ হেক্টরে, কুড়িগ্রাম জেলায় ১ লাখ ৫ হাজার ৯৭৬  হেক্টরে, লালমনিরহাট জেলায় ৫৩ হাজার ৬শত হেক্টরে, দিনাজপুর জেলায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮৯ হেক্টরে, পঞ্চগড় জেলায় ৩৩ হাজার ৮৩২  হেক্টরে ও ঠাকুরগাঁও জেলায় ৬২ হাজার ৫৬৯ হেক্টরে।
তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাঈনুদ্দিন মন্ডল জানান, তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে  প্রথম ভাগে নীলফামারী, দিনাজপুর ও রংপুর জেলায় ৬০ হাজার ৫শত হেক্টরে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে নীলফামারী জেলায় ৩৩ হাজার হেক্টরে, দিনাজপুর জেলায় ৬ হাজার হেক্টরে ও রংপুর জেলায় ২১ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে।
তিস্তা সেচের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বা ডিজেল চালিত ও বরেন্দ্র প্রকল্পের সেচযন্ত্রের মাধ্যমে বোরো ক্ষেতে সেচ প্রদান করছে। এতে  বিদ্যুৎ, ডিজেল ও পা-চালিত সেচ যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে মোট ৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৬১টি। এর মধ্যে ডিজেল চালিত গভীর নলকূপ রয়েছে ১৪৯টি, অগভীর নলকূপ ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭০৪টি, পাওয়ার পা¤প ৮৪৩টি ও বিদ্যুত চালিত ৫৬ হাজার ৩৮২টি সেচযন্ত্র এবং ২৭ হাজার ৬৮৩টি পা-চালিত সেচ যন্ত্র। কৃষি বিভাগ সুত্র মতে, বোরোর চারা রোপন কার্য  মাঘ মাসেই শেষ হয়েছে। আগামী  বৈশাখের শেষের দিক থেকে ২৮ জাতের ধান কাটার ধুম পড়ে যাবে।
নীলফামারীর বোরো চাষী আক্কাস আলী বললেন, তিনি তিস্তা ব্যারাজের সেচের মাধ্যমে তিনি ৯ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। নিয়মিত সেচ পাচ্ছেন না। অপরদিকে বিদ্যুৎ চালিত সেচ যন্ত্র দিয়ে ৬ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন জলঢাকার মাইনুদ্দিন। তিনি বললেন এবার বিদ্যুতের কোন লোডশেডিং মাত্রা ছাড়িয়ে যায়নি। ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্র দিয়ে ১২ বিঘা জমিতে বোরো আবাদকারী কৃষক কিশোরীগঞ্জের আলম হোসেন জানান, বোরো আবাদে কোন সংকটের কবলে তাকে পড়তে হয়নি। নীলফামারীর ইটাখোলা গ্রামের বোরো চাষী রইসউদ্দিন বললেন, এবার আবহাওয়া অত্যন্ত অনুকুলে। জমিতে প্রচুর রস রয়েছে। এবার চড়া দিন পড়েনি। ফলে সেচ লাগছে কম। পাশাপাশি তিনি জানালেন ইউনিয়া সারের কোন ঘাটতিতে তাকে পড়তে হয়নি। ফলে তিনি এবার বোরো বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
ডোমারের বোরো চাষী ফিরোজ আলী বললেন, বোরো  আবাদে পানি থেকে শুরু করে সব উপাদানেরই যোগান দিতে হয় কৃষকদের টাকার বিনিময়ে। মাঝারী কৃষকের কাছে পানি সরবরাহকারী মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা প্রতি বিঘায় দেড় হাজার টাকা আগাম নিয়ে পানি সরবরাহ করছে এবার। ১ বিঘা জমিতে এলাকা ভেদে কোথাও ৩ কোথাও ৪ বার পানি দিচ্ছে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা। ডোমারের মধ্যবিত্ত কৃষক কমল জানালেন, এবারে ১ বিঘা ইরি, বোরো ধান আবাদে খরচের পরিমান কাটা মাড়া পর্যন্ত দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা। এরপরেও ধান আবাদে কোন লোকসান নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top