সকল মেনু

চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৬০ ককটেল কারিগর সক্রিয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম, ২ নভেম্বর: হরতাল, অবরোধ, আন্দোলন মানেই ককটেল বিস্ফোরণ। বিরোধীদলের গত হয়ে যাওয়া ৬০ ঘণ্টার হরতালে চট্টগ্রাম মহানগরীতে যে হারে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে এখন ককটেল তৈরিতে ৬০ ককটেল কারিগর সক্রিয়।000000

এ ছাড়া জামাত শিবির কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে সবকটি ঝটিকা মিছিলে বৃষ্টির মত ককটেলের বিস্ফোরণ নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। চট্টগ্রাম বন্দর নগরীতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ককটেল খুবই সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। হাত বাড়ালেই মিলছে ককটেল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর ও আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে ৬০ জন ককটেল কারিগর সক্রিয় রয়েছে। প্রতিদিন এই ককটলে কারিগরা ৩ থেকে ৪শ’ ককটেল তৈরি করছে।

শুক্রবার ভোরে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানাধীন কালামিয়া বাজার এলাকা থেকে দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার গিয়াস উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর ককটেল তৈরি ও এর সহজলভ্যতার চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

পুলিশের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও বিভিন্ন সূত্রে অনুসন্ধানে জানা যায়, ককটেল তৈরির কারিগরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিবির নিয়ন্ত্রিত। শিবিরের সিনিয়র নেতাদের পূর্ব চাহিদামত কারিগরা ককটেল তৈরি করে সরবরা করছে। নগরীতে কমপক্ষে ৬০ জন ককটেল কারিগর দৈনিক সর্বনিম্ন ৩শ’ থেকে সর্বোচ্চ ৬শ’ ককটেল তৈরি করতে সক্ষম।

ককটেল কারিগরা এতোদিন শুধু জামাত শিবিরকে ককটেলের সরবরাহ দিয়ে আসলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধীদলের হরতাল, আন্দোলন বেড়ে যাওয়ায় ককটেলের চাহিদা বেড়েছে। তাই ব্যস্ততা বেড়েছে কারিগরদের।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের এক সদস্য জানান, পটাশিয়াম নাইট্রেট, সালফার এবং ফসফরাস, জর্দ্দার কৌটা বা সমআকৃতির অন্য কোনো পণ্যের কৌটা ককটেল তৈরি মূল বিস্ফোরক। এই তিনটি বিস্ফোরক আনুপাতিক হারে এমন দূরত্বে পুরে দেয়া হয় যাতে স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না হয়। নিক্ষেপের ফলে ঘর্ষণজনিত আঘাতে পদার্থগুলো মিশে গিয়ে তড়িৎ প্রতিক্রিয়া শুরু করবে। প্রতিটি পদার্থের মাঝখানে স্প্রিন্টার হিসেবে লোহার ছোট টুকরো, কাঁচের টুকরা অথবা পেরেক দেয়া হয়।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারকৃত ককটেল কারিগরদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, একটি ককটেল বানাতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ হয়, এর চেয়ে একটু বেশি শক্তিশালী হাতবোমা বানাতে খরচ লাগে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে ককটেল তৈরির কাঁচামালও অনেক সহজলভ্য। চট্টগ্রামে ককটেল তৈরির কাঁচামাল আসে ঢাকা থেকে। মূলত, ভারত থেকেই এই কাঁচামাল সীমান্তপথে এদেশে আসে। এছাড়া ম্যাচ ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার প্রয়োজনে অনেক আমদানিকারক বিস্ফোরক দ্রব্য আমদানি করে থাকেন। তাদের মধ্যে অনেকেই চাহিদার তুলনায় বেশি এনে তা বিক্রি করে দেয় খোলাবাজারে।

নগরীর বিভিন্ন স্থানে মজুদ করা হচ্ছে এসব উপকরণ। সেখান থেকে খুব সহজেই ককটেল তৈরির উপাদান সালফার ও পটাশিয়াম নাইট্রেট চাহিদামতো পৌঁছে যাচ্ছে। নগরীতেই শুধু নয়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় আতশবাজি তৈরির কাঁচামাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে ককটেল ও চকলেট বোমা।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার জানান, ইদানিং চট্টগ্রাম মহানগরীতে ককটেলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ এই ককটেলে উৎস খুঁজতে গোয়েন্দা তৎপড়তা বৃদ্ধি করেছে। বিশেষ করে ককটেলে বিস্ফোরকের উৎস এবং কারিগরদের ধরতে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন ককটেল তৈরির কারিগরকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে তিনটি পক্ষ নগরীতে ককটেল বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। নেপথ্যে থেকে একটি পক্ষ ককটেল তৈরির নির্দেশনা দিচ্ছে। চাহিদামত কারিগরা তৈরি করছে। একটি পক্ষ কারিগরদের কাছ থেকে ককটেলের সরবরাহ নিয়ে তা রাজপথে ব্যবহার করছে।

ককটেলের এমন অবাধ ব্যবহার বন্ধ করতে এর নেপথ্যের গডফাদারসহ সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ সর্বাত্বক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top