সকল মেনু

আবারও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির করতে চায় জামায়াত!

 আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম, ঢাকা: সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহের আলটিমেটাম ও হরতালের হুমকির পেছনে থেকে জামায়াতে ইসলামী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের পর সরকার ও দল থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার পরেও ইসলামী দলগুলো আল্টিমেটাম ও হরতাল ডেকে যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি দিচ্ছে তার পেছনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে জামায়াত। দলটি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে এমনটাই জানিযেছে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো। পবিত্র হজ ও তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর আপত্তিকর বক্তব্যকে গর্হিত বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে সরকার ও দল থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কার করেছেন। কিন্তু ওই বক্তব্যকে পূঁজি করেই দেশে আবারও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির করতে চায় জামায়াত। আর সে কারণে ইসলামী দলগুলোকে ব্যবহারের অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ইসলামী দলগুলোর অধিকাংশই সরকারের এরই মধ্যে নেওয়া সিদ্ধ‍ান্তে খুশি। তারা চায়না  আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরে আসুক। আর দেশে ফিরলেও তাকে যেনো গ্রেপ্তার করা হয়। লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে সরকারের অবস্থানও অনেকটা একই রকম। ফলে এ নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামের প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন অনেক ইসলামী নেতা।

কিন্তু সূত্র জানিয়েছে, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সম্মিলিত ইসলামী দল সমূহের ব্যানারে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত আলটিমেটাম এবং ২৬ অক্টোবর হরতালের হুমকি দেওয়ার পেছনে কল-কাঠি নাড়ছে জামায়াত। তারা ইস্যুটি নিয়ে ফের সরকার বিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার পায়তারা করছে।

সূত্র নিশ্চিত করেছে, জামায়াতের মজলিসে শূরার সদস্য যাইনুল আবদিনের সংগঠন সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের নতুন সংস্করণই হচ্ছে এই সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ।

হটনিউজ২৪বিডি.কমের অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, দেশের মূল ধারার ইসলামিক দল শায়েখ আব্দুল মমিন ও মুফতি ওয়াক্কাচের নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোট, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন, হালের আলোচিত আহমেদ শফির হেফাজতে ইসলাম, প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমানের খেলাফত মজলিসসহ দেশের মূল ধারার কোনো ইসলামী দল সম্মিলিত ইসলামী দলমূহের মোর্চায় নেই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহের ব্যানারে যারা আলটিমেটাম ও হরতালের হুমকি দিয়েছে তাদের সঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোটের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের কর্মসূচির প্রতি কোনো সমর্থনও নেই ইসলামী ঐক্যজোটের।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের সদস্য সচিব জুনায়েদ আল হাবিব হটনিউজ২৪বিডি.কমকে  বলেন, সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহের ব্যানারে ডাকা হরতাল ও আলটিমেটামের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা এ কর্মসূচির সঙ্গে নেই।

এদিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে হটনিউজ২৪বিডি.কমকে  বলেন, সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ নামের নতুন সংগঠনটি মূলত জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নেমেছে। লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুতে মূল ধারার ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে কোনো প্রকার আলাপ আলোচনা ছাড়াই কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা মূলত লাইম লাইটে আসতে চায়।

সূত্রমতে, প্রয়াত হাফেজ্জ্বি হুজুরের ছেলে আহমদুল্লাহ আশরাফের নেতৃত্বাধীন খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ’র মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করলেও হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এ সংগঠনের নেপথ্যে যারা আছেন তারা সবাই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ’র অন্যতম নেতা মাওলানা যাইনুল আবদিন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য, জামায়াত পরিচালিত তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং জামায়াতের মসজিদ ভিত্তিক সংগঠন মসজিদ মিশনের সভাপতি।

সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ’র আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানী জামায়াত পরিচালিত তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল এবং জামায়াতের মসজিদ ভিত্তিক সংগঠন মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি জেনারেল।

এরাই ২০১১ সালে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদ নামে নতুন জোট গঠন করে জাতীয় নারী নীতিমালার বিরুদ্ধে মাঠে নামে। সেই সম্মিলতি উলামা মাশায়েখ পরিষদেরই নতুন নাম সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ বলে জানা গেছে।

সূত্রমতে, জামায়াতের সঙ্গে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শগত দ্বন্দ্ব থাকলেও আইমা পরিষদের সভাপতি ও আজিমপুর ফয়সাল উলুম মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মহিউদ্দীন রব্বানী, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব জাফরুল্লাহ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন কওমী নেতার গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

এরা নিজ দলের সঙ্গে কোনো প্রকার আলাপ আলোচনা ছাড়াই জামায়াত নেতা মাওলানা যাইনুল আবদিন ও ড. খলিলুর রহমান মাদানির পরামর্শে নতুন নতুন মোর্চা গঠন করে সরকার বিরোধী আন্দোলনের হুমকি দেন। জামায়াতের কাছ থেকে নানা রকম সুযোগ সুবিধা ও অর্থ লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে এসব নেতারা বিরুদ্ধে।

সূত্র আরও নিশ্চিত করেছে, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের প্রতিবাদে ৩ অক্টোবর শুক্রবার বায়তুল মোকাররমের উত্তর  গেটে সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহের ব্যানারে ডাকা সমাবেশ যে হাজার পাঁচেক লোকের সমাগম হয় তাদের অধিকাংশই ছিল জামায়াতের শ্রমিক সংগঠন ও ছাত্র শিবিরের সাবেক এবং বর্তমান নেতা-কর্মী। ওই সময় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রচার সম্পাদক অলিউল্লাহ আরমান মিডিয়াকে বলেন, ‘সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ’ মূলত ‘মেইড ইন জামায়াত’ এর সঙ্গে ইসলামী দলগুলোর কোনো সম্পকৃক্ততা নেই।

এ ব্যাপারে জানার জন্য সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহের মহাসচিব জাফরুল্লাহ খানকে বার বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

একবার তার এক খাদেম ফোন রিসিভ করে বলেন, হুজুর বিশ্রামে আছেন, আধা ঘণ্টা পরে ফোন দেন। পরে ফোন দিলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহের অন্যতম নেতা ড. খলিলুর রহমানকে একাধিবার ফোন দিলে তিনিও রিসিভ  করেননি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top