সকল মেনু

সাঈদীর আপিলে ৮ম দিনের যুক্তিতর্ক

ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি  (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসইন সাঈদীর আপিল আবেদনের উপর অষ্টম দিনের মতো শুনানি শেষ হয়েছে।

মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আপিল বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানি শেষে মামলার কার্যক্রম আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

আজ শুনানিতে প্রসিকিউশনের ১, ৫, ও ৯ নং- এই তিনজন তিন সাক্ষীর বিষয়ে যুক্তি খন্ডন করে তাদের ভিন্ন মতের কথা তুলে ধরেছেন আসামীপক্ষের আইনজীবী।
 
আইনজীবী শাহজাহান বলেন, বিশাবালী হত্যা বিষয়ে প্রসিকিউশনের এক নং সাক্ষী মাহবুবুল আলম জবানবন্দীতে বলেছেন ‘২ জুন সকালে নিজ বাড়িতে লোকদের থেকে জানতে পারি অনুমান ১০টায় পারের হাটের শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী দানেশ আলী মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মোমিন হাওলাদার, হাকিম  কাজী, হাবিবুর রহমান মুন্সী পাক হানাদার বাহিনী সঙ্গে নিয় উমেদপুর গ্রামে  আমার বাড়ির নিকটস্থ হিন্দু পাড়ায় আক্রমণ চালিয়েছে। 

বিশাবালী অসুস্থ থাকায় তাকে ধরে ফেলে এবং একটি নারিকেল গাছের সাথে বেঁধে মারমিট করে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নির্দেশক্রমে বলে যে, ওটাকে যখন পেয়েছি ওটাকে গুলি কর। জনৈক রাজাকার গুলি করে বিশাবালীকে হত্যা করে।’

তিনি বলেন, মাহবুবুর রহমান খলিলের কাছ থেকে ঘটনার দিন ভোরে খবর পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু এই খলিলুর রহমানের জন্ম সনদে জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে  ১৯৭২ সালের ১৩ এপ্রিল। ভোটার তালিকা এবং তার কর্মস্থলের তথ্য বিবরণীতেও  জন্ম   তারিখ একই লেখা আছে। কাজেই জন্ম সনদ অনুযায়ী ১৯৭১ সালে তার জন্মই হয়নি। কাজেই এরূপ ব্যক্তির কাছ থেকে খবর পাওয়ার কথা অসম্ভব। 

আইনজীবী বলেন, এক নং সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারের এসএসসির নিবন্ধনে জন্ম তারিখ ২০ মার্চ ১৯৫৯ সাল। ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ১২ বছর। এ তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা হল তার বড় বোন মাতোয়ারা বেগমের জন্ম তারিখ ১৯/৭/১৯৫৭। 

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ এবং সাক্ষীদের দাবি বিশাবালীকে উমেদপুরে তাদের বাড়ির সামনে একটি নারকেল গাছের সাথে বেঁধে সাঈদীর নির্দেশে গুলি করে হত্যা করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষেরই দাখিল করা একটি ডকুমেন্টে দেখা যায় তাকে পিরোজপুর বলেশ্বর নদীর বেদিতে হত্যা করা হয়েছে। 

এ বিষয়ক ডকুমেন্ট জমা দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী এবং মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার। জিয়া নগর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে পিরোজপুর বলেশ্বর নদীর বেদিতে নিয়ে যাদের হত্যা করা হয়েছে মাহবুবুল আলম হাওলাদার এ তালিকা তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়েছেন এবং রাষ্ট্রপক্ষ এ ডকুমেন্টের ওপর নির্ভর করেছে। কাজেই তাদের দাবি অনুযায়ী বিশাবালীকে পিরোজপুর বলেশ্বর নদীর বেদিতে হত্যা করা হয়েছে। 

প্রসিকিউশনের ৫ নং সাক্ষীর বিষয়ে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে মাহতাব বলেছেন ২ জুন উমেদপুরে অগ্নিসংযোগ এবং বিশাবালীকে হত্যার দিন তিনি পাড়েরহাট গিয়েছিলেন এবং যাবার পথে এ ঘটনা দেখেছেন। অথচ তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় বলেছেন, ২ জুন তিনি পাড়েরহাট যাবার কথা তাকে বলেননি। কাজেই সাক্ষী মাহতাবের কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আর পাড়েরহাট না গেলে ঘটনা দেখার কথাও সত্য নয়। 

জেরায় মাহতাব এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন তিনি ৪০ বছরেও বিশবালীর লাশ কোথায় গেল সে বিষয়ে খোঁজ নেননি এবং কোন রাজাকার তাকে গুলি করেছিল তাও জানার চেষ্টা করেননি।  আইনজীবী বলেন, মাহতাব তখন ছিল স্কুলছাত্র। 

বিশাবালী হত্যা বিষয়ে সাক্ষী আলতাফ হোসেনের সাক্ষ্য খন্ডন করে যুক্তিতে নবম সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেছে, ১৯৭১ সালের ২ জুন মামার বাড়ি উমেদপুর গ্রামে যাই। যাবার পথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখি ১৮/২০টি ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিশাবালীকে ধরে নারকেল গাছের সাথে বেঁধে রাজাকাররা মারিপট করে। সাঈদী পাক হানাদার বাহিনীর সাথে কি যেন আলাপ আলোচান করল।

তখন সাঈদী সাব বলে, শালাকে গুলি কর। এ কথা বলার পর একজন রাজাকার রাইফেল বা পিস্তল ঠিক বলতে পারবনা,  লম্বা লম্বা দেখেছি, তা দিয়ে গুলি করে। গুলি করার সাথে সাথে বিশাবালী মা বলে চিৎকার দেয়। আমি ভয়ে কাতর হয়ে ঐ জঙ্গলের আরো গভীরে চলে যাই। এরপর মামার বাড়ি গিয়ে দুপুরে খেয়ে অনেকের সাথে বিকালে পোড়াবাড়ি দেখতে যাই। লোকজনকে বলাবলি করতে শুনি লাশটা গেল কোথায়। অনেকে রক্ত টক্ত দেখতে পায়। আমিও রক্ত দেখি। লোকজনকে বলাবলি করতে শুনি ‘ওকে খালে ফালাইয়া দিছে।’ 

আপনি তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছিলেন কি-না আইনজীবীর এমন প্রশ্নে সাক্ষী জানায় বলেছি। 

কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরার সময় প্রশ্ন করা হয় সাক্ষী উপরোক্ত কথাগুলো আপনাকে বলেছিল কি-না। তদন্ত কর্মকর্তা জানান সাক্ষী এ কথাগুলো তাকে বলেননি। শাহজাহান বলেন, এটাই হল মূল ঘটনা। আর একথাই তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দীতে বলেননি। অথচ ট্রাইব্যুনালে এসে তিনি এটা বলেছেন। কাজেই তার একথা বিশ্বাযোগ্য নয়। 

সাক্ষী আলতাব হোসেনও বলেছেন বিশাবালীকে নারকেল গাছের সাথে বেধে কোন রাজাকার গুলি করেছিল তার নাম তিনি জানেননা এবং আজ পর্যন্ত জানারও চেষ্টা করেননি।  আইনজীবী বলেন, বিশাবালী হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের মাহবুবুল আলম হাওলাদার, মাহতাব উদ্দিন এবং আলতাফ হোসেন তিনজনের বাড়িই টেংরাখালি। আর বিশাবালীর বাড়ি উমেদপুর। রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষী বলেছেন টেংরাখালি থেকে উমেদপুর দূরত্ব ২ কিলোমিটার। কাজেই দেখা যাচ্ছে বিশাবালীকে হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সব সাক্ষী অন্য গ্রামের। 

বিশাবালী হত্যা বিষয়ে বিশাবালীর ভাই সুখরঞ্জন বালীকে আসামী পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আনা এবং ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে তাকে অপহরণের বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য উপস্থাপন করতে চাইলে একজন বিচারপতি আপত্তি করে বলেন এটি কি আপনাদের কোন এভিডেন্স? জবাবে শাহজাহান বলেন, বিচার চলাকালে এ ঘটনা ঘটে এবং এটি আমরা এভিডেন্স হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুযোগ পাইনি। 

তবে তিনি বলেন, সুখরঞ্জন বালী ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী এবং তাকে সাঈদীর পক্ষে আনার জন্য সমন চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল ট্রাইব্যুনালে। ট্রাইব্যুনাল তা খারিজ করে দিয়ে আদেশে বলেছিলেন আসামী পক্ষ চাইলে তাদের নির্ধারিত সংখ্যার মধ্যে যাকে খুশি সাক্ষী হিসেবে আনতে পারবে। 

তিনি সুখরঞ্জন বালীর টিভি সাক্ষাৎকার সংবলিত ২টি সিডি জমা দিয়ে বলেন, এ দুটি ম্যাটেরিয়াল এক্সিবিট হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। এরপর বিশাবালী হত্যা বিষয়ে আদালতের কিছু প্রশ্নের উত্তর পরবর্তীতে দেয়া হবে মর্মে এ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত রেখে তিনি ১১ নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।

১১ নং অভিযোগ হল মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়িতে লুটপাট এবং তার বড় ভাই মজিদ হাওলাদারকে নির্যাতন। মাহবুবুল আলম হাওলাদার হলেন মামলার বাদী এবং রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী। 

শাহজাহান বলেন, এই দরাখস্ত থেকে এটা প্রমাণিত যে, ১৯৭১ সালে তাদের বাড়ি লুট হয় নি। আসলে ১৯৭১ সালে তার নিজের কোন বাড়িই ছিলনা। মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়ি লুটের অভিযোগ বিষয়ে সাঈদীর পক্ষে একজন সাক্ষী উল্লেখ করেছেন। তিনি হলেন তিন নং সাক্ষী নুরুল হক হাওলাদার। 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top