সকল মেনু

সিম রিপ্লেসমেন্ট জটিলতার অবসান চান অপারেটররা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক, ১৭ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : দীর্ঘদিন ধরে চার মোবাইল অপারেটরের সিম রিপ্লেসমেন্ট জটিলতার অবসান হচ্ছেই না। এদিকে সম্প্রতি এনবিআর এ সংক্রান্ত ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ চূড়ান্ত করে ৭৮ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে অপারেটররা বলছে, একটি সেটেল বিষয় আনসেটেল করা হচ্ছে। এতে গোটা সেক্টরেই ক্ষতি হবে। তারা যতো দ্রুত সম্ভব এর একটি সমাধান চান।

এর আগে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর থ্রিজি নিলামকে কেন্দ্র করে অনেকটা সমাধান হয়ে গিয়েছিল সিম রিপ্লেসমেন্ট ইস্যু। কিন্তু থ্রিজি’র স্পেকট্রাম বেচা-বিক্রি হওয়ার পর এনবিআর আবার পুরো টাকার দাবি নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক এবং রবি কোর্টে গেলেও হাইকোর্ট আবার তাদেরকে এনবিআরের কাছেই ফেরত পাঠায়।

এ বিষয়ে সর্বশেষ গত সপ্তাহে গ্রামীণফোনের প্রান্তিক প্রতিবেদন অনুষ্ঠানে সিইও বিবেক সুদ বলেন, আইনগতভাবে পুরো বিষয়টি তাদের পক্ষেই আছে। কিন্তু এনবিআর এককভাবে তদন্ত কমিটির টার্মস অব রেফারেন্স সংশোন করে গাজোয়ারি কাজ করেছে যা গ্রহনযোগ্য নয়। এর আগে রবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট তালাত কামাল প্রিয়.কমের সাথে একান্ত আলাপকালে বলেন, আমরা এনবিআরকে দেখিয়েছি একটি সিম রিপ্লেসমেন্ট করার আগে ও পরের এক্টিভিটি একই রকমের। অধিকাংশ ব্যক্তি নির্দিষ্ট কিছু সময়ে নির্দিষ্ট কিছু নম্বরে প্রতিদিন কথা বলেন। সেটাও আমরা দেখিয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা এটি বুঝতে চাননি।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর দেশের ৪টি শীর্ষ মোবাইল অপারেটরের রিপ্লেসমেন্ট সংক্রান্ত ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ চূড়ান্ত করেছে। সম্প্রতি সিম রিপ্লেসমেন্ট তদন্তসংক্রান্ত বিশেষ কমিটি বিটিআরসির কারিগরি সহায়তায় গত ৩০ ডিসেম্বর প্রায় ৫ হাজার সিম নতুনভাবে যাচাই-বাছাই করে ৭৮ পৃষ্ঠার একটি চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন এনবিআরের কাছে জমা দিয়েছে।

এক্ষেত্রে যে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, সেগুলো হলো— সেলফোন অপারেটরগুলোর প্রদর্শিত ডাটাগুলো অবিকৃত নাকি মডিফাইড, সিম নম্বরের আলোকে ডাটাবেজের মালিকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া, সিম রিপ্লেসমেন্টের আগের ও পরের মালিক অভিন্ন কিনা। এ ধরনের যাচাই-বাছাই শেষে ৭৮ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন এনবিআরের কাছে জমা দেয় বিটিআরসি। সিম রিপ্লেসমেন্ট তদন্ত কালে গ্রামীণফোনের ১ হাজার ৪০০, রবির ১ হাজার ২০০, এয়ারটেলের ১ হাজার ৯৭ ও বাংলালিংকের ১ হাজার ২০০টি সিম-এর গতিবিধি, ডাটা, মালিকানা ইত্যাদি যাচাই করা হয়। এ সময় প্রায় ৯৫ শতাংশ সিমের ক্ষেত্রে রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া যায়।

বিশেষ কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামীণফোন ১ হাজার ৫৬২ কোটি ২৯ লাখ, বাংলালিংক ৭৬২ কোটি ৩৪ লাখ, রবি ৬৪৭ কোটি ২৪ লাখ ও এয়ারটেল ৩৯ কোটি ১২ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মূল দলিলাদি যাচাইয়ের মাধ্যমে সিম রিপ্লেসমেন্টের আগে ও পরে মালিকানা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে এ অর্থ পরিশোধযোগ্য।

এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, সেলফোন অপারেটররা সিম বদলের আড়ালে নতুন কার্ড ইস্যুর বিপরীতে বিদ্যমান ট্যারিফ মূল্য অনুযায়ী সম্পূরক শুল্ক ও মূসক ফাঁকি দিচ্ছে। কারণ বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, সাধারণ আদেশ নং- ৬/মূসক/২০০৬-এর মাধ্যমে সেবার কোড এস-০১২.২০ অর্থাৎ সিম কার্ড সরবরাহকারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ট্যারিফ মূল্যের ওপর ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায়যোগ্য।

গ্রামীণফোন:
এনবিআরের তথ্যমতে, নতুন গ্রাহকের কাছে সিম বিক্রি করলেও তাকে রিপ্লেসমেন্ট দেখিয়ে ১ হাজার ৫৬২ কোটি ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয় গ্রামীণফোন। এনবিআরের কাছে দেয়া গ্রামীণফোনের তথ্য অনুসারে, ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১১-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ৩৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩৫৪টি সিম রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে। এসব সিমের বিপরীতে ফাঁকি দেয়া ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ঠিক সময়ে রাজস্ব না দেয়ায় ২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত কর দিতে হবে।

রবি:
এ বিষয়ে রবির রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ৬৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ২০০৭ সালের মার্চ থেকে ২০১১-এর জুন পর্যন্ত ৫২ লাখ ৬১ হাজার ৫৪১টি সিম রিপ্লেসমেন্টের নামে নতুন গ্রাহকের কাছে সিম বিক্রি করে এ অর্থ ফাঁকি দেয়া হয়েছে বলে এনবিআর দাবি করছে।

বাংলালিংক:
২০০৯ সালের জুন থেকে ২০১১-এর মার্চ পর্যন্ত যেখানে নতুন সিম বিক্রি করা হয়েছে, সেখানে ২৭ লাখ ৫৮ হাজার সিম রিপ্লেসমেন্ট দেখানো হয়েছে। এতে রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ৭৬২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

এয়ারটেল:
২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১১-এর জুন পর্যন্ত সময়ে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭৮৩টি সিম রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে— এমন তথ্যের বিপরীতে এনবিআরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এ সংখ্যার ৭২.৫ শতাংশ নতুনভাবে ইস্যু করা। এতে রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ৩৯ কোটি ১২ লাখ টাকা।

শিগগিরই এই ৪ সেলফোন অপারেটরকে পাওনা রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য চিঠি দেবে এনবিআর। এ অর্থ পরিশোধ না করলে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেলের ব্যাংক হিসাব জব্দসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে এনবিআরের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের জুনে এনবিআর সেলফোন অপারেটরগুলোর সিম রিপ্লেসমেন্টের নামে নতুন সিম বিক্রি করে রাজস্ব ফাঁকির বিষয় তদন্তের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। খুলনার কমিশনারকে (ভ্যাট) প্রধান করে গঠিত ওই তদন্ত কমিটিতে ছিলেন এনবিআরের প্রথম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ বিটিআরসি, অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) ও সংশ্লিষ্ট সেলফোন অপারেটরগুলোর প্রতিনিধি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top