সকল মেনু

জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে ভোগান্তি বাড়ছেই

ঢাকা, ৫ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগে গ্রাহকদের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছেই। হারানো পরিচয়পত্র উত্তোলন, ভুল সংশোধন এবং ঠিকানা পরিবর্তনের প্রয়োজনে এই বিভাগে গিয়ে প্রতিদিন চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকজনকে।

আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অবস্থিত নির্বাচন কমিশনের এ প্রকল্পে সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্নভাবে গ্রাহকদের এ ভোগান্তি দেখা যায়।

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন বিভাগে গ্রাহকরা প্রতিটি ধাপে ভোগান্তিতে পড়ছেন। প্রথমে প্রকল্প ভবনের নিচতলায় লাইন ধরে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হয়। অনেক সময় এখানে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও প্রয়োজন অনুযায়ী ফরম পাওয়া যায় না। তাই বের হয়ে বাহির থেকে ফটোকপি সংগ্রহ করতে হয়। যদিও সব ধরনের ফরম প্রকল্পের পক্ষ থেকে দেয়ার কথা।

এরপর উপরে উঠার জন্য দাঁড়াতে হয় লিফটের লাইনে। কারণ, মূল কাজ হয় ভবনের সপ্তম তলায়। এ ভবনের দুটি লিফটের প্রতিটিতে ছয় জনের বেশি উঠা যায় না। তারমধ্যে একটি ভবনের এবং প্রকল্প কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত। এব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্পের এক কর্মকর্তা জানান, আমরা ইসলামিক ফানউন্ডেশন থেকে ভবনের দুটি ফ্লোর ভাড়া নিয়েছি। এই ভবন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রয়োজনে তৈরি হয়েছে। তাই আমাদের অতিরিক্ত লোকজন বহনের মতো লিফটের ব্যবস্থা নেই। লিফটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি ময়মনসিংহ নেত্রকোনা থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, ভাই অনেক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে উপরে উঠেছি। কিন্ত একটি স্লিপের জন্য আবার নামতে হয়েছে। এখন আবার লাইনে দাঁড়িয়েছি।

লিফট থেকে নামার পর আবারো ভোগান্তি। এখানে প্রয়োজনীয় ফরম ও কাগজপত্র নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হয়। এই লাইনটি সবচেয়ে দীর্ঘ। কারণ, এখানে কাগজপত্রগুলো সঠিক কিনা যাচাই করা হয় এবং কোন কোন এলাকার গ্রাহকদের ফরম গ্রহণ হবে তা দেখা হয়। ফরমের যাবতীয় বিষয় দেখে মাত্র একজন কর্মকর্তা গ্রাহকদের ছাড় দেন। গ্রাহকের সংখ্যা অনুযায়ী যা একজন কর্মকর্তার জন্য খুবই কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

রংপুর থেকে আসা রাফিয়া জানান, আমি আমার বাচ্চা নিয়ে এসেছি। নামের বানান ঠিক করব। প্রথমে একবার লাইনে দাঁড়িয়ে এ পর্যন্ত আসলেও আবার লাইন। এখন বলছে কালকে আসতে হবে। রাতে আত্মীয়ের বাসায় বাচ্চা নিয়ে থাকা একটি বিড়ম্বনা। তবুও কাজটির জন্য আসতে হবে। যদি লাইনের ঝামেলা কম হয় তাহলে একটু শান্তি পাই।

এই লাইনের ঝামেলা মিটানোর পর গ্রাহকদের যেতে হয় পরবর্তী কর্মকর্তার কাছে। সংশোধন বা ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য  ফরমের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে কিনা। যদি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো প্রয়োজন হয়, তাহলে তিনি তা শুনানির জন্য অন্য কর্মকর্তার কাছে পাঠান। পূর্ব দিকনির্দেশনা না থাকায় বা গ্রাহকদের ভুলের কারণে এ পর্যায় থেকে আবার বের হয়ে যেতে হয় অনেক সময়।

কাগজপত্র অনুযায়ী শুনানিতে গ্রাহকের তথ্য সঠিক হলে গ্রাহককে তারা কাগজপত্রসহ একটি কার্ড গ্রহণ স্লিপ দিয়ে থাকেন। এই দীর্ঘ লাইনে নারী-পুরুষ আলাদা লাইন না থাকায় বিপাকে পড়তে হয় নারী গ্রাহকেরা। কারো কারো সঙ্গে বাচ্চা থাকায় বেশী হয়রানির মুখে পড়তে হয়।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নিবন্ধ অনুবিভাগের উপ পরিচালক মিছবাহ উদ্দিন আহমদ শীর্ষ নিউজকে বলেন, আমরা উপরে-নিচে দুটি লাইন করে গ্রাহকদের কাজ সহজ করার চেষ্টা করছি। আমাদের লোকবল কম থাকায় কাজটি সহজে হচ্ছে না। এইভাবে যদি গ্রাহকদের হয়রানি বন্ধ না হয় তাহলে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা করব। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আরও কিছু জনবল চেয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করছি শীঘ্রই সমাধান হবে।

বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজের সঙ্গে কথা বললে তিনি শীর্ষ নিউজকে বলেন, প্রকল্পটি নির্বাচন কমিশনের জন্য নির্ধারিত ভবনে চলে আসবে। এই ভবনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ভবনটির কাজ শেষ হলে প্রকল্পের কাজ এখানে হবে।

দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে গ্রাহকেরা হয়রানি হয়। এ থেকে মুক্তির জন্য অঞ্চল বা জেলা ভিত্তিক কাজ করার কোন পরিকল্পনা কমিশনের আছে কিনা জানতে চাইলে শাহ নেওয়াজ বলেন, এই কাজটি সহজ করার জন্য আমরা চিন্তা করছি। কিন্তু একটি প্রকল্পের সাময়িক কাজের জন্য এত লোকবল নিয়োগ দেয়া অনেক কঠিন কাজ।

ভোটার হওয়ার পর প্রত্যেক নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে নির্বাচন কমিশন। এই কাজের পর গ্রাহকেরা তাদের কার্ডে নানা রকম ভুল দেখতে পান। অনেকে তাদের স্বাক্ষর, ছবি ও ঠিকানা পরিবর্তন করেন। এছাড়া হারানো কার্ড উত্তোলনে এ প্রকল্পের দ্বারস্থ হন। তখনই তারা বুঝতে পারে যে, কাজটি আসলে তত সহজ নয়। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের গ্রাহকেরা এই সমস্যায় পড়েন। শহরের জায়গা চেনা, গাড়ীর রুট চেনা। সর্বশেষ কার্ড পেতে দুই একদিন দেরি হলে শহরে থাকা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। তবে সবমিলিয়ে প্রকল্পের হয়রানির একটা সমাধান হলে গ্রাহকেরা স্বস্তির নি:শ্বাস পেলতে পারেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top