সকল মেনু

ফাটাকেষ্ট আসবেন বলে গুলিস্তান ফাঁকা

ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ24বিডি):  রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তান। বলা যায়, এলাকাটি হকার-অধ্যুষিত। যানজট এখানকার নিত্যদিনের সঙ্গী।

একবার জ্যাম লাগলে কখন মুক্ত হবে, তা কেউ জানেন না। কিন্তু সোমবার ছিল ব্যতিক্রম। রোববারই সবাই কনফার্ম হয়েছিলেন, আজ দুপুরের দিকে যোগাযোগমন্ত্রী গুলিস্তানে আসবেন। তাই সকাল থেকে গুলিস্তান এলাকার ফুটপাতে একটি দোকানও বসেনি।

সোমবার বেলা ১১টায় পল্টন থানার এসআই লিটনকে দেখা যায় ওই এলাকায়। একদিকে ফুটপাতের দোকান তুলে দিচ্ছেন তিনি। আবার অন্য দিক থেকে দোকান বসাচ্ছেন হকাররা। বাধ্য হয়েই তিনি লাথি মেরে, কখনো বা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সরানোর চেষ্টা করছেন।

পান-সিগারেটের দোকান নিয়ে বসা আল আমিনকে দেখে লিটন বলছেন, ‘দেখ ভাই, আজ ফাটাকেষ্ট আসবেন। আগে থেকেই এখান থেকে সরে পড়। উনি চলে গেলে আবার বসতে পারবি। এখন যা, ভাই!’

পথচারী জাকির সোলায়মান সচিবালয়ে চাকরি করেন। আজকের পরিবেশ দেখে তিনি খুব খুশি। তার মতো আরো অনেক পথচারী আজ নির্বিঘ্নে চলাচল করেছেন ওই এলাকায়। কোথাও কোনো বাধা নেই। আর যানজটও নেই পুরো গুলিস্তানে। এজন্য পুলিশ অফিসারের মতো অনেকেই বলছিলেন, ‘ফাটাকেষ্ট আসবে তো, তাই গুলিস্তান আজ ফাঁকা।’ তবে অনেকে এও বলছেন, ফাটাকেষ্ট চলে গেলে গুলিস্তান আগের জায়গায় ফিরে যাবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গুলিস্তান এলাকার ফুটপাতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৮ হাজার হকার প্রতিদিন পসরা সাজিয়ে বসেন। এর মধ্যে জুতা-স্যান্ডেল, ফল, কাপড়, লেদার সামগ্রী ও খাবারের দোকান রয়েছে। এসব দোকান নিয়ন্ত্রণ করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা। তারা ফুটপাতের দোকানের জায়গাটুকু মোটা অঙ্কের টাকায় এককালীন বিক্রি করে দেন। আবার ভাড়া দিয়েও দিন বা সপ্তাহান্তে টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন নেতারা।

জুতার দোকানদার কালাম জানান, নেতারা ছাড়াও পুলিশ প্রতিদিন টাকা তোলে। ছোট দোকানপ্রতি ১০০ টাকা আর বড় দোকান ১৫০ টাকা হারে তোলা হয়। এভাবে প্রতি মাসে প্রায় ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা তোলেন রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ সদস্যরা। এই টাকা তোলার জন্য আছে কয়েকজন লাইনম্যান। তারাই মূলত টাকা তোলার পর ভাগ-বাঁটোয়ারা করেন।

ফলের দোকানদার আজিজুল বলেন, ‘গুলিস্তানের হকার তুলে দিলে সরকার টিকে থাকতে পারবে না। আমরা আন্দোলন করব। সরকার বাধ্য হয়ে রাস্তায় দোকান করতে দেবে। পুলিশ তো প্রতিদিনই টাকা নেয়। তাহলে আমাদের ওঠাবে কেন?’

দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের এসআই লিটন  বলেন, ‘পুলিশ টাকা তোলে না, বরং নেতারাই প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা এখান থেকে হাতিয়ে নেন ।’ এ বিষয়ে তাদের কিছুই করার নেই বলে জানান লিটন।

বিকেল ৩টা পর্যন্ত দেখা যায়, হকাররা কয়েকবার দোকান বসানোর চেষ্টা করেও পুলিশের বাধার কারণে পারেননি। তবে যখন সবাই শুনলেন, ফাটাকেষ্ট (যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের) আর আসবেন না, তখনই সবাই রাস্তার মধ্যে আবার আগের মতো দোকান বসানো শুরু করলেন। পুলিশও নীরবে দাঁড়িয়ে রইল। যেন কিছুই করার নেই তাদের। আর থাকবেই বা কেন? তারা তো সবাই হকারদের টাকার কাছে বাঁধা।

মিঠুন চক্রবর্তীর জনপ্রিয় সিনেমা ফাটাকেষ্ট যারা দেখেছেন, তারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, এলাকার লোকজন, এমনকি পুলিশ অফিসার পর্যন্ত কেন ওবায়দুল কাদেরকে ফাটাকেষ্ট হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। কোথাও কোনো অসংগতি চোখে পড়লে সিনেমার মন্ত্রী মিঠুন চক্রবর্তী ঝাঁপিয়ে পড়ে তার প্রতিকার করতেন। চষে বেড়াতেন যত্রতত্র।

মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকেও সেই কাতারের মনে করছেন অনেকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top