আছাদুজ্জামান, ঢাকা, ৬ ফেব্রুয়ারি : শীর্ষ চার মোবাইল ফোন অপারেটরের সিম রিপ্লেসমেন্ট বাবদ ভ্যাট ফাঁকি সংক্রান্ত জটিলতা গত দুবছরেও নিরসন হয়নি। এ ব্যাপারে আলাপ আলোচনা হলেও সুহারা হয়নি বিষয়টির। ২০১২ সালের শুরু থেকে চার মোবাইল ফোন (গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল) অপারেটদের কাছে সিম রিপ্লেসমেন্ট বাবদ ভ্যাট দাবি করে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু প্রথম থেকে মোবাইল ফোন অপারেটররা এনবিআরের দাবিকে উপেক্ষা করে আসছে। এনবিআর বলছে, মোবাইল ফোন অপারেটররা পুরাতন সিম রিপ্লেসমেন্ট করে নতুন সিম বিক্রি করে করেছেন গ্রাহকের কাছে। এ বাবদ বিপুল পরিমাণ ভ্যাট পরিশোধ করেনি এসব মোবাইল ফোন অপারেটর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারি গঠিত এনবিআরের এই সংক্রান্ত কমিটি মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ এনে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় । তদন্ত প্রতিবেদনে ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের প্রায় ৯৫ শতাংশ সিম রিপ্লেসমেন্টই ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সিম বিক্রি করে গ্রামীণফোন ১ হাজার ৫৬২ কোটি ২৯ লাখ, বাংলালিংক ৭৬২ কোটি ৩৪ লাখ, রবি ৬৪৭ কোটি ২৪ লাখ ও এয়ারটেল ৩৯ কোটি ১২ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। সিম রিপ্লেসমেন্ট তদন্ত সংক্রান্ত বিশেষ কমিটি প্রায় পাঁচ হাজার সিম নতুনভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখেছে। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের ১ হাজার ৪০০, রবির ১ হাজার ২০০, এয়ারটেলের ১ হাজার ৯৭ ও বাংলালিংকের ১ হাজার ২০০টি সিম রয়েছে। এ পরীক্ষায় প্রায় ৯৫ শতাংশ সিমের ক্ষেত্রে রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে। সূত্র মতে, পর্যালোচনা কমিটির সদস্য হয়েও চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত রয়েছে অভিযুক্ত মোবাইল ফোন অপারেটররা। তাদের দাবি এনবিআর তাদের মতামতের তোয়াক্কা না করেই একতরফাভাবে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। মোবাইল ফোন অপারেটররা দাবি করছে, তারা পুরাতন সিম নতুন করে বিক্রি করেনি। তাই পুনরায় ভ্যাট দেওয়ার প্রশ্ন আসে না। এ বিষয়ে গত বছরের জুনে তদন্তের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে এনবিআর। খুলনার কমিশনারকে (ভ্যাট) প্রধান করে গঠিত ওই তদন্ত কমিটিতে ছিলেন এনবিআরের প্রথম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ বিটিআরসি, অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) ও সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর প্রতিনিধি। এর আগে এ অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে মোবাইল ফোন অপারেটররা থ্রিজি নিলামে অংশ নিতেও অস্বীকার করে। পরে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তারা নিলামে অংশ নেয়। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়, যৌথ কমিটি পর্যালোচনার মাধ্যমে ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টির সুরাহা করবে। উচ্চ আদালত থেকেও নির্দেশনা ছিল ১২০ দিনের মধ্যে দাবিনামা জারি করে অভিযোগটির নিষ্পত্তি করতে হবে। কিন্তু মোবাইল ফোন অপারেটরদের অসহযোগিতায় গুরুতর এসব অনিয়ম এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। এদিকে ভ্যাট লার্জ টেক্সপেয়ার্স ইউনিট (এলটিইউ) উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে সরকারের পাওনা রাজস্ব আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে। ফলে ফাঁকি দেওয়া অর্থ আদায় নিয়ে দীর্ঘ আইনি জটিলতায় পড়তে যাচ্ছে এনবিআর। অন্যদিকে মোবাইল ফোন অপারেটরদেরও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির দায় মাথায় নিয়ে আইনি লড়াইয়ে সামিল হতে হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।