সকল মেনু

বিজ্ঞাপন দেখে ধোঁকা খাবেন না, প্রথমে বুঝে নিন

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক, ঢাকা, ২ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) :  লেখার শিরোনাম পড়ার পর অনেকেই অবাক হতে পারেন কিন্তু এটা সত্যি যে একটি প্রোডাক্ট যখন আপনি কিনছেন তখন এর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনাকে বা ভোক্তাদেরকে টেকনিক্যালি মিসলিডিং না করা হলেও এই প্রোডাক্টটির (ডিভাইস) বিজ্ঞাপনে এর হার্ডওয়্যার নিয়ে অনেক সময়ই ভূল তথ্য অথবা মিসলিডিং করা হয়ে থাকে। অবাক হচ্ছেন? প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক, ‘কীভাবে?’ চলুন, জেনে নেয়া যাক।

স্টোরেজ স্পেসঃ

বিভিন্ন রকমের ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারাররা তাদের ডিভাইসে বিজ্ঞাপনে ‘৬৪ গিগাবাইট সার্ফেস প্রো’ অথবা ‘১৬ গিগাবাইট গ্যালাক্সি এস ৪’ ইত্যাদি কথা ব্যবহার করে থাকে। একজন সাধারণ ব্যবহারকারী এই বিজ্ঞাপন দেখার পর স্বাভাবিক ভাবে ভাবতেই পারেন যে তারা এই ডিভাইসগুলো ক্রয় করার পর এতে বিজ্ঞাপনে বলা ‘স্টোরেজ স্পেস’ই পাবেন বা কিছুটা হলেও কম হতে পারে। আমি আমার প্রতিটি লেখায় সাধারণ ব্যবহারকারীদের কথা বলি কেননা প্রযুক্তি নিয়ে থাকতে, প্রযুক্তি পণ্য সবাই ব্যবহার করতে ভালোবাসলেও সবাই টেক গিকতো আর নয়। যাই হোক, সাধারণ ব্যবহারকারীদের এই ‘বিজ্ঞাপন চিত্রে যেমন আছে ঠিক তেমনই পাওয়া যাবে’ – ভাবনাটা সবসময় সঠিক হয়না। মাইক্রোসফটের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বিজ্ঞাপনে বলা ‘৬৪ গিগাবাইট সার্ফেস প্রো’-তে ব্যবহারকারীর ব্যবহার করার জন্য আভ্যেইল্যাবল জায়গা থাকে মাত্র ২৮ গিগাবাইট! এবং ’১৬ গিগাবাইট গ্যালাক্সি এস ৪’ শুধুমাত্র ৮ গিগাবাইটের মত খালি স্পেস (জায়গা) দিয়ে থাকে।

হার্ডওয়্যার ম্যানুফাকচারার প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ডিভাইসের বিজ্ঞাপনে ডিভাইসের মাঝে যতটুকু ‘স্টোরেজ হার্ডওয়্যার’ ব্যবহার করা হয়েছে তা উল্লেখ করে থাকে, কতটুকু ব্যবহারযোগ্য তা নয়। কিন্তু, যেহেতু আমরা সবাই টেকি গিক নই তাই আমাদের মাঝে অনেকেই এই ভ্রান্ত ধারণা পোষন করে থাকেন যে বিজ্ঞাপনে বলা স্টোরেজ স্পেস প্রায় পুরোটাই ব্যবহার করা যাবে। উইন্ডোজ ট্যাবলেট এবং স্যামসাং-এর গ্যালাক্সি এস ৪-এ বেশির ভাগ স্টোরেজ ব্যবহার করা হয় অপারেটিং সিস্টেম এবং অন্যান্য প্রি-ইন্সটল্ড অ্যাপলিকেশন সমূহের জন্য। তবে, এই একই বিষয়টি কিছু ক্ষেত্রে কনফিউশনের বিষয় হতে পারে। যেমন, অ্যাপলের ৬৪ গিগাবাইট আইপ্যাড ৫৭ গিগাবাইটের মত ফ্রি স্টোরেজ প্রোভাইড করে থাকে যা ব্যবহারকারীরা ব্যবহার করতে পারেন। এটা পারফেক্ট না হলেও সার্ফেস প্রো বা সমজাতীয় ডিভাইসগুলোর চেয়ে অনেক বেশিই।

যেন সকল প্রকার ব্যবহারকারী সহজেই বুঝতে পারে এজন্য সঠিক বিজ্ঞাপন হওয়া উচিৎ ’২৮ গিগাবাইট সার্ফেস প্রো’, ‘৮ গিগাবাইট গ্যালাক্সি এস ৪’ এবং ৫৭ গিগাবাইট আইপ্যাড।

১

হার্ড ড্রাইভ / হার্ড ডিস্কের স্টোরেজ স্পেসঃ

হার্ড ড্রাইভের ধারণ ক্ষমতা সম্পর্কেও অনেকেই কনফিউশনে পরতে পারেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, হার্ড ড্রাইভের ধারণ ক্ষমতা পরিমাপের ক্ষেত্রে মূলত এর ম্যানুফ্যাকচারার প্রতিষ্ঠান একটি ইউনিট বা একক ব্যবহার করে থাকে এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম অন্য একটি ইউনিট বা একক ব্যবহার করে বলেই এরকম হয়ে থাকে। সহজ ভাবে বোঝাতে চেষ্টা করছি, ধরুন – বিজ্ঞাপনে যদি একটি হার্ড ড্রাইভের ধারণ ক্ষমতা দেখানো হয় 500 GB তবে আপনি আপনার উইন্ডোজ অপারেটং সিস্টেমে চালিত কম্পিউটারে এটি’র ধারণ ক্ষমতা দেখতে পাবেন প্রায় 465 GB কাছাকাছি কোন একটি সংখ্যা। কেন? বলছি !!

হার্ডওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার এবং উইন্ডোজ – দু’পক্ষই ‘GB’ একক ব্যবহার করে থাকলেও ম্যানুফ্যাকচারার প্রতিষ্ঠান মূলত ব্যবহার করছে ‘gigabytes’ একক যেখানে উইন্ডোজ টেকনিক্যালি ব্যবহার করছে ‘gibibytes’ একক!

এক প্রকারের সমস্যাই বলা চলে, কি বলেন? এই বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত পোষন করা যায় এবং বলা যায় যে ম্যানুফ্যাকচারার প্রতিষ্ঠানই সঠিক পরিমাপ ব্যবহার করছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফলাফল যা দাঁড়াবে – আপনি যদি একটি 500 GB হার্ড ড্রাইভ কিনে উইন্ডোজ কম্পিউটারে ব্যবহার করে থাকেন তবে আপনি 465 GB এর মত জায়গা ব্যবহার করতে পারবেন।

আমি পরবর্তীতে, এই দু’পক্ষের মূল হিসেব নিকাশ নিয়েই একটি ব্লগ পোষ্ট লিখব, তখন আপনাদের কাছে এই বিষয়টি আরও বেশি স্পষ্ট হবে।

২

‘ওয়াই-ফাই রেডি’ ডিভাইসে মূলত ওয়াই-ফাই থাকেনা !

কিছু ব্লু-রে প্লেয়ার এবং স্মার্ট টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনে বলা হয়ে থাকে ‘ওয়াই-ফাই রেডি’! সাধারণ ব্যবহারকারীদের অনেকেই এরকম ভেবে থাকেন যে এই ডিভাইসগুলোর মাঝে ওয়াই-ফাই রেডি করাই আছে, আপনি শুধু কিনে বাসায় নিয়ে গিয়ে আপনার রাউটারের সাথে বা ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্ট করলেই হল! কিন্তু, কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক্সের ক্ষেত্রে আন্দাজ করে নয় বরং সঠিক ভাবে জেনেই একটি ডিভাইস কেনা উচিৎ।

‘ওয়াই-ফাই রেডি’ এর মানে হচ্ছে যে এই ডিভাইসটিতে একটি স্পেশাল ওয়াই-ফাই ডঙ্গল আপনি ব্যবহার করতে পারবেন যেটি আপনাকে বাজার থেকে আলাদা ভাবে কিনে এর সাহায্যে আপনার ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে ব্যবহার করতে হবে। এই ডিভাইসগুলোতে ইউএসবি পোর্ট থাকে যাতে আপনি ওয়াইফাই অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন – এই যা !

৩

মনিটরের বিজ্ঞাপনে অনেক সময় ‘ডিসপ্লে’ সাইজ ব্যবহার করা হয়নাঃ

এখনতো CRT মনিটর পাওয়া যায়না বললেই চলে! এলসিডি এবং এলইডি’র জামানা চলছে। তবে, আপনি যদি সিআরটি মনিটরের কোন বিজ্ঞাপন দেখে থাকেন তবে দেখবেন এর বিজ্ঞাপন কিছুটা অন্য আঙ্গিকে করা হত। ধরুন, আপনি মনে করতে পারেন যে একটি ১৭ ইঞ্চি মনিটরের ডিসপ্লে সাইজ ঠিক ১৭-ইঞ্চিই! তবে, কিছু ক্ষেত্রে আপনি ভুল হতে পারেন। অনেক সিআরটি মনিটর আছে যেগুলোর শুধু ডিসপ্লে স্ক্রিন ১৭ ইঞ্চি নয় বরং এর চারপাশের বর্ডার সহ এটির ভিউয়্যাবল স্ক্রিন ১৭ ইঞ্চি ধরা হয়।

তবে, এলসিডি মনিটরের নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ তাদের বিজ্ঞাপনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুটি সাইজ-ই দিয়ে থাকেন। আপনি যদি ভালো করে লক্ষ্য করেন তবে দেখবেন এলসিডি এবং এলইডি মনিটরের বিজ্ঞাপনে ভিউয়্যাবল স্ক্রিন এবং ডিসপ্লে এরিয়ার সাইজ আলাদা ভাবে দেয়া থাকে।

৪

দামি ক্যাবল আসলেই কি ভালো?

আমি একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে দেখেছি, বলা হয়েছিল ‘জিনিস যেটা ভালো, দাম তার একটু বেশিই!’ কথা অনেক ক্ষেত্রেই সত্য তবে ‘ক্যাবল’ এর ক্ষেত্রে এই কথাটি চলেনা।
যেমন, মনসটার প্রতিষ্ঠানটি তাদের ক্যাবল গুলো অনেক দামে বিক্রি করে থাকে। তবে আপনার কি মনে হয়, আসলেই ক্যাবল দাম দিয়ে কেনার দরকার আছে? না, নেই ! যদি ‘ক্যাবল’টি একটি ডিজিটাল ক্যাবল হয়ে থাকে – যেমন ধরুন, একটি HDMI ক্যাবল – আপনি দামি কোন HDMI ক্যাবল কিনে কোন বাড়তি সুবিধা পাবেন না এবং কম মূল্যের ক্যাবলের সাথে এর কোন প্রকার পার্থক্যও করতে পারবেন না। একটি ডিজিটাল ক্যাবল শুধুমাত্র 1s এবং 0s – এই দুটি বিট ট্র্যন্সমিট করে থাকে, এবং এই ক্ষেত্রে কার্য প্রনালী হচ্ছে ‘হয় ক্যাবলের মধ্যে দিয়ে ডাটা ট্র্যান্সমিট হবে, নয়তো হবেনা!’ – যা একটি কম মূল্যের ক্যবলও করতে পারে।

তবে, উপরের তথ্যটি কিছুটা মিসলিডিং করতে পারে কেননা, উচ্চ-মানের ক্যাবল কিছু ক্ষেত্রে ভালো আউটপুট দিতে সক্ষম, যদি সেটা অ্যানালগ ক্যাবল হয়ে থাকে।

৫

যাই হোক, অনেক কিছু লিখে ফেললাম… আজ আর নয়। আজকের আমার এই লেখাটি আপনাদের শাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্য হচ্ছে অন্তত শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনেই না গলে গিয়ে বিজ্ঞাপনের ফিচার গুলো সম্পর্কে জানুন এবং নিশ্চিত হয়ে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য কিনুন। আজ এখানেই শেষ করছি। প্রিয় টেকের সাথেই থাকুন, আজ না হয় কাল ভালো কিছু জানতে পারবেন অবশ্যই। ভালো থাকবেন ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top