সকল মেনু

বছরের শুরুতেই কঠোর হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাসের দীর্ঘদিন পর ‘কঠোর’ হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। আসছে বছরের জানুয়ারি মাসে অনেকটাই কঠোর হয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

রাস্তা যানজটমুক্ত ও যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে রাস্তার মোড়গুলোতে গাড়ি দাঁড়ানো ও যাত্রী ওঠানামা বন্ধ করা হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অচল গাড়ি রাস্তায় নামালে আর ছাড় দেওয়া হবে না। মামলা ও রেকারিং (ব্যাবহারিক অর্থে) করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা হবে। কঠোরভাবে যাচাই করা হবে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স। এ ক্ষেত্রে ছাড় না দিয়ে নতুন আইনে মামলাও করা হবে।

গত মঙ্গলবার ডিএমপি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ট্রাফিক বিভাগের রুজুকৃত মামলা, রেকারিং ও জরিমানা বিষয়ে এক আলোচনাসভায় এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়। গত বছরের নভেম্বরে সরকার এই আইন প্রয়োগ শুরু করলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে আইনটি সংশোধনের আশ্বাস দেওয়া হয়। পরিবহন মালিক ও চালকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত এক বছর গাড়ির কাগজপত্র নবায়নের জন্য সুযোগও দেওয়া হয়েছে। করোনা মহামারি ও নথিপত্র নবায়নের কারণে মৌখিক নির্দেশনায় দুই দফায় চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এ সময় ঢাকায় কাগজপত্র কঠোরভাবে যাচাই না করে, শুধু উল্টো পথে চলাসহ শৃঙ্খলা ভঙ্গের মামলা করা হচ্ছিল।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো ও বিশৃঙ্খল চলাচল প্রতিরোধে পুলিশ কঠোর হলেও কাগজপত্র নবায়নের সমস্যার ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা থাকবে। উড়াল সেতু ও মেট্রো রেলের নির্মাণকাজের কারণে ঢাকার বেশির ভাগ প্রধান সড়কের আকার ছোট হয়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে রাজধানীতে ব্যাপক যানজট হওয়ার আশঙ্কা আছে। এর প্রতিকারে পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। জানুয়ারিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন কিছু কৌশল গ্রহণ করবে ট্রাফিক পুলিশ।

সভায় ডিএমপি কমিশনার বলেন, সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করে বেড়িবাঁধ যানজটমুক্ত রাখার জন্য বালু ও অন্যান্য সামগ্রী সরিয়ে ফেলতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত ট্রাফিক মামলা বৃদ্ধি করে চালকদের নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। বিশৃঙ্খলার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে না আসতে পারলে পরবর্তী প্রজন্মকেও এর কুফল ভোগ করতে হবে।

ডিএমপি কমিশনার নির্দেশনায় আরো বলেন, অনেক গাড়ি ট্রাফিক পুলিশের দেওয়া সিগন্যাল অমান্য করে থাকে। সিগন্যাল অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও রাস্তায় অচল গাড়ি রেকারিং করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দেন তিনি।

ডিএমপি সূত্র জানায়, গত ১৯ নভেম্বর পরিবহন মালিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়সভায় ডিএমপি কমিশনার নিবন্ধনবিহীন গাড়ি চালালেই তা আটকের নির্দেশনা দেন। পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সীমাবদ্ধতা ও জটিলতার কথা উল্লেখ করে বিষয়টি সুনজরে দেখার জন্য পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন জানান।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার পর গড়ে ওঠা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মুখে সাত বছর ঝুলে থাকার পর ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পাস হয়। এতে সড়কে আইন ভঙ্গের ক্ষেত্রে জরিমানা বেড়েছে। সাজার মেয়াদও বেড়েছে। আগের আইনে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর জরিমানা ছিল ৫০০ টাকা। নতুন আইনে সর্বোচ্চ জরিমানা ২৫ হাজার টাকা। অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রেও জরিমানা বাড়ানো হয়েছে। সড়কে গাড়ি চালিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা করলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে নতুন আইনে। সড়কে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাতে বা প্রতিযোগিতা করার ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় সাজা দেওয়া হবে। জরিমানার অর্থ আদালত সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবেন। মোটরযান দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতর আহত বা প্রাণহানি হলে চালকের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজা ও সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top