সকল মেনু

কলাপাড়ায় খাস জমি বন্দোবস্তের নামে চলছে হরিলুট

images  মেজবাহউদ্দিন মাননু, নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ০২ অক্টোবর :  কলাপাড়ায় ভূমিহীনদের মধ্যে কৃষি খাস জমি বন্দোবস্তের নামে চলছে হরিলুট। একটি চিহ্নিত দালালচক্র জমি বন্দোবস্তের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া প্রকৃত ভূমিহীনরা জমি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দালালদের ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কোন ফাইল নড়ছে না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কার নাম উপজেলা বন্দোবস্ত কমিটির কাছে আসবে তা থেকে ভূমি অফিসে কার ফাইল তৈরি হবে, এমনকি উপজেলা বন্দোবস্ত কমিটি কার ফাইল প্রস্তাবনা আকারে পাঠাবে তাও নির্ধারণ করছে ওই দাললরা। এজন্য প্রতি পর্যায় নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিয়ে একশ্রেণীর প্রভাবশালী লোকজন সরকারের খাস জমি হাতিয়ে নিচ্ছে। আর প্রতি বন্দোবস্ত কেসের জন্য অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লেনদেন হচ্ছে। গত এক বছরে চুড়ান্তভাবে কাউকে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয় নি। অথচ দালালরা ঠিকই মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা-পয়সা।

নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে বাছাইতে নাম টেকানোর জন্য এক থেকে দেড় হাজার টাকা। চেয়ারম্যানের তালিকায় নাম তুলে উপজেলা কমিটির কাছে পাঠাতে তিন থেকে পাঁচ হাজার। উপজেলা কমিটিতে অনুমোদন ব্যয় তিন হাজার টাকা। ভূমি অফিসের সার্ভে সেকশন থেকে ফাইল রেডি করে পটুয়াখালী পাঠাতে কেস প্রতি ছয় হাজার টাকা। পটুয়াখালী থেকে ফাইল ব্যাক করাতে তিন হাজার টাকা। রেজিস্ট্রি করাতে দুই হাজার টাকা। খতিয়ান খোলার জন্য সর্বশেষ পর্যায়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা আদায় করছে চিহ্নিত দালালচক্র। এই প্রক্রিয়া বর্তমানে অব্যাহত রয়েছে। কলাপাড়ায় চিহ্নিত দালাল রয়েছে অন্তত ১২ জন। এরা প্রতিদিন ভূমি অফিসে যাতায়াত করছে। আবাসিক হোটেলে ১২ মাস অবস্থান করছে। এই দালালদের জন্য প্রকৃত ভূমিহীনরা ভূমি অফিসের বারান্দায়ও যেতে পারছে না। মাঠ পর্যায়ের বাছাইয়ের তালিকা যাচাই বাছাই করলেই দালালদের দৌরাত্ম বোঝা যায়। কারণ শ্রেণী ওয়ারী যেমন- মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, বিধবা পরিবারের পরে জমি পাওয়ার কথা সাধারণ ভূমিহীন পরিবারের। কিন্তু সেখানে সাধারণ ভূমিহীনদের তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তি করে এক শ্রেণীর ভূমির মালিকরা দালালদের মাধ্যমে খাস জমি হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া অন্যের দখলে থাকা খাস জমি, ভরাট খাল কিংবা পানি চলাচলের খালকে কাগজপত্রে কৃষি জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত নেয়া হচ্ছে। অনেকে গোপনে অন্যের চাষাবাদের জমি বন্দোবস্ত নিয়ে নিজের জমি দাবি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে এই সরকারের শেষ সময়ে অন্তত দুই শ’ বন্দোবস্ত কেস সৃজন করা হয়েছে যার অধিকাংশ প্রকৃত ভূমিহীন নয়। আর এসব বন্দোবস্ত কেস অনুমোদনের জন্য নির্দিষ্ট দালালরা অন্তত ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এমনকি ইতোপুর্বে কলাপাড়ায় কর্মরত সার্ভেয়ার বেলায়েত হোসেনকে আসামি করে জনৈক দালাল আদালতে মামলা পর্যন্ত করেছে।

এব্যাপারে কলাপাড়া ভূমি অফিসের সার্ভে সেকশন থেকে বলা হয়েছে ২০১২ সালের জুন মাসে সর্বশেষ ৪৬ জনকে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কাছে ১০ থেকে ২০টি করে নাম চাওয়া হয়েছে। তাও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। দালালদের সঙ্গে তাদের কোন যোগসাজশ নেই বলেও ভূমি প্রশাসন মন্তব্য করেছে। এমনিতেই এখন চাষের উপযোগী কৃষিখাস জমি কলাপাড়াতে নেই। শুধুমাত্র বনাঞ্চল, খাল, সোতা খাল অন্যের দখলে থাকা মুখশা। এসব গোপনে চর্চা ম্যাপ তৈরি করে কাগজপত্রে খাস জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ফলে একদিকে কৃষিকাজে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। অপরদিকে এসব খাল-বিল ও বনাঞ্চল প্রভাবশালী লোকজনের হাতে চলে যাচ্ছে। এই প্রবণতা বন্ধ করা না হলে সাগরপারের উপকূলীয় জনপদে কৃষিকাজে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেবে। এছাড়া অন্যের দখলে থাকা জমি কিংবা ভরাট খাল বন্দোবস্ত দেয়া হলে মামলাসহ বিরোধ সৃষ্টি হবে। সবশেষ প্রকৃত ভূমিহীনরা ভূমিহীনই থেকে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top