সকল মেনু

আওয়ামী শাসনেই জামায়াতে ইসলামীর নজিরবিহীন উত্থান

ঢাকা, ২১ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : ইসলামী রাজনীতির ঘোরবিরোধী আওয়ামী লীগের শাসনামলেই দৃশ্যত নজিরবিহীন উত্থান ঘটেছে জামায়াতে ইসলামীর। মাত্র ২৭টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামায়াত ১৩টি আসনে বিজয়ী হয়েছে।
নির্বাচনে জামায়াতের ভালো ফলাফলে মহাজোট সরকারের মধ্যেও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াতের নেতাকর্মীরা এই ফলাফলে উজ্জীবিত বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

জানা গেছে, ৯৭টি উপজেলায় এককভাবে জামায়াতের প্রার্থী ছিল ২৭টি আসনে। তার মধ্যে ১৩টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে জামায়াত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে। এছাড়া ২৩টি ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে জয়ী হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ জিতেছে মাত্র ২৪টি আসনে। ১০টি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও জিতেছে জামায়াত। অনেকেই এই ফলাফলে বিস্মিত হয়েছেন। জামায়াতের ইতিহাসে সম্ভবত এত ফলাফল আগে হয়নি কখনও।

জামায়াতে ইসলামীর জয় সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান সরকার এবং রাষ্ট্রশক্তি জামায়াতের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। হয়তোবা এটা জনগণ বুঝতে পেরেছে। এ জন্যই জামায়াত নির্বাচনে ভালো ফলাফল করেছে।

তিনি বলেন, এ নির্বাচনের ফলে প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল নয়। ব্যাপক কারচুপি, ভোট ডাকাতি ও আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারদের সন্ত্রাসের পরও বিএনপি এবং তার জোটের সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয় লাভ করেছেন।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত জরিপটিকেও ভিত্তিহীন ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর পরিচালিত ওই জরিপে বলা হয়েছে, ‘এখন’ নির্বাচন হলে ৪১.৫ শতাংশ ভোটার আওয়ামী লীগকে এবং ৩৭.৬ শতাংশ ভোটার বিএনপিকে ভোট দেবে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা- ইউনিয়ন পর্যন্ত অফিস বন্ধ, রাস্তায় বের হলে গ্রেফতার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের মতো জায়গায় মানববন্ধন করতে পারছে না ও শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের গলায় ঝুঁলছে ফাঁসির দড়ি, সে দলটি উপজেলা নির্বাচনে ভালো ফলাফল করায় জামায়াতকে নিয়ে গতকাল সারাদেশে ছিল ব্যাপক আলোচনা। নির্বাচনে জামায়াত ১৩ চেয়ারম্যানসহ প্রায় ৪৩টি পদ বিজয়ী হয়েছে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের এক অনুষ্ঠানের পর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতকে জনগণ কেন ভোট দিল তা জানা নেই। এ ফলাফল অশুভ ইঙ্গিত বহন করে। বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে তদন্ত করা হবে।’

তবে জামায়াতের নেতারা ফলাফলে দারুণ খুশি। জামায়াতের এক নেতা দৈনিক আমার দেশকে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম ও নির্যাতনে জামায়াত যে দমে যায়নি তার বড় প্রমাণ উপজেলা নির্বাচন। নির্যাতন করে একটি দলকে দমানো যায়, কিন্তু আদর্শকে খতম করা যায় না। সরকারের অব্যাহত জুলুম ও নির্যাতনে জামায়াত আগের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিশালী হয়েছে এবং নৈতিক মনোবল আরও বেশি চাঙ্গা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে সন্তোষজনক ফলাফল করায় মাঠের কর্মীরা এখন বেশ উজ্জীবিত।

নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে দেশের আওয়ামীপন্থী দলকানা মিডিয়াগুলো প্রশ্নের শিকার হয়েছে। প্রায় সব টিভি চ্যানেল তাদের স্ক্রলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিজয়ী পদপ্রার্থীদের নাম প্রকাশ করলেও জামায়াতের বিষয়টি বেমালুম এড়িয়ে যায়। তারা ওই ফলাফলকে অন্যান্য ও স্বতস্ব বলে চালিয়ে নিয়েছে। এতে আওয়ামী ছদ্মবেশী বিটিভি মার্কা বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল জনগণের সমালোচনার শিকার হয়েছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের নির্বাচিত প্রার্থীরা হলেন খুলনার কয়রায় আখম তমিজ উদ্দীন, বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় আব্দুল গনি মণ্ডল, নন্দিগ্রামে নূরুল ইসলাম মণ্ডল, শেরপুরে দবিবুর রহমান, পাবনার আটঘরিয়ায় জুহুরুল ইসলাম খান, সাঁথিয়ায় মুখলেসুর রহমান খান, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে মাওলানা তাজুল ইসলাম, নীলফামারীর জলঢাকায় আলহাজ সৈয়দ আলী, রংপুরের মিঠাপুকুরের গোলাম রব্বানী, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় শফিউল্লাহ শফি ও সিলেটের জৈয়ন্তাপুর উপজেলায় জয়নাল আবেদীন এবং গোপালগঞ্জে নাজমুল ইসলাম।

২০১০ সালের ৩০ জুন কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মামলায় জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা আকস্মিকভাবে গ্রেফতার হন। তারপর থেকে দলটির ওপর বর্তমান সরকারের দমন ও নিপীড়ন নেমে আসে। একে একে গ্রেফতার হতে থাকেন জামায়াতের আরও সব শীর্ষ নেতা। পরে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের মামলায় জড়ানো হয়। তার মধ্যে দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সরকার। দলটির সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এছাড়াও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. কামারুজ্জামানকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। বিচার চলছে আরও কয়েক শীর্ষ নেতার।

জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হওয়ার পরেই কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও জেলা অফিসগুলো বন্ধ করে দেয় সরকার। হাইকোর্ট থেকে দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য আপিল বিভাগে তা বিচারাধীন আছে। কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের সব নেতা আছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। প্রকাশ্যে এলেই তাদের গ্রেফতার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বলা চলে প্রতিষ্ঠা লাভের পর এমন পরিস্থিতির শিকার হয়নি জামায়াত।
এমন অবস্থায় সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনে ভালো ফলাফল জামায়াতের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। তাদের মনোবল আগের চেয়ে আরও বেড়েছে বলে জানান কয়েজজন শীর্ষ নেতা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সদস্য ও সাবেক এমপি গতকাল দৈনিক আমার দেশকে জানান, জামায়াত যে প্রান্তিক তৃণমূলের একটি শক্তিশাল দল তা আবার জোরালোভাবে উপজেলা নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। সরকারের অব্যাহত মিথ্যা প্রচারণা ও জুলুমের স্টিম রোলারের কাছে মাথা নত করেননি আমাদের নেতাকর্মীরা। এই নির্যাতন জনগণ মেনে নেয়নি তা উপজেলা নির্বাচনে নীরব ব্যালট পেপারের মাধ্যমে জবাব দিয়েছে।

তিনি বলেন, ভোটকে কেন্দ্র করে সরকার সারাদেশে তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। নির্বাচন অবাধ ও মুক্ত হলে জামায়াত আরও আসন পেত।

তিনি বলেন, জামায়াতের মাঠের নেতাকর্মীদের পুলিশ ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করছে। একে আবার কথিত বন্দুকযুদ্ধ নামে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন হামলা-মামলা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে দলের সমর্থিত প্রার্থীর জন্য কঠোর পরিশ্রম করে বিজয়ী করেছেন। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়েছেন। তিনি জামায়াতের ওপর জুলুম বন্ধ করে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য নুহ-উল আলম লেনিন গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যকে জানান, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের দল। জনগণের মতামতকে সবসময় শ্রদ্ধ্যা করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। দেশের বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হলেও জনগণের রায় আমরা শ্রদ্ধ্যার সঙ্গে মেনে নিয়েছি।’
১৩ উপজেলায় দেশের জনগণ জামায়াতে ইসলামীর সমর্থিত প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে এ ব্যাপারটি কীভাবে দেখছেন এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচনটি প্রকৃতপক্ষে দলীয় নয়, এটি হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। দেশের জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছে এতে আমাদের বলার কিছু নেই।’

এ নির্বাচন দেশের গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি জানান। (আমারদেশ)

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top