সকল মেনু

‘হয় তত্ত্বাবধায়ক দেবে, নইলে বিদায় নেবে’

Khaleda+(14)জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, হটনিউজ২৪বিডিকম:  সরকার সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধি যুক্ত না করলে ‘লাগাতার কর্মসূচির’ হুমকি দিয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, দাবি না মানলে শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায় নিতে হবে। রোববার নরসিংদীর দোগরিয়ার বালুর মাঠে (প্রস্তাবিত বাসাইল পৌর শিশু পার্ক) ১৮ দলীয় জোটের জনসভায় তিনি বলেন, আজীবন ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলুপ্ত করেছেন।

“বিএনপি নাকি আন্দোলন করতে জানে না। বিএনপি আন্দোলন করতে জানে কিন্তু তাদের (আওয়ামী লীগ) মতো মানুষ মারে না।”

১৯৯৬ সালে এই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার দাবিতে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, “তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ১৭৬ দিন হরতাল দিয়েছে। এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিলে আমরা লাগাতার কর্মসূচি দেব। হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেবে, নয় হাসিনা বিদায় নেবে।”

আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ‘নতুন ধারার’ সরকার গঠন করবে জানিয়ে সবাইকে জাতীয়তাবাদী শক্তির পেছনে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান বিরোধী দলীয় নেতা।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে বালু মাঠে জড়ো হওয়া হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, “আগামীতে আমরা নতুন ধারার সরকার গঠন করব।”

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের মতো প্রতিহিংসার রাজনীতি করবে না। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে। দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য সংবিধানকে ‘নিজের মতো করে সাজিয়ে’ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পরিকল্পনা করেছেন মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, “সেই নির্বাচন কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে?”

তিনি বলেন, “পার্লামেন্ট বাতিল করতে হবে। সংসদে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস করতে হবে। নির্দলীয় কিংবা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে আমাদের জোট যাবে না। একদলীয় নির্বাচনও হতে দেয়া হবে না।”

নিদর্লীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে লাগাতার হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।
“আপনারা হয় নির্দলীয় সরকারের দাবি মানবেন, না হয় পালাবার পথ খুঁজবেন। এখন আপনারাই চিন্তা করে দেখুন।”

এই সঙ্কট থেকে উত্তোরণে সংলাপের পথ প্রধানমন্ত্রী ‘নিজেই বন্ধ করে দিয়েছেন’ বলেও মন্তব্য করেন বিরোধী দলীয় নেতা।

জনসভায় বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘মাথা খারাপ’ হয়ে গেছে।

“সুপ্রিম কোর্ট তাকে বলেছিলেন রং হেডেড। তার চিকিৎসা প্রয়োজন, সুস্থতা প্রয়োজন। … এখন এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে জনগণের কাছে।”

বর্তমান সরকারের সময়ে দেশে কোনো উন্নয়ন হয়নি দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ যতোদিন থাকবে এ বাংলাদেশের কোনো উন্নতি হবে না।

প্রায় ২১ বছর পর নরসিংদীতে খালেদা জিয়ার এই সফরের মধ্য দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আট জেলায় বিরোধী দলীয় নেতার গণসংযোগ কর্মসূচি শুরু হলো।

অবশ্য ভোটের সম্ভাব্য সময়ের চার মাস বাকি থাকতে এই কর্মসূচিকে বিরোধীদলীয় নেতার ‘প্রাক-নির্বাচনী প্রস্তুতি’ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইতিমধ্যে নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন জনসভায় দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’র পক্ষে ভোট চাইছেন।

সংবিধান অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগের ৯০ দিনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন হতে হবে।

বেলা ১টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর গুলশানের কার্যালয় থেকে নরসিংদীর পথে রওনা হন খালেদা জিয়া।

রাজধানীর নয়া পল্টন, যাত্রাবাড়ী, নারায়াণগঞ্জের কাঁচপুর সেতু, সোনারগাঁও মোড়, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, ভুলতা, নরসিংদীর মাধদীসহ বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীরা রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলীয় নেতাকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।

বিকাল পৌনে ৫টায় হাজার হাজার মানুষের ভিড় ডিঙিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর নরসিংদী বালুর মাঠে পৌঁছালে নেতাকর্মীরা করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান।
জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকনের সভাপতিত্বে ১৮ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যন আন্দালিব রহমান, খেলাফত মজলিশের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জামায়াতে ইসলামীর কর্ম পরিষদের সদস্য এম শামসুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান সমাবেশে বক্তব্য দেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মইন খান, জনসভা প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, কেন্দ্রীয় নেতা ওসমান ফারুক, শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, ফজলুল হক মিলন, সানাউল্লাহ মিয়া, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নুরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিব বক্তব্য দেন এই সমাবেশে।

এছাড়া স্থানীয় নেতাদের মধ্যে রোকেয়া আহমেদ লাকী, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল জয়নাল আবেদীন, সুলতান উদ্দিন মোল্লা, মুঞ্জর এলাহী, দীন মোহাম্মদ দীপু , জামায়াতের মাওলানা অধ্যাপক শেখ মালেক, আবদুস সাত্তার, মোবারক হোসেন বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও জেলা সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার সভা পরিচালনা করেন।

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top