সকল মেনু

আদালতে জবানবন্দি দিলেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী মৃদুল

চট্টগ্রাম, ২০ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : ৬ দিন অপহৃত অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার তিন দিন পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন চট্টগ্রামের আলোচিত স্বর্ণব্যবসায়ী মৃদুল চৌধুরী।

জবানবন্দি শেষে সাংবাদিকদের কাছে তার অপহরণকাহিনী বর্ণনা করেন তিনি। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে মৃদুল চৌধুরী বলেন, ‘আমি অপহরণকারীদের চিনতে পারিনি। তারা আমার উপর অমানবিক নির্মম নির্যাতন চালিয়ে র‌্যাবের বিরুদ্ধে কেন মামলা করেছি তা জানতে চেয়েছিলো।’

অপহরণের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মৃদুল সাংবাদিকদের বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দোকানে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন তিনি। এসময় পূর্ব দিক থেকে একটি কালো নোয়া মডেলের গাড়ি আসছিল। মাইক্রোটি তার পাশে দাড়িয়ে চালকের পাশের আসনের ব্যক্তিসহ কয়েকজন নেমে আসেন। তারা নিজেদের র‌্যাব-ডিবির লোক বলে পরিচয় দেয়। তারা মৃদুলকে দ্রুত গাড়িতে তুলেই মুখোশ ও হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দেয়। এই সময় মাইক্রোটি চলতে থাকে।

মৃদুল জানান, গাড়িতে মুখোশ পরানো অবস্থায় পাশে বসা একজন তার হাঁটুর ওপর মাথা চেপে ধরে। আধ ঘণ্টা চলার পর গাড়ি বদল করা হয়। দ্বিতীয় গাড়িটি অল্প কিছু সময় চলার পর আবার তাকে অন্য গাড়িতে তোলা হয়। তৃতীয় গাড়িটি প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে বলে জানান মৃদুল। এরপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে অপহরণকারীরা খাওয়া-দাওয়া করে। তখন তাকে গাড়ির পেছনের আসনের নিচে শুইয়ে রাখা হয়।

মৃদুল জানান, তৃতীয় গাড়িটি আবার চলতে শুরু করার পর এক পর্যায়ে একটি ফ্লাইওভার অতিক্রম করে বলে মনে হয়েছে তার। সর্বশেষ চতুর্থ গাড়িতে তুলে নেয়ার পাঁচ-সাত মিনিট পর গাড়ি থামলে একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় তোলা হয় মৃদুলকে।

মৃদুল বলেন, ‘একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় তুলে নেয়ার পর রাতে আমার সঙ্গে কেউ কোনো কথা বলেনি। এই সময় আমাকে ঘুমাতে বলা হয়। পরদিন সকালে আমাকে গোসল করতে দেয়া হয়। যে ঘরে রাখা হয় সেখান থেকে প্লেন, ট্রেনের হুইসেল ও গাড়ির শব্দ শুনতে পাই।’

গত ১১ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গল থেকে শুক্রবার) ওই কক্ষেই তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ও চোখ বেঁধে রাখা হয় বলে দাবি করেন মৃদুল।

মৃদুল চৌধুরী আরও বলেন, ‘১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে আমাকে মুখোশ পরিহিত অবস্থায় হাত পিছন দিকে বেঁধে আরেকটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাকে একটি খাঁচার মত জায়গায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। সুইচ টিপ দেয়ার পর আমি কয়েক ফুট উপরে উঠে যাই। এরপর আমাকে বেদমভাবে পেটাতে থাকে একাধিক ব্যাক্তি।’

মৃদুল জানান, ‘এসময় আমি চিৎকার করে বলেছি, স্যার আমার কি অপরাধ? আমাকে এভাবে মারছেন কেন? অপহরণকারীরা জবাব দেয়, র‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলি কেন? বেশি কথা বলবিনা। বেশি কথা বললে খবর আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি বলি, স্যার আমাকে একবার ফ্লোরে নামান। আমার নি:শ্বাস চলে যাচ্ছে। তখন আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। জ্ঞান ফিরলে দেখি তারা বলছে, একে ইলেকট্রিক শক দিতে হবে। পরে আরেকটি ঘরে নিয়ে আমাকে হাত বেঁধে শক দেয়।’

মৃদুল চৌধুরী জানান, ‘ইলেকট্রিক শক দেয়ার পাশাপাশি আমাকে প্রচন্ডভাবে হাঁটুতে মারধর করে। শরীরে প্রচন্ড যন্ত্রণা আর রক্ত ঝরা শুরু হয়।’

তিনি বলেন, বাথরুমে যাওয়া ছাড়া তার চোখ সবসময় বাঁধা আর হ্যান্ডকাপ পরা থাকত।

মৃদুল জানান, রোববার সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার দিকে তাকে আরেকটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অপহরণকারীদের কয়েকজন এসে জিজ্ঞেস করে, তুই কি বাঁচতে চাস? তিনি বলেন, স্যার আমি বাঁচতে চাই। অপহরণকারীরা বলে, তাহলে ৫০ লক্ষ টাকা লাগবে। আমি তখন ৪০ লক্ষ টাকা দিবো বললে অপহরণকারীরা রাজি হয়। তারা বলে, তোর পরিবারের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বল। তিনদিন পর তোকে ছেড়ে দেব। অপহরণকারীরা বলে, তোর হাত অনেক উপরে। তোর জন্য তো মনে হয় আমাদের পালিয়ে যেতে হবে। র‌্যাব-ডিবি এরা তো মনে হয় আমাদের থাকতে দেবে না।

মৃদুল বলেন, এসময় একজন এসে জিজ্ঞেস করে বলে, আমরা কে জানিস? তিনি বলেন, আপনারা তো র‌্যাব-ডিবি পরিচয় দিয়ে আমাকে এনেছেন। এসময় ওই ব্যক্তি বলে, আমরা র‌্যাবও না, ডিবিও না, আমরা সন্ত্রাসী।

উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি বন্দরনগরীর কোতোয়ালি থানাধীন পুরাতন টেলিগ্রাফ সড়ক থেকে অপহৃত হওয়ার পর গত সোমবার কুমিল্লার বুড়িচংয়ে আহত অবস্থায় পাওয়া যায় মৃদুলকে। সোমবার বিকাল থেকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এই ব্যবসায়ী। সেখান থেকে বুধবার দুপুরে পুলিশ পাহারায় আদালতে হাজির হন। সেখানে তিনি ম্যাজিট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারার তার অপহরণ বিষয়ে জবানবন্দি দেন।

এর আগে ৮০ ভরি স্বর্ণ লুটের অভিযোগ এনে র‌্যাবের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন মৃদুল চৌধুরী। এরপর অপহরণ হলে তার পরিবারের সদস্যরাও এর সঙ্গে র‌্যাবের ওই কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে অপহরণ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে মৃদুল কিংবা তার পরিবারের কেউ মুখ খুলেন নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top