নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা, ১১ অক্টোবর: আজ শুক্রবার উদ্বোধন হচ্ছে রাজধানীবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার। বিকেলে গুলিস্তানে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উড়াল সেতুটির উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে গাড়িবহর নিয়ে তিনি কুতুবখালি প্রান্তে যাবেন এবং সেখানে ফলক উন্মোচন করবেন। ফ্লাইওভার উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে বিকেল সাড়ে ৪টায় এক সুধী সমাবেশেও বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। কাল শনিবার থেকে ফ্লাইওভারটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। চারলেনের ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি চালুর পর রাজধানীর যানজট কমে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ২২ জুন এ ফ্লাইওভার নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ১০৮ কোটি টাকা।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে সমন্বয় ও পলাশী অভিমুখে ফ্লাইওভার সম্প্রসারণের কারণে এর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধান প্রধান সড়ক ও বাস টার্মিনালের সঙ্গে ফ্লাইওভারটির সংযোগ রাখা হয়েছে।
এর ৬টি প্রবেশমুখ এবং ৫টি বের হওয়ার পথ রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে এ প্রকল্প সম্পন্ন করেছে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ওরিয়ন গ্রুপই সম্পূর্ণ অর্থায়ন করেছে। ফ্লাইওভারটির ডিজাইন করেছে কানাডীয় কোম্পানি লি কানাডা। এটি নির্মাণ কাজ করছেন ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল লিমিটেড। নির্মাণ কাজের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে লাসা নামে ভারতের আরেকটি কোম্পানি। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানিয়েছে, ফ্লাইওভারের গুলিস্তান, পলাশী, মতিঝিল ও কুতুবখালি পর্যন্ত পথ খুলে দেয়া হবে। সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের কাছে রাস্তার কিছু কাজ এখনও বাকি আছে। ঢাকা ওয়াসার ইউটিলিটি লাইন, অবৈধ দখলদারদের অপসারণে দীর্ঘসূত্রিতার ফলে জনপথ, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এবং পুরাতন ডেমরার সঙ্গে সংযোগকারী সড়কের নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি। ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব কাজ শেষ হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন। জানা গেছে ,ফ্লাইওভারে যানবাহন প্রবেশের সময় টোল দিতে হবে না। বের হওয়ার পথে টোলের জন্য নির্ধারিত অর্থ দিতে হবে।
যানবাহন অনুযায়ী নির্ধারিত টোলের হার, ট্রেইলার ২০০ টাকা, ট্রাক ১৫০ টাকা, বাস ১৫০ টাকা, ট্রাক ১০০ টাকা, মিনিবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ৭৫ টাকা, মাইক্রোবাস ৫০ টাকা, জিপ ৪০ টাকা, প্রাইভেট কার ৩৫ টাকা, অটোরিক্সা ১০ টাকা, দুই চাকার বাহন ৫ টাকা।
ওরিয়ন গ্রুপই ফ্লাইওভারটির ব্যবস্থাপনা, টোল আদায় এবং রক্ষণাবেক্ষণ করবে। চালুর পর থেকে ২৪ বছর টোল আদায় করবে ওরিয়ন গ্রুপ। টোল থেকেই নির্মাণ ব্যয় তুলে নেবে তারা। পরে এটি হস্তান্তর করা হবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাছে। তবে প্রতিদিন যে টোল আদায় হবে তার শতকরা ৫ ভাগ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের খাতে জমা হবে। ফ্লাইওভারটির আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১০০ বছর। এদিকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিগত সরকারের সময় ফ্লাইওভারটি সাত কিলোমিটার দীর্ঘ করার পরিকল্পনা করা হলেও জনকল্যাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক আগ্রহে তা প্রায় ১১ কিলোমিটার করা হচ্ছে। এতে করে রাজধানীর বিশাল জনগোষ্ঠী উপকৃত হবেন। এই ফ্লাইওভারটি চালু হলে গুলিস্তান থেকে কুতুবখালী ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলীয় এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৩০টি জেলায় যাতায়াতে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে। বিশেষ করে রাজধানীর কুতুবখালী-যাত্রাবাড়ী অংশে যানজট কমে যাবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।