সকল মেনু

আবিষ্কার

সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রতিবেদক, ১ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : ওহ! কি যন্ত্রণা! যন্ত্রণার জীবাণুদের সাথে আজ বোঝাপড়া করেতেই হবে। তাই এক মোক্ষম সময়ে নিদারুণ দুঃসাহসে আমার মাথাটাকে ক্লোন করে অপারেশন টেবিলের উপর আনুভূমিক ভাবে রাখি। চোখ থেকে দৃষ্টি খুলে নিয়ে চেতনানাশক পান করায়। দৃষ্টি  চৈতন্য হারালে তাকেও রাখি টেবিলে। মন থেকে আলগা করে দিই মননের বাঁধন, জমাট বাঁধা বোধের বরফ। তারপর শুরু হয় আমার চাষাবাদ- চিরকালই কৃষক আমি কাব্যের মাঠে। নির্মোহ বুদ্ধির সুক্ষ অথচ তীক্ষ্ণ লাঙল দিয়ে ব্যবচ্ছেদ করি আমারই মগজ, দৃষ্টি আর মন। দেখি সবখানে উপনিবেশ। আমার সুখ, আমার বেদনা, আমার হাসি আমার কান্না কিছুই আমার না। আমার যৌন চেতনা, বিবেকের ইতিবৃত্ত; আমার সামাজিক রুচি, সাহিত্যিক মনন; আমার ভোগবাদী ইন্দ্রিয় আর ভাববাদী দর্শন সব ক্ষুদ্রঋণের জালে আবদ্ধ। আমার কোন আবিষ্কার নেই, কোন সৃষ্টিশীলতা নেই। কোথাও আমার আমি নেই। দখল নিয়ে বসে আছে স্বদেশী বিদেশি শাসক, দাতাগোষ্ঠী। খুব আহত হয় আমার প্রাচীন মন, যেমন আহত হয়েছিল গৌতম বুদ্ধ শরবিদ্ধ রাজহাঁস দেখে। তবু আরও মনযোগী হয় আমি আমার ব্যবচ্ছেদে। অ্যানাটমির বইগুলো বাতাস হয়ে গায়ে লাগে। ফিজিওলজির বৃষ্টি ঝরে চারিদিকে। আমি আই সি ইউ এর তাপমাত্রা শূন্যেরও সাত ডিগ্রী নিচে নামিয়ে আনি। শিরদাঁড়া বেয়ে নামতে থাকে অ্যাড্রেনালিনের নদী। সেন্ট্রাল কার্ডিয়াক মনিটরে দেখতে পায় রক্তচাপ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ নম্বর বিপদ সংকেতের কাছাকাছি। ওয়াল স্ট্রিটের ঘণ্টাবাদক তখন তড়িঘড়ি ঘুম থেকে উঠে বাজাতে যাচ্ছে সাইরেন। অভিমানী প্রিয়সীর মত মৌন দশদিক। আমি আমার শুয়ে থাকা মগজের ভেতর খুজছি, হন্যে হয়ে খুজছি, রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘের মতো করে, অভাবী রশিদ আলী যেমন ওর ছেড়া গেঞ্জিটা খোঁজে ধবধবে সাদা জামা পরা কেউ তার বাড়িতে এলে তার সামনে নিজেকে ভদ্রস্থভাবে উপস্থাপন করত, ওরকম করে খুঁজছি। কোথাও পাচ্ছিনা আমার মৌলিক কোন অবদানের ছায়া। অবশেষে উপসংহারে পৌছায়। দীপগুলো আস্তে আস্তে ম্রিয়মাণ হতে হতে অন্ধকারে ডুবে যায়। শেয়ার বাজারে ধ্বস নামে। মতিঝিলে বাসের সৎকার হতে থাকে। আর আমি ব্যবস্থাপত্রে লিখে দিই রোগের বিবরণ।

আমার সারা শরীর মন জুড়ে অন্যের বাস; সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যালেক্সজান্দার, কান্ট, হেগেল, লালন, রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, নিউটন, ম্যাক্স প্লাঙ্ক, সত্যেন বোস, কার্ল মার্ক্স, মেঘনাদ, নিটশে, অমর্ত্য সেন এমনি আরও অনেকের আস্তানা, রমরমা ব্যবসা, জমজমাট উপনিবেশ। আমার মন, মনন, দৃষ্টি ও স্মৃতিতে এদের প্রকট ছায়া, অবিরল বৃষ্টিপাত। আমার সৃষ্টি সব ফসলের মালিকানা ওদের।আমার সব কিছু অন্যের কাছে শেখা। কখন হাঁসতে হয়, কি করে কষ্ট দিতে হয়, কিভাবে লিখতে হয়, কেন ভালবাসতে হয়, কোন মুহূর্তে প্রেমিকার অধরে কত সময়ব্যাপী চুমু দিতে হয় সব ওরা বলে গেছে। আমি শুধু একান্ত অনুগত ভৃত্যের মতো মেনে চলছি সেসব। তাই আমার আমি বলতে কিছু নেই। যা আছে তার অর্থ শূন্য, আমার মানে শূন্যতা। শূন্যতা একান্তই আমার। আমার একমাত্র আবিষ্কার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top