সকল মেনু

ত্রিমুখী সংঘর্ষে নোয়াখালী রণক্ষেত্র

Noakhali News 25.10.2013.  কামাল হোসেন মাসুদ,নোয়াখালী প্রতিনিধি: বিএনপি-জামাতের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, সহকারি পুলিশ সুপার নিস্কৃতি চাকমাসহ ২০ পুলিশ, বণিক বার্তার জেলা প্রতিনিধি অমৃত লাল ভৌমিকসহ আহত শতাধিক। শুক্রবার বিকাল থেকে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলাকালে মুহুর্মুহু ককটেল বিষ্ফোরণ ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ও বিজিবি ৫ শতাধিক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এসময় বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা শহরের প্রধান সড়কের আওয়ামী লীগ অফিসে এবং সামনে রাখা ৭টি মটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ১২-১৪টি দোকান ভস্মিভূত হয় এবং দুটি ব্যাংক ও দুইশতাদিক দোকান ভাংচুর করে।

এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত শহরে থেমে থেমে গুলিবর্ষণ ও আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলছে প্রধান সড়কে। বিকেল থেকে শহরে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আহতদের মধ্যে একজন এএসআই ও ৩জন কনস্টেবলের অবস্থা আশংকাজনক। আহতদের মধ্যে ১০জনকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দিকে আওয়ামী লীগ অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি সংযোগের কারণে বিদ্যুতের লাইন পুড়ে গেলে বর্তমানে পুরো জেলা শহরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে পুরো শহরে ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে।

সংঘর্ষের ফলে ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ সমাবেশ পন্ড হয়ে যায় এবং মিছিল অর্ধেক পথেই শেষ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগেরও কর্মসূচী পালিত হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় বিকাল ৪টার দিকে জেলা শহরের মফিজ প্লাজার সামনে জমায়েত হতে থাকে ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। সাড়ে ৪টার দিকে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হলে মিছিলের অগ্রভাগে থাকা একটি গ্র“প ককটেল ফুটাতে ফুটাতে অগ্রসর হতে থাকে। একপর্যায়ে জেলা জামে মসজিদ পার হলে বেপরোয়া হয়ে ওঠে মিছিলকারীরা। মিছিলটি আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে পৌছলেই হঠাৎ করে একটি গ্র“প আওয়ামী লীগ অফিসের ভিতরে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং সেখানে থাকা মটরসাইকেলেও আগুন দেয়। এসময় হামলাকারীদের মাথা হলুদ ফিতা বাঁধা ছিলো। একই সময়ে আশপাশে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। এসময় পুলিশ ও বিজিবি পিছু হটে। মাথায় হলুদ কাপড় বাঁধা মিছিলকারীরা শিবিরের নেতাকর্মি বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এর আগে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে সংঘাত এড়াতে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অবস্থানরত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী পূর্বের কর্মসূচীতে অংশ নিতে আসা বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে মিছিলসহকারে জজ কোর্টের সামনের সড়ক দিয়ে সরে আসে।

এদিকে আওয়াম লীগ অফিসে আগুন দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুনরায় একত্রিত হয়। এসময় পুলিশও এ্যকশনে নামে। শুরু হয় বিএনপি-জামায়াতের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ। এসময় পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশের সাথে বিজিবিও যোগ দেয়। ততক্ষণে গোটা জেলা শহর পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। প্রধান সড়কের ওপর আসবাবপত্র ও রিকশা ভ্যান ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয় ১৮ দলের নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী পৌর মেয়র হারুনুর রশিদ আজাদ জানান, তাঁদের মিছিলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ প্রথমে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং গুলি করে। পরে মিছিলকারীরাও পাল্টা ধাওয়া করে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোন প্রকার উসকানী ছাড়াই মিছিলকারীরা জেলা শহরে নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে এবং জেলা আওয়ামীলীগ অফিসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি সংযোগ করেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন- এ অভিযোগ সত্য নয়। তবে আগুনের বিষয়টি কাম্য ছিল না, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।

মুঠোফোনে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান পিপিএম (সেবা) জানান, ৫ শতাধিক রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি নিজে, সহকারি পুলিশ সুপারসহ অন্তত ২০ পুলিশ আহত হয়েছে। তন্মধ্যে এক এএসআই ও ৩ কনস্টেবলের অবস্থা আশংকাজনক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top