সকল মেনু

‘গুন্ডে’ ছবির স্টাইলিংয়ের নেপথ্য কাহিনী (ভিডিও)

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম)  :  ভালোবাসা দিবসে মুক্তি পেল আলি আব্বাস জাফর পরিচালিত ছবি ‘গুণ্ডে’। ১৯৭০ সালের প্রেক্ষাপটে তৈরি করা হয়েছে ‘গুণ্ডে’ ছবিটি আর তাই সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতেই ভিন্নতা এনেছেন নায়ক- নায়িকার পোশাক এবং মেক আপে। এ ছবির স্টাইলিং-এর নেপথ্য কাহিনী জানালেন ছবির ড্রেস ডিজাইনার সুবর্ণা রায় চৌধুরী। কলকাতার আপনার-আমার চেনা দোকানের পোশাকই প্রিয়াঙ্কা, রনবীর, অর্জুনের গায়ে চড়েছে ‘গুন্ডে’ ছবিতে।

প্রিয়াঙ্কার জন্য: তাঁতের শাড়িতে শিফন এফেক্ট
প্রিয়াঙ্কার নীল তাঁতের শাড়ি, যেটা এখন ‘টক অফ দ্য টাউন’, তা কিনেই পরিয়ে দিইনি। এরকম ঢাকাই শাড়ি কলকাতায় অনেক পাওয়া যায়। কিন্তু আমি ঠিক তাঁতের লুকটা চাইছিলাম না। ফ্যাব্রিকটা তাঁত হবে, কিন্তু লুকটা যেনো একেবারে বাঙালি না হয়। আমার কাছে যশরাজ ফিল্মস থেকে নির্দেশও ছিলো সে রকমই। কারণ যতোই কলকাতার ওপর ছবি হোক না কেনো, দেখবে তো পুরো দেশই। আসলে এটা একটা প্যান ইন্ডিয়ান ফিল্ম। তাই দোকান থেকে শাড়িটা কিনে আমি বেশ কয়েকবার ধুয়ে নিই। ফলে শাড়িটা পাতলা, ট্রান্সপারেন্ট হয়ে যায়। ব্যাস শিফনের অ্যাফেক্ট পেয়ে যাই তাঁতের শাড়িতেই।

হলুদ শাড়িটার ক্ষেত্রেও একই কাজ করেছি। প্রিয়াঙ্কার ফিগার এত ভালো, সেটা তো বোঝাতে হবে। এই শাড়ির সঙ্গে ওকে পরিয়েছি স্লিভলেস ব্লাউজ। ছোট আর সেক্সি। যা প্রিয়াঙ্কার সুন্দর ফিগারকে কমপ্লিমেন্ট করে। এই শাড়ি আর ব্লাউজ প্রিয়াঙ্কারও খুব পছন্দ হয়েছিল। এছাড়া একটা সাঁওতালদের মতো একটু খাটো করে শাড়ি পরার দৃশ্য ছিলো। প্যারট গ্রিন শাড়ি পরেছিলেন প্রিয়াঙ্কা। সঙ্গে রুপোর গয়না। এই লুকটাও প্রিয়াঙ্কার পছন্দের। ছবিটা যে সময়ের কথা বলছে সেই সময়ের কলকাতা কিন্তু খুব স্টাইলিশ ছিলো। আমি নিজেও আশির দশকের। আমি নিজে পুজোর সময় মা-কাকিমাদের এ রকম তাঁতের শাড়ির সঙ্গে স্লিভলেস ব্লাউজ পরতে দেখেছি। বালিগঞ্জ কালচারালের পুজোটা আমার দাদু শুরু করেন। আর সেই পুজোয় যারা আসতেন তারাও যথেষ্ট ফ্যাশনদুরস্ত ছিলেন। আমি সেটা খেয়াল করেছিলাম। এই ছবিতে সেটাই কাজে এসে গেছে। তাঁত, মেখলার স্টিচ, বাঙালি অ্যামব্রয়ডারি, বাটিক, প্যাচ ওয়ার্ক- সব ব্যবহার করেছি। চান্দেরি শাড়িও পরিয়েছি। চান্দেরি আমার খুব প্রিয়। ‘লুটেরা’-র সময়ও ব্যবহার করেছিলাম।

হিরোদের স্টাইলিং : রণবীর সিং, ইস্ট বেঙ্গল আর অর্জুন কাপুর
এই ছবিতে রণবীর সিং এর চরিত্রটা খুব ফ্ল্যামবয়েন্ট। অনেকটা একটু ভেসে বেড়ানোর মতো চরিত্র। আর অর্জুন কাপুরেরটা অনেক বেশি রিজার্ভ, স্টাবার্ন। অথচ দুজনে হরিহর আত্মা। তাই বেসিক পোশাকের ডিজাইনটা এক রেখে দুজনের শার্ট বা গেঞ্জির রঙটা বদলে দিই। মানে অর্জুনের জন্য নীল রং অনেক বেশি ব্যবহার করেছি। আর রণবীরের জন্য লাল, হলুদ। দুজনেই সাদা সাফারি পরেছেন। কিন্তু রণবীরেরটা সি-গ্রিন সুতো দিয়ে সেলাই করা আর অর্জুনেরটা নীল সুতো দিয়ে সেলাই করা। গ্রে রঙটা আমি অর্জুনের জন্য ব্যবহার করেছি, রণবীরের জন্য নয়। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সেই সময় বেল বটম প্যান্ট কিন্তু ফ্যাশনে আর ছিলো না। তার বদলে এসেছিল স্লিম ট্রাউজারস। রাজ বাব্বর খুব পরতেন তার ছবিতে। আমিও ব্যবহার করেছি। এই সময় ট্রাউজার্সের ফ্লেয়ার কমে যায়। তার বদলে অনেক বেশি স্ট্রেট হয়ে যায়। বেল্ট বলতে দড়ি পরিয়েছি দুজনকেই। কারণ চরিত্রটা এমন ছিলো যে, খুব ঝকঝকে জিনিস মানাতো না। আমি অর্জুন-রণবীরের অনেক পোশাকও কেচে, ব্লিচ করে পরিয়েছি। মানে ওদের লুকটা দেখে যেনো মনে হয় একেবারেই কেয়ারলেসভাবে সেট করা। সুতির শার্ট, ডাই করিয়ে পরতে দিয়েছিলাম। হাতে আর মাথায় চামড়ার ফেট্টি। এমন চামড়া যে দেখে মনে হয় যে কোনো কিছু থেকে কেটে নেওয়া। অ্যানিমেল প্রিন্ট, বড় পকেট, কাঁধে পট্টি আর ডেনিম সবই কিন্তু সেই সময়েরই স্টাইল। তবে আমি খুব বেশি ডেনিম পরাইনি। যেটুকু ব্যবহার করেছি সেটা আগে থেকে চায়ের পাতায় ডুবিয়ে রাস্টিক লুক দেওয়া। কোনোটা আবার কফি পাওডারে রোল করা। নাহলে ওই নোংরা, ধুলো ধুলো লুক দেওয়া সম্ভব নয়। সাইফ আলি খান আর ক্যাটরিনা কাইফের ‘ফ্যান্টম’ ছবির জন্যেও এরকম নানা কিছু ট্রাই করেছি লুকটা ফোটানোর জন্য। দুই হিরোকেও কিন্তু বাঁধনি, ফ্লোরাল প্রিন্ট দিয়েছি। রণবীরের সঙ্গে আমি আগেও কাজ করেছি। ‘লুটেরা’য়। অর্জুনের সঙ্গে কাজ করছি ‘তেভার’ ছবিতে। কিন্তু প্রতিটা ছবির গল্প আলাদা। তাই সেই অনুযায়ী পোশাকও বদলে গিয়েছে।

কোন দোকান : দক্ষিণাপণ
আমি কিন্তু স্টাইলিং এর বেশিটাই কলকাতা থেকে জোগাড় করেছি। দক্ষিণাপণ পুরো চষে ফেলেছি। প্রত্যেকটা এম্পোরিয়াম ঘুরেছি সোর্সিং এর জন্য। এ ছাড়া খাদি তো আছেই৷ খাদি থেকে সুতির ফ্যাব্রিক কিনে ডাই করিয়েছি। কলকাতায় ডাই করানোর জায়গার অভাব নেই। তারপর সেটাকে ধুয়েছি। কারণ সুতির কোনো পোশাক নতুন পরলে বোঝা যায়। আর আমি একটু পুরনো লুক চাইছিলাম। সব পোশাকই নিজে বানিয়ে নিয়েছি। কলকাতার ছোটখাটো দোকানই ছিলো ‘গুন্ডে’র সোর্সিং এর জন্য আমার মূল ভরসা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top