সকল মেনু

রাবি কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে ফেসবুক!

রাজশাহী, ৭ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : জাকির হোসেন তমাল, রাবি: জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নজরদারি করবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই নজরদারির আওতায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক, একাধিক শিক্ষক। এছাড়াও রয়েছে বর্ধিত ফি ও সান্ধ্যকোর্স বিরোধী আন্দোলনকারীদের ফেসবুক আইডি ও বিভিন্ন পেজ। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)-এর মাধ্যমে এই নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের এক কর্তাব্যক্তি।

এর বৈধতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন বিশ্বজিৎ চন্দ্র বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি বিষয়ক আইনটি প্রথম পাস হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দেশের বা কোনো প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে আঘাত করে যদি কোনো ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য প্রচার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ফেসবুক আইডি বা পেজ গোয়েন্দা নজরদারিতে আনা যেতে পারে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের কারণে যদি কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ফেসবুক নজরদারিতে আনতে চায় তাহলে এটা যৌক্তিক বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে।

জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্যকোর্স বাতিলের দাবিতে এই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম, মেইল ও মুঠোফোনে খুদেবার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে কিছু উস্কানিদাতা ছাত্র আন্দোলনের নামে ক্যাম্পাসে অরাজকতা চালিয়েছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলে আসছেন। এ বিষয়ে গত ১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকেও একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিনও দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে কিছু মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে একটি মহল ক্যাম্পাসকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল। সে কারণে গত ২ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে ভাঙচুর চালিয়েছে কিছু সন্ত্রাসী।

একাধিক গোয়েন্দা ও প্রশাসন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি ছাত্র আন্দোলনে হামলার পর বেশ কিছু সাংবাদিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও একাধিক ফেসবুক পেজকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে দুই শতাধিক ফেসবুক এখন তাদের নজরদারিতে রয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।

কিভাবে এই নজরদারি করা যায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সেন্টারের প্রোগ্রামার মুহম্মদ আব্দুল্লাহ ফারুক বলেন, যদি কেউ ফেসবুককে গোয়েন্দা নজরদারিতে আনতে চায় সে ক্ষেত্রে বিটিসিএল-এর কাছে আবেদন করতে হয়। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ চাইলে এই নজরদারি করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, কোনো আইডি বা পেজ যদি নজরদারিতে আনা হয় তাহলে কোন কম্পিউটার বা কারা সেই পেজের এডমিন সে সম্পর্কে জানা যাবে। এছাড়াও কোথায় বসে সে ফেসবুক ব্যবহার করেছে সে বিষয়েও জানা যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন বলেন, ছাত্র আন্দোলনের নামে গত ২ ফেব্রুয়ারি অরাজকতা চালানো হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করেছি কতিপয় ব্যক্তি ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট ও উস্কানিমূলক তথ্য ও বক্তব্য প্রচারের দ্বারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করেছে। এর মধ্য দিয়ে একটি বিশেষ মহল হীন অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তাই আমরা বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেজ বিটিসিএলের মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা করেছি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মৃপক্ষের এই নজরদারিকে সমালোচনা করেছেন অনেকে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হীনমন্যতা পরিচয় বলেও দাবি করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক সুষ্মিতা চক্রবর্তী জানান, যদি কেউ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যক্তি মত প্রকাশ করে থাকে এটা দোষের কিছু নয়। বরং এটাই গণতন্ত্র। যারা এই স্বাধীনতাকে হরণ করতে অন্য কোনো পন্থায় কাজ করে থাকে এটা শক্তির জোরে হতে পারে, নৈতিকতার জোরে নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ব্যক্তি স্বাধীনতা মানে এই নয় যে কারো সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা। আমরা তথ্য অধিকার আইনকে সামনে এনেই কিছু ফেসকুক আইডি গোয়েন্দা নজরদারিতে এনেছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top